বিপর্যস্ত ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। —নিজস্ব চিত্র।
টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত পাহাড়। বার বার ধসের কারণে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলা থেকে সিকিম যাওয়ার অন্যতম ‘লাইফলাইন’ ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, অনির্দিষ্ট কালের জন্য যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। যার ফলে ওই সড়ক ধরে সিকিম ও কালিম্পং যেতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে পর্যটকদের। এ বার দার্জিলিঙেও ঘোরাঘুরি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। শনিবার জিটিএ নির্দেশিকা প্রকাশ করে জানিয়েছে, ভারী বৃষ্টি ও ধসের কারণে দার্জিলিঙের রক গার্ডেন-সহ গঙ্গামায়া পার্ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
গত অক্টোবরের হড়পা বানে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। সম্প্রতি সিকিমে ভারী বৃষ্টির জেরেও তিস্তা ফুলেফেঁপে উঠে জাতীয় সড়কের ক্ষতি করেছে। জুন মাসের বেশির ভাগ দিনই ধসের জেরে সড়ক বন্ধ ছিল। এখনও অধিকাংশ রাস্তাই বন্ধ। ১৯ মাইলের শেতিঝোরা থেকে চিত্রে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ ধসের কারণে। মেরামতির কাজ চলায় বন্ধ রাখা হয়েছে রবিঝোরা থেকে তিস্তাবাজার। তবে শিলিগুড়ি থেকে পানবু হয়ে কালিম্পং যাওয়ার রাস্তা খোলা রয়েছে। খোলা রয়েছে রংপো থেকে লাভা হয়ে মানসং যাওয়ার রাস্তা।
জাতীয় সড়ক বন্ধ থাকায় কার্যত লাটে উঠেছে পাহাড়ের পর্যটন ব্যবসা। ব্যবসায়ীদের দাবি, গত মাসেই ৪৫-৫০ কোটি টাকার লোকসান হয়েছে। পর্যটন দফতর ও জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, পর্যটকেরা শুধুমাত্র সিকিম ঘুরতে যান না। দার্জিলিং, ডুয়ার্সেও বেড়ানোর পরিকল্পনা থাকে তাঁদের। ৮০-৮৫ শতাংশ বুকিং থাকে জুনে। সেখানে এ বার বুকিং নেমে এসেছে ১৫-২০ শতাংশে। জুলাই মাসে বর্ষার কারণে এমনিতেই বুকিং কমে ৬০ শতাংশে নেমে আসে। এ বার তা ৭-১০ শতাংশে নেমে এসেছে। জিটিএর পর্যটন সচিব নর্দেন শেরপা শনিবার বলেন, ‘‘১০ নম্বর জাতীয় সড়ক উত্তরের লাইফলাইন। আর পর্যটকেরা শুধু সিকিম ঘুরতে যান না। সঙ্গে দার্জিলিং ও কালিম্পঙেও যান। যে কারণে সিকিমে যাতায়াত বন্ধ হওয়ায় দার্জিলিং ও কালিম্পঙেও বুকিং বাতিল হয়েছে।’’
হিমালয়ান হসপিটালিটি ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলেন, ‘‘১০ নম্বর জাতীয় সড়কের জন্য উত্তরের বিশেষ করে পাহাড়ের পর্যটন ব্যাপক ধাক্কা খেয়েছে। আর এই ক্ষতির প্রভাব পুজো পর্যন্ত থাকবে। আমাদের যা হিসাব, তাতে প্রায় ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।’’
ইস্টার্ন হিমালয়ান ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী কমিটির সদস্য দেবাশিস মৈত্র বলেন, ‘‘জাতীয় সড়কের যা পরিস্থিতি, তাতে কোনও গাড়িচালক এখন আর যেতে চাইছে না। পর্যটকেরাও একে একে বুকিং বাতিল করছেন।’’