দুর্যোগ: সারাদিন ধরে বিরাম নেই বৃষ্টির। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ঝড়। তার মধ্যেই চলছে নিত্যযাত্রীদের যাতায়াত। সোমবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
দুর্যোগের ক্ষীণ আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল রবিবারেই। কিন্তু উত্তর বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণাবর্তটি যে এত তাড়াতাড়ি নিম্নচাপে পরিণত হবে, তা বুঝতে পারেনি হাওয়া অফিসও। রবিবার রাতে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অনুকূল বায়ুপ্রবাহের সাহায্যে ঘূর্ণাবর্তটি শুধু নিম্নচাপেই পরিণত হয়নি, শক্তি বাড়িয়ে সোমবার দুপুরেই তা গভীর নিম্নচাপের চেহারা নিয়েছে।
আরও পড়ুন: শহরের আকাশে দুর্যোগ, মুখ ঘোরাল ২৬টি উড়ান
উপগ্রহ চিত্রে দেখা গিয়েছে, ওই গভীর নিম্নচাপটি ইতিমধ্যেই স্থলভূমিতে ঢুকে পড়েছে। তার পরে সেটির শক্তিবৃদ্ধি না হলেও গতি একেবারে স্লথ হয়ে গিয়েছে। এ দিন সন্ধেয় গভীর নিম্নচাপটি কলকাতার উপরে ছিল। সেটি ধীরে ধীরে পশ্চিম দিকে সরে যাওয়ার কথা। হাওয়া অফিস জানাচ্ছে, তবে যত ক্ষণ সেটি দুর্বল হয়ে পশ্চিম দিকে সরে না যাচ্ছে, তত ক্ষণ দুর্যোগ কাটবে না। বায়ুপ্রবাহের এই পরিস্থিতি গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বর্ষাকে আরও দীর্ঘায়িত করবে বলেই মনে করছেন আবহবিদেরা।
কেন্দ্রীয় আবহবিজ্ঞান মন্ত্রকের পূর্বাঞ্চলীয় ডেপুটি ডিরেক্টর জনারেল সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, আজ, মঙ্গলবারও উপকূলবর্তী দক্ষিণবঙ্গে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা থাকছে। সঙ্গে বইবে ঝোড়ো হাওয়া। উপকূলবর্তী এলাকায় ঝড়ের মাত্রা ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার ছাড়িয়ে যেতে পারে। উত্তর ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের সমুদ্রে ঘণ্টায় ৬০-৬৫ কিলোমিটার বেগে হাওয়া বইবে বলে জানিয়েছে হাওয়া অফিস। মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে।
পুজোর ছুটির পরে সোমবারই সরকারি অফিস খুলেছে। খুলেছে বেশ কিছু স্কুল-কলেজও। এমন দিনেই ভোর থেকেই প্রবল বৃষ্টি আর ঝোড়ো হাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়েছে জনজীবন। হাওয়া অফিস জানাচ্ছে, আগামিকাল বুধবারও ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে। গভীর নিম্নচাপটি পশ্চিম দিকে যত সরবে তত বৃষ্টি বাড়বে রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের জেলা এবং ঝাড়খণ্ডে। নিম্নচাপটি শেষ পর্যন্ত কবে কোথায় সরবে এবং তার শক্তি কতটা থাকবে, এ সবের উপরেই নির্ভর করবে রাজ্যে আগামী দিনের আবহাওয়া।
বিপর্যস্ত মহানগর
• বৃষ্টিপাত: ১২৩ মিলিমিটার
• ঝড়ের গতি: ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার
• গাছ পড়েছে: ৭১টি
• বাড়ি ভেঙেছে: ২টি, আহত ৩ জন
• জল জমেছে: ৭০টি রাস্তায়
• গঙ্গায় বন্ধ ফেরি: ২টো থেকে
• উড়ানের পথ পরিবর্তন: ২৬টি
সবিস্তার কলকাতা
এক আবহবিদ জানাচ্ছেন, বর্ষা বিদায় নেওয়ার মুখে ভারত মহাসাগর, বঙ্গোপসাগর এবং আরব সাগরের বায়ুপ্রবাহ থাকে অস্থির। তাই এই সময়ে ঘন-ঘন ঘূর্ণাবর্ত, নিম্নচাপ, ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়। তিনটি ঘূর্ণাবর্ত এবং একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখার কারণে রবিবারও দেশের সামগ্রিক আবহাওয়া ছিল অস্থির। দু’টি ঘূর্ণাবর্ত ছিল বঙ্গোপসাগরে। একটি দক্ষিণ ওড়িশা উপকূলে। অন্যটি উত্তর বঙ্গোপসাগরে। আরব সাগরে কর্নাটক উপকূলের কাছে ছিল আরও একটি ঘূর্ণাবর্ত। বঙ্গোপসাগর এবং আরব সাগরের তিনটি ঘূর্ণাবর্তের টানাপড়েনে কর্নাটক এবং ওড়িশার মধ্যে তৈরি হয়েছিল একটি অক্ষরেখা। বঙ্গোপসাগরের বায়ুপ্রবাহ আরও অস্থির হয়ে পড়ে ঘূর্ণাবর্তগুলি ও অক্ষরেখার টানাপড়েনে।
উপকূল থেকে বেশি দূরে থাকায় শেষ পর্যন্ত উত্তর বঙ্গোসাগরের ঘূর্ণাবর্তটিই শক্তি বাড়িয়ে রবিবার রাত থেকে সোমবার সকালের মধ্যে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছেন আবহবিদেরা। এর ফলে বাকি দু’টি ঘূর্ণাবর্ত দুর্বল হয়ে গিয়েছে। তবেই এটিই শেষ নয়, চলতি মাসে এবং নভেম্বরে বঙ্গোপসাগরে আরও ঘূর্ণাবর্ত, নিম্নচাপ এমনকী ঘূর্ণিঝড় তৈরির আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন আবহবিদেরা।