প্রতীকী ছবি।
বাড়তি ফসল পেতে ঝোপঝাড় কেটে চাষের জমির পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে। এতে ফল হচ্ছে উল্টো। ঝোপঝাড় কাটার জন্য বিঘ্ন ঘটছে পরাগ মিলনে। ফসল উৎপন্ন হচ্ছে তুলনায় কম। তাই চাষের জমির পাশে ঝোপঝাড় রাখা খুবই প্রয়োজন বলে জানাচ্ছেন গবেষকেরা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক পার্থিব বসু এবং অন্য গবেষকদের গবেষণা এ কথাই বলছে। ‘এলসেভিয়ার’-এর এগ্রিকালচার, ইকোসিস্টেমস অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট জার্নালে এ বিষয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে।
পার্থিববাবু জানান, সারা বিশ্বেই পরাগবাহক পতঙ্গের পরিমাণ কমে আসছে। এক ফুল থেকে অন্য ফুলে পরাগ বয়ে নিয়ে যায় পতঙ্গ। তার পরে পরাগ মিলনের সুবাদে ফসল ফলে। কিন্তু বাড়তি ফসলের জন্য চাষের জমির পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে। আর তার জন্য কেটে ফেলা হচ্ছে ঝোপঝাড়। এর ফলে ওই পতঙ্গদের থাকার জায়গা কমে আসছে। তার প্রভাব পড়ছে ফসল উৎপাদনে।
ঠিক পরিমাণে ফসল পেতে কতটা ঝোপঝাড় থাকা দরকার, এই বিষয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চালান পার্থিববাবুরা। পরীক্ষা চালানো হয় বেগুন ও সর্ষেখেতে। দেখা গিয়েছে, একটি গাছে যথেষ্ট পরিমাণে বেগুন পেতে প্রায় ৩০ হাজার পরাগরেণু দরকার। সর্ষের ক্ষেত্রে কত পরাগরেণু লাগে, পার্থিববাবুরা পরীক্ষা করে দেখেছেন। এর পরে তাঁরা গবেষণা চালান নির্দিষ্ট আয়তনের বেগুন ও সর্ষেখেতের উপরে। সেই গবেষণায় উঠে এসেছে, দু’কিলোমিটার ব্যাসার্ধের একটি বেগুনখেতে পরিমাণমতো ফসল পেতে আশেপাশে ২৮% ঝোপঝাড় প্রয়োজন। একই মাপের সর্ষেখেতের জন্য দরকার ২০% ঝোপঝাড়।
পার্থিববাবু বলেন, ‘‘ঝোপঝাড় না-থাকায় পরাগ মিলনে বিঘ্ন ঘটছে কি না, সেটাই ছিল আমাদের গবেষণার বিষয়। ঘটলে তা কতটা? পরাগ মিলন অব্যাহত রাখতে হলে কত পরিমাণ ঝোপঝাড় প্রয়োজন?’’ তিনি জানান, এই গবেষণা দেখাচ্ছে, ফসলের যথাযথ উৎপাদন আর খাদ্য সুরক্ষার জন্য প্রয়োজন চাষের মাঠভিত্তিক জমির ব্যবহারের পরিকল্পনা। কতটা শস্যের জন্য কতটা ঝোপঝাড় থাকা জরুরি, সেটা নির্ধারণ করে চাই ঝোপঝাড়ের সুষ্ঠু বণ্টন। ‘‘শুধু সর্ষে বা বেগুনই তো নয়। ৮০% ফসলই হয় পরাগ মিলনের মাধ্যমে। এই বিষয়ে পশ্চিমে কিছু গবেষণা শুরু হলেও গ্রীষ্মপ্রধান দেশে তেমন গবেষণা আগে হয়নি,’’ বললেন পার্থিববাবু।
ব্রিটেনের দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এই গবেষণা চালিয়েছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পলিনেশন স্টাডিজ়। গবেষণায় পার্থিবাবুর সঙ্গে ছিলেন ওই সেন্টারের অন্য দুই গবেষক অর্ণব চট্টোপাধ্যায় ও সৌমিক চট্টোপাধ্যায়। ছিলেন ব্রিটেনের কভেন্ট্রি বিশ্ববিদ্যালয়ের বারবারা স্মিথ এবং এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের জেমস ই ক্রেসওয়েল।