রাজ্য কারা দফতরের প্রধান সচিব শিবাজী ঘোষের নাম করে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার প্রতারক সিপিএমের সর্বক্ষণের সদস্য এবং প্রয়াত এক সিপিএম নেতার ঘনিষ্ঠ ছিল বলে দাবি তদন্তকারী সিআইডি-র।
গোয়েন্দাদের একাংশের দাবি, বুধবার ওই আইপিএস অফিসারের নাম করে প্রতারণার অভিযোগে মুর্শিদাবাদের রেজিনগর থেকে পলাশ মণ্ডল ও মানোয়ার শেখ নামে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। জেরায় পলাশ নিজেকে বর্ধমানের মেমারিতে সিপিএমের সর্বক্ষণের কর্মী বলে জানায়। তদন্তকারীদের দাবি, পলাশ ২০১০ সাল থেকে সিপিএমের সঙ্গে যুক্ত। বর্ধমানের দাপুটে এক নেতার হাত ধরে ওই দলে যোগ দেয় সে। ওই নেতা কয়েক বছর আগে মারা গিয়েছেন। তাঁর মাধ্যমেই চাপড়ার তৎকালীন সিপিএম বিধায়কের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল বলে জেরায় গোয়েন্দাদের কাছে জানিয়েছে পলাশ।
সিআইডির এক কর্তা জানান, পলাশ বাম আমলের বেশ কয়েক জন মন্ত্রীর নাম করেছে। ওই মন্ত্রীদের নাম করে নানা সরকারি ও বেসরকারি দফতর থেকে পলাশ সুবিধা আদায় করত বলেও জেনেছে গোয়েন্দারা। নদিয়ার কৃষ্ণনগরে বাসিন্দা পলাশ কী করে সিপিএমের বর্ধমান জেলার মেমারিতে দলীয় সদস্য হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশের একাংশের মতে ওই প্রতারক যে সময়ের কথা বলছে, তখন সরকারে থাকলেও সিপিএমের সেই দাপট ছিল না। সেই পরিস্থিতিতে শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীদের নাম করে প্রতারণা কত দূর সম্ভব, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
সূত্রের খবর, বাম আমলে মন্ত্রীদের নাম করে হুমকি দিয়ে টাকা ও সুবিধা আদায়ের সঙ্গে সরকারি উচ্চপদস্থ কর্তাদের নাম করেও প্রতারণা করেছে। ২০১০-এই পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসককে ফোন করে এক উচ্চপদস্থ কর্তার নাম করে গরিব ছাত্রছাত্রীদের জন্য টাকা চান পলাশ। সিআইডির দাবি, ওই টাকা প্রতারককে দিয়েও দেন জেলাশাসকের দফতরের কর্মীরা। এ ছাড়া, ২০১১-য় বিধানসভা ভোটের আগে, তৎকালীন বোলপুরের বিডিওকে আসনসোলের মহকুমাশাসক করার আশ্বাস দিয়ে পলাশ তাঁর থেকে টাকা নিয়েছিল। ওই ঘটনায় তৎকালীন বিডিওকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে সিআইডি সূত্রের খবর। গোয়েন্দারা জানান, পলাশ জেরার মুখে জানিয়েছে, ২০০৮ সাল থেকে সে মন্ত্রী বা প্রশাসনের কর্তাদের নাম করে টাকা তোলা শুরু করে। ২০১১ সালে প্রথম বার গ্রেফতার হওয়ার আগে পর্যন্ত তার ওই সব কীর্তি অব্যাহত ছিল। এমনকী, এক বার ডিআইজি (বর্ধমান রেঞ্জ)-এর নাম করে বীরভূমের রির্জাভ অফিসারের মোটরবাইক নিয়ে চম্পট দিয়েছিল পলাশ।
বৃহস্পতিবার পলাশ এবং মনোয়ারাকে তমলুক মহকুমা আদালতে তোলা হলে তাদের ১৪ দিন সিআইডি হেফাজত হয়। রাতেই তাদের ভাবনী ভবনে আনেন গোয়েন্দারা। সেখানে সে প্রতারণার কথা স্বীকার করেছে বলে সিআইডি-র দাবি। সে জানায়, চলতি বছর মে মাসে কলকাতা হাইকোর্ট থেকে জামিন মেলার পরেই সে মানোয়ারকে সঙ্গে নিয়ে ফের প্রতারণার জাল তৈরি করে। নিজের সাতটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকা সত্ত্বেও সে মানোয়ারের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করত।
সিআইডি সূত্রের খবর, পলাশের বিরুদ্ধে এই ধরনের ২১টি জালিয়াতির মামলা কী অবস্থায় রয়েছে, তার খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। তার সঙ্গে কোন প্রতারক চক্রের যোগ থাকার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তদন্তকারীরা।