নিহতের দিদিকেও ধর্ষণের হুমকি

গণধর্ষণে মৃত প্রতিবন্ধী বালিকার পরিবারকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল হাওড়ার শ্যামপুরে। নিহত বালিকার চোদ্দো বছরের দিদিকেও ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শ্যামপুর শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:৫৫
Share:

গণধর্ষণে মৃত প্রতিবন্ধী বালিকার পরিবারকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল হাওড়ার শ্যামপুরে। নিহত বালিকার চোদ্দো বছরের দিদিকেও ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।

Advertisement

গত ৮ নভেম্বর পেটের ব্যথায় অচেতন আট বছরের মূক-বধির মেয়েটিকে উলুবেড়িয়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। তাঁরাই বালিকার যৌনাঙ্গে ক্ষতের কথা জানান। প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকদের ধারণা, ধর্ষণের ফলেই মৃত্যু হয়েছে মেয়েটির।

পরে মৃতার বাবা থানায় অভিযোগ করেন, ৫ নভেম্বর মেয়েকে ধর্ষণ করে প্রতিবেশী যুবক শেখ সুলতান আলি। তারপর থেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছিল মেয়ে। পুলিশ গ্রেফতার করে সুলতানকে। পুলিশের দাবি, জেরায় ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে সুলতান। জানিয়েছে ধর্ষণে সঙ্গী আর এক নাবালকের নাম। ওই নাবালককেও গ্রেফতার করা হয়।

Advertisement

অভিযোগ, এরপর থেকেই ধৃতদের পক্ষ নিয়ে গ্রামবাসীদের একাংশ মামলা তুলে নেওয়ার জন‌্য ওই পরিবারকে হুমকি দিতে শুরু করে। বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হবে বলেও ভয় দেখানো হয়। নিহত বালিকার দিদি নবম শ্রেণির ছাত্রী। অভিযোগ, তাকেও ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। সে বলে, ‘‘রাস্তায় বেরোলেই আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলছে, পাগলিটাকে ধর্ষণ করা হয়েছে, এ বার এটাকে করা হবে। ভয়ে মা আমাকে বাড়ি থেকে বেরতে দিচ্ছে না।’’ তার বাবা অটো চালান, তিনিও ঘরবন্দি। দুই কাকা জরির কাজ করেন। তাঁদের অভিযোগ, মহাজনের কাছে কাজ আনতে যেতে দেওয়া হচ্ছে না।

পুলিশ জানিয়েছে, ময়নাতদন্তের পর বালিকার দেহ গ্রামে এলেও অশান্তি হয়। বালিকার শেষকৃত্যে বাধা দেওয়ার অভিযোগও এসেছিল থানায়। পরিবারের দাবি, গ্রামের মহিলাদের যেতে দেওয়া হয়নি মৃতদেহ গোসল করানোর কাজে। কবর দিতেও বাধা দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত পুলিশি নিরাপত্তায় মেয়েটিকে করব দেন তার বাবা আর কাকা। পারলৌকিক কাজে এসেছিলেন শুধু একজন মৌলবি।

গত শনিবার ওই পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছিলেন রাজ্য প্রতিবন্ধী সম্মিলনীর সম্পাদক কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। সে দিন তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয়দের অনেকে। কান্তিবাবু শুক্রবার বলেন, ‘‘আমার সামনেই পরিবারটিকে এলাকা ছাড়া করার হুমকি দেওয়া হয়। তবে পুলিশ ওদের পাশে আছে বলেই মনে হয়েছে।’’ এ দিন এলাকায় যান প্রদেশ কংগ্রেস নেতা অমিতাভ চক্রবর্তী। মৃতার বাড়ি থেকে বেরোতেই তাঁকেও ঘিরে ধরেন কিছু মানুষ। তাঁরা বলতে থাকেন, বালিকার পরিবারকে অভিযোগ তুলে নিতে হবে। সব অভিযোগ মিথ্যা। কোনও রকমে বেরিয়ে এসে অমিতাভবাবু বলেন, ‘‘ভয়ঙ্কর অবস্থা। তবে ওই পরিবারকে সব রকম সাহায্য করা হবে। প্রয়োজনে আইনি সহায়তাও দেওয়া হবে।’’

মৃতার মা ও ঠাকুমা অবশ্য হুমকিতে দমেননি। তাঁরা বলেন, ‘‘যতই হুমকি বা চাপ দেওয়া হোক, এর শেষ দেখে ছাড়ব।’’এ ব্যাপারে হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশ সুপার গৌরব শর্মা বলেন, ‘‘ওই পরিবারের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তদন্তও সঠিক পথেই চলছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement