বাড়ির লাগোয়া চায়ের দোকান। সন্ধ্যায় সেখানেই আর পাঁচ জনের সঙ্গে আড্ডার ফাঁকে চায়ের ভাঁড়ে চুমুক দিচ্ছিলেন তপন মন্ডল। শবদেহ কাঁধে সেখান দিয়েই যাচ্ছিলেন জনা দশেকের দলটি।
চায়ের ভাঁড় থেকে মুখ তুলেই অবাক হয়ে গিয়েছিলেন তপন, লিপিকা না! তাঁর সামনে দিয়ে মেয়ের মরদেহ চলল শ্মশানে, অথচ এক বার খবরও দিল না কেউ!
লাফ দিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন তিনি, চিৎকার করতে থাকেন, ‘‘এটা কি হল, কি করে হল!’’
আশপাশের দোকান থেকে একে একে এগিয়ে আসেন অন্যরা। পড়শিরাও দরজা খুলে একে একে বেরিয়ে আসেন। তার পর শবযাত্রীদের আটকে শুরু হয় জেরা। বিপত্তি বুঝে ততক্ষণে শববাহীরা মরদেহের বাঁশের খাঁচাটা নামিয়ে সরে পড়েছেন।
বুধবার সন্ধ্যার ওই ঘটনায় পুলিশ মৃতদেহটি আটক করে ময়নাতদন্ত পাঠিয়েছে। তপনবাবুর অভিযোগ পেয়ে মেয়ের শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করেছে পুলিশ।
তপন মন্ডলের বাড়ি বেনিয়াগ্রাম। কাঁসা বাসনের বড়সড় ব্যবসা রয়েছে তাঁর। তিন মেয়ের বড় লিপিকা। মাস দশেক আগে, বাড়ির অমতেই বিয়ে হয়েছিল ফরাক্কার নিশিন্দ্রায়। পাত্র বিফল মন্ডল সামান্য রোজগেরে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
তপনবাবুর আপত্তি ছিল বলে পড়শি গ্রামে, মামার বাড়ি থেকেই বিয়ে হয়েছিল তাঁর। সেই থেকে লিপিকা শ্বশুরবাড়িতেই ছিল। বাপের বাড়িমুখো আর হয়নি। তপনবাবু বলেন, ‘‘বিয়ের পর, ২ মার্চ মেয়ে প্রথমবার আমার বেনিয়াগ্রামের বাড়িতে আসে। মেনেই তো নিয়েছিলাম। তখনও মনে হয়েছিল মেয়েটা ভাল নেই। জিজ্ঞেস করলে কোনও কথাই বলল না। আর আজ আমার সামনে দিয়েই চলল মেয়ের দেহ!’’
বুধবার তিনি খবর পান, মেয়ে শ্বশুরবাড়িতে অ্যাসিড খেয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে মালদহের হাসপাতালে। ভেবে ছিলেন বৃহস্পতিবারই যাবেন মেয়েকে দেখতে। তার আগেই এই ঘটনা। তপনবাবু বলেন, ‘‘ওকে নাকি কলকাতার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা গিয়েছে। তা বলে একটা খবর দেবে না!’’
ফরাক্কা থানার আই সি উদয় শঙ্কর ঘোষ জানান, বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে মেয়ে লিপিকা মন্ডলের মৃত্যুর ঘটনায় খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে স্বামী-সহ শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে। তবে এখনও কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি।