ফাইল চিত্র।
কোদাল কোপানোর ধরন দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, মাটি কাটার অভ্যাস নেই। আচমকা ফোন বেজে উঠল। ঘর্মাক্ত অবস্থায় পকেট থেকে যে চোখধাঁধানো মোবাইলটা বার করলেন, তা-ও একশো দিনের কাজ করছেন, এমন কারও হাতে সচরাচর দেখা যায় না। বৈষ্ণবনগর থানার মহব্বতপুর গ্রামের ওই যুবক একশো দিনের প্রকল্পে মাটি কাটা থামিয়ে ফোনে সে কথা কবুলও করলেন। আক্ষেপ করছিলেন, ‘ক’দিন আগে হাজার হাজার টাকা কামিয়েছি। ফটাফট। এখন আর সে দিন নেই। সাধে কি কোদাল নিয়ে মাটি কোপাতে নেমেছি? বাড়ির লোক তো বুঝবে না!’
একটু দূরে দাঁড়িয়ে কাজের তদারকি করছিলেন এক পঞ্চায়েত সদস্য। কথা কানে যেতে মুচকি হাসলেন, ‘‘আগে একশো দিনের কাজে লোক আনতে জেরবার হয়ে যেতাম। ওদের গিয়ে বাবা-বাছা করতে হতো। আর এখন দেখুন, ওরাই উল্টে আমাদের তোয়াজ করছে। কাজ চাই তো!’’
কেন? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই পঞ্চায়েত সদস্য হাসছেন। বলছেন, ‘‘জোড়া ফলা ঘাড়ে পড়েছে যে!’’ কীরকম? ‘‘এক মাস ধরে তো আর জাল টাকার কারবার চলছে না। তার উপরে, বেআইনি পোস্ত চাষও বন্ধ করতে বদ্ধপরিকর প্রশাসন।’’ দামি মোবাইল হাতে ওই যুবককে দেখিয়ে তিনি বলছেন, ‘‘কোনও দিন কোদাল হাতে নিয়েছে নাকি। কিন্তু এখন শুধু ও কেন, ১৭০ টাকা রোজের জন্য হুড়োহুড়ি।’’
কালিয়াচকের কিছু গ্রামে সীমান্ত দিয়ে নিয়মিত জাল নোট ঢোকে বলে অভিযোগ। সেই টাকার কারবারে এখানকার কিছু বাসিন্দা জড়িত বলেও অভিযোগ। তেমনই, এই সময়ে এখানকার বিস্তীর্ণ এলাকায় বেআইনি পোস্তো চাষ হয় বলেও অভিযোগ। ৮ নভেম্বর রাতে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরে জাল নোটের কারবার প্রবল ধাক্কা খেয়েছে। এলাকার পঞ্চায়েতের লোকজনই সে কথা মেনে নিচ্ছেন। গত সোমবারই এই এলাকার বাসিন্দা নূর মহম্মদ একটি ব্যাঙ্কে জাল ৪৯ হাজার টাকা জমা দিতে গিয়ে ধরা পড়েন। বুধবার চার কেজি আফিম সহ ধরা পড়েছে এখানকারই এক ব্যক্তি।
প্রশাসনের কড়াকড়িতে পোস্তো চাষেও মন্দা। জেলাশাসক শরদকুমার দ্বিবেদী জানান, চলতি বছরে মালদহকে পোস্ত চাষ নির্মূল জেলা হিসেবে ঘোষণার উদ্যোগ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘কালিয়াচক ও বৈষ্ণবনগরের বাসিন্দাদের একাংশ বেআইনি কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছিলেন। এখন অনেকে মূলস্রোতে ফিরছেন। সরকারি প্রকল্পে কাজ করতে চেয়ে আবেদন করছেন অনেকে।’’ একশো দিনের কাজ চেয়ে হুড়োহুড়ি থেকেই সেটা প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে, দাবি পঞ্চায়েতগুলির। কী ভাবে?
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার ১৫টি ব্লকের মধ্যে কালিয়াচক ১ ও ৩ নম্বর ব্লকে একশো দিনের কাজ নিয়ে তেমন আগ্রহ ছিল না মানুষের। গত আর্থিক বছরে ওই দু’টি ব্লকে কাজ করেছেন গড়ে পাঁচশো শ্রমিক। অথচ জব কার্ডের সংখ্যা কোথাও পাঁচ হাজার, কোথাও চার হাজার। আর এই নভেম্বরে এই কাজের জন্য কোথাও কাজ করছেন গড়ে পাঁচশো শ্রমিক, কোথাও কাজের জন্য লাইন দিয়েছেন ন’শো জন। কালিয়াচক ১ নম্বর ব্লকে ২৬টি প্রকল্প চলছে। কালিয়াচক ৩ নম্বর ব্লকে ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েতে চলছে ৯৬টি প্রকল্প। এবং সব জায়গাতেই ‘ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই’। কালিয়াচক ১ ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কংগ্রেসের ফারহানা খাতুন বলেন, ‘‘কয়েক জন মানুষের জন্য এই এলাকার বদনাম। তবে এখন মানুষ সচেতন হয়েছেন। এ বার এখন পর্যন্ত পোস্ত চাষের কোনও খবর মেলেনি। নোট বাতিলের ফলে জাল নোটের কারবারও বন্ধ। ফলে সরকারি প্রকল্পের প্রতি ঝোঁক বাড়ছে মানুষের।’’