সাধ আছে। কিন্তু সাধ্য নেই!
রাজ্যে সিপিএমের দশা এখন অনেকটা এ রকমই! বিধানসভা ভোটে বিপর্যয়ের পর দলের কর্মী-সমর্থকদের হতাশা কাটছে না। তার উপরে নোট বাতিলে জনতার হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে হরতাল ডেকে মুখ পুড়িয়ে ফেলায় মনোবলে আরও ধাক্কা দিয়েছে। এ বারের শীত ও প্রাথমিক বসন্তের মরসুমে আলিমুদ্দিন তাই বড় কর্মসূচি থেকে দূরেই থাকছে।
গত শীতে কলকাতায় বসেছিল দলের সর্বভারতীয় সাংগঠনিক প্লেনাম। সেই উপলক্ষে ব্রিগেড সমাবেশ ছিল ডিসেম্বরে। যেখান থেকে বিধানসভা ভোটের আগমনী সঙ্গীত বাজানো হয়েছিল। এ বার রাজ্য সাংগঠনিক প্লেনাম হয়েছে অক্টোবরে। কোনও সমাবেশ ছাড়াই।
সামনের বছর পঞ্চায়েত বা পুরসভার মতো বড় ভোটও না থাকার কারণকে সামনে রেখে বড় সমাবেশের পথে আপাতত যাওয়া হচ্ছে না। এমনকী, কিছু দিন আগে ঘোষণা হয়ে যাওয়া ‘নবান্ন অভিযান’ শেষ পর্যন্ত জানুয়ারিতে হচ্ছে না বলেই সিপিএম সূত্রের খবর।
নরেন্দ্র মোদী ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল পরস্পরের বিরুদ্ধে তরবারির আস্ফালন দেখিয়ে রাজ্য রাজনীতিকে আড়াআড়ি ভাগ করে নিচ্ছে। মেরুকরণের রাজনীতির প্রবল ধাক্কা একের পর এক উপনির্বাচনে স্পষ্ট। সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসক দলের এই খেলা ধরতে পারছেন সহজে ই। কিন্তু এই ভাগাভাগি আটকাতে বামেদের যে সক্রিয় ভূমিকায় ময়দানে নামা দরকার, সেটা আর হচ্ছে না! সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য মেনে নিচ্ছেন, ‘‘কোনও একটা বিষয়ে আন্দোলন করে আমরা সরকারকে চেপে ধরতে পারব, এই ভরসা মানুষ এখন আমাদের উপরে করছে না। দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটা সত্যি। তাই এই সময়ে তেমন বড় কোনও কর্মসূচি নিয়ে বিশেষ লাভ নেই।’’ আলিমুদ্দিন তাই জোর দিচ্ছে জেলায় জেলায় স্থানীয় ছোট ছোট কর্মসূচি নিয়ে সংগঠনের গায়ে ধরে-যাওয়া মরচে ছাড়ানোর উপরে।
দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় ফেরার পরে তেমন কোনও অপ্রস্তুত অবস্থায় মমতার সরকার পড়েনি ঠিকই। কিন্তু নানা প্রান্তে নারী নির্যাতন এবং গোষ্ঠী-সংঘর্ষ রাজ্য প্রশাসনকে অস্বস্তিতে রাখছে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র একাধিক বার মহিলাদের উপরে অত্যাচার ও সাম্প্রদায়িক শক্তির রমরমা রুখতে সক্রিয় প্রতিবাদে ডাক দিয়েছেন। কিন্তু রাস্তায় সে ভাবে লাল ঝান্ডার দেখা নেই! ২৬-২৭ ডিসেম্বর দু’দিনের রাজ্য কমিটির বৈঠকে জেলাওয়াড়ি পরিস্থিতির খতিয়ান নিয়ে ফের আন্দোলনের কথা বলবেন সূর্যবাবুরা। তবে তৃণমূল স্তরকে চাঙ্গা করে কিছু করা যে কঠিন, রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর আলোচনায় উঠে এসেছে সেই চিত্র।
সিপিএমের এক বিধায়কের আক্ষেপ, ‘‘সারদার মতো ঘটনায় আমরা আমানতকারী এবং এজেন্টদের নিয়ে পথে নেমেছিলাম। কিন্তু লেগে থাকতে পারিনি। পরিস্থিতির ফেরে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বা শতাব্দী রায়ের মতো তৃণমূল নেতা-নেত্রীকে সিবিআই ফের ডেকে পাঠালেও তৃণমূল-বিরোধী ভাবাবেগের ফায়দা বিজেপি নিয়ে নেবে!’’ দলের এক রাজ্য নেতা মানছেন, সাড়ে পাঁচ বছর পরেও বিরোধী আসনে তাঁরা এখনও স্বচ্ছন্দ হননি! বুঝছেন তাঁরা সবই। কিন্তু মহিলা সমিতি বা কৃষক সভার মতো গণসংগঠনের সম্মেলন-পর্ব আর নাম-কা-ওয়াস্তে কিছু মিছিলেই আপাতত নিস্তরঙ্গ হয়ে থাকছে প্রতিবাদের লোহিত সরণি!