কেন্দ্রের পক্ষে কোনও ভাবেই পশ্চিমবঙ্গের ঋণের বোঝা মকুব করা সম্ভব নয়। আজ সংসদে দাঁড়িয়ে সোজাসাপ্টা ভাষায় জানিয়ে দিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। তাঁর কথায়, ‘‘যতটা শোধ দেওয়া সম্ভব ততটাই ধার করা উচিত। আগের ঋণ কাউকে তো মেটাতে হবে। কেন্দ্রের পক্ষে কোনও ভাবেই ঋণ মকুব করা সম্ভব নয়।’’
২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ঋণের বোঝা লাঘব করার জন্য কেন্দ্রের কাছে দরবার করে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বার বার অভিযোগ করেছেন, রাজ্যের ঘাড়ে চেপে থাকা বিপুল পরিমাণ ঋণের জন্য উন্নয়নমূলক কাজ ব্যাহত হচ্ছে। সুদ ও আসল পরিশোধ বাবদ প্রতি বছর কয়েক হাজার কোটি টাকা কেটে নিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্র। এই টাকা পরিশোধ অন্তত তিন বছরের জন্য স্থগিত রাখার জন্য দাবি জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আগের ইউপিএ সরকার বা বর্তমান এনডিএ সরকার, কেউই সেই দাবি মানেনি। কিন্তু রাজ্যের উপর থেকে চাপ কমানোর ব্যাপারে কেন্দ্রের কিছু করার নেই, সে কথাও কেউ সরাসরি বলেনি। ইউপিএ আমলে তো পশ্চিমবঙ্গ, পঞ্জাব ও কেরল— সবচেয়ে ঋণগ্রস্ত এই তিন রাজ্যকে কী ভাবে সাহায্য করা যায় তার উপায় বার করতে বিশেষ কমিটি পর্যন্ত গঠিত হয়েছিল। যদিও কাজ বিশেষ এগোয়নি। গত লোকসভা ভোটের আগে পশ্চিমবঙ্গে প্রচারে গিয়ে ঋণের বোঝা প্রসঙ্গে রাজ্যের পাশে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন রাজনাথ সিংহ। কিন্তু বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরেও রাজ্যের কোনও সুরাহাই হয়নি। বাম জমানা শেষের সময় যে ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লক্ষ ৯২ হাজার কোটি টাকা তা এখন বাড়তে বাড়তে ৩ লক্ষ কোটি টাকা ছুঁতে চলেছে।
তবে হাল ছাড়েননি মমতা। গত সপ্তাহেও দিল্লি গিয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বিমাতৃসুলভ আচরণের অভিযোগ জানিয়ে আসেন তিনি। পাশাপাশি দলীয় সাংসদদের নির্দেশ দিয়েছিলেন সংসদে বিষয়টি নিয়ে সরব হতে। সেই মতো এ দিন লোকসভায় অতিরিক্ত বাজেট বরাদ্দ নিয়ে আলোচনায় প্রসঙ্গটি তোলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রের দায়বদ্ধতার প্রশ্ন তুলে অভিষেক বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের উপরে প্রায়৩ লক্ষ কোটি, মহারাষ্ট্র-অন্ধ্রপ্রদেশের মতো রাজ্যের মাথায় ২ লক্ষকোটি টাকার বেশি ঋণ রয়েছে। রাজ্যগুলির সেই ঋণ মেটাতে কেন্দ্র আজ পর্যন্ত কিছু করেনি।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘এটাই কি সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার নমুনা?’’
অভিষেকের অভিযোগ, সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার নামে আসলে সব ক্ষমতা নিজের হাতে নিয়ে নিতে চাইছে মোদী সরকার। এই সরকারের আমলে ৩৯টি কেন্দ্রীয় প্রকল্প বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, অর্থ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে ৫৮টি প্রকল্পে। প্রকল্প চালানোর দায় রাজ্যের ঘাড়ে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। সহযোগিতার স্লোগান দিয়ে বাস্তবে রাজ্যগুলিকে দাবিয়ে রাখতে চাইছে কেন্দ্র।
পরে জবাবি বক্তৃতায় জেটলি বলেন, ‘‘আয়ের চেয়ে খরচ বেশি হলে পরবর্তী প্রজন্মকে তার দায় নিতে হয়। দুঃখজনক হলেও পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে এটাই হয়েছে। আমি বর্তমান রাজ্য সরকারকে লক্ষ করে এ কথা বলছি না, আগে যে সরকার ছিল তারা করেছে, আর নতুন প্রজন্মকে সেই ঋণ শোধ করতে হচ্ছে।’’
জেটলির বক্তৃতার মাঝেই প্রতিবাদ করেন তৃণমূল সাংসদ সুগত বসু। তিনি বলেন, ‘‘ঋণের বোঝা থাকলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতার কারণে শিক্ষা, স্বাস্থ্যের মতো সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যয় করে চলেছে।’’ এই পরিস্থিতিতে আর্থিক শৃঙ্খলা ও বাজেট নিয়ন্ত্রণ (এফআরবিএম) আইন শিথিল করা সম্ভব কি না, সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি। জবাবে জেটলি জানান,একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।