বাংলায় মোট ৪২টি লোকসভা আসনের মধ্যে ২০টির বেশি তারা লড়বে না বলেও দলীয় স্তরে সিপিএম ঠিক করে ফেলেছে।
রাজ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা করেই তারা লোকসভা ভোটে যাবে বলে এ বার বাম শরিকদেরস্পষ্ট জানিয়ে দিল সিপিএম। বাংলায় মোট ৪২টি লোকসভা আসনের মধ্যে ২০টির বেশি তারা লড়বে না বলেও দলীয় স্তরে সিপিএম ঠিক করে ফেলেছে। এত দিন তারা একাই লড়ত ৩২ আসনে। বাকি ১০টি ছিল শরিকদের।
তিন শরিকের মধ্যে ফরওয়ার্ড ব্লকই একমাত্র কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও বোঝাপড়ায় যাবে না বলে অনড় অবস্থান নিয়েছে। সিপিআই এবং আরএসপি-কে পাশে নিয়ে আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি সিপিএম সমঝোতা সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব তৈরির চেষ্টা করবে। আর সে দিনই বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুর কাছে তাদের ভাগের তিন আসনে প্রার্থীর নাম জমা দিয়ে দিতে চায় ফ ব।
আলিমুদ্দিনে বৃহস্পতিবার চার বাম দলের বৈঠকে সমঝোতার প্রশ্নে দীর্ঘ বাক্-বিতণ্ডা হয়েছে। ফ ব-সহ শরিক নেতৃত্বের একাংশের অভিযোগ ছিল, ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা করে বামেদের বিশেষ ফায়দা হয়নি। বরং, শরিকদের সঙ্গে একই আসনে কংগ্রেস প্রার্থী থাকলে সিপিএমের কর্মীরা কংগ্রেসের পক্ষে কাজ করেছেন। অভিযোগ খারিজ করে বিমানবাবু, সূর্যকান্ত মিশ্র, রবীন দেবেরা স্পষ্ট জানিয়েছেন, দেশের সামনে বিজেপি এখন ভয়ঙ্কর বিপদ। এমতাবস্থায় বিজেপি এবং কংগ্রেসের থেকে সমদূরত্ব কোনও ভাবেই তাঁদের নীতি নয়। বিজেপির পাশাপাশিই বাংলায় তৃণমূল-বিরোধী ভোটকে এক জায়গায় আনার জন্য এখন চেষ্টা করতে হবে। এই সঙ্গেই সূর্যবাবুরা জানিয়ে দিয়েছেন, রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বামেদের সাংগঠনিক ও আর্থিক ক্ষমতা বিচার করলে এখন ৪২টি আসনে তারা প্রার্থী দিলে বহু জায়গায় ‘সম্মান’ খোয়াতে হবে। তাই সিপিএম যে ৩২টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, তার মধ্যে ২০টির বেশি এ বার তারা লড়তে চায় না।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘ওই ২০টির মধ্যে আমাদের গত বারের জেতা রায়গঞ্জ ও মুর্শিদাবাদ ধরে রাখার জন্যই কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনা হবে। আবার কিছু আসনে নির্দিষ্ট দলীয় পরিচিতির বাইরে কোনও অভিন্ন প্রার্থীকে কংগ্রেস ও বাম মিলিত ভাবে সমর্থন করতে পারে।’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রও এ দিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ‘‘বাম শরিকদের সঙ্গে আলাদা করে আমরা আর আলোচনায় বসব না। বামফ্রন্ট তাদের অবস্থান চূড়ান্ত করলে একেবারে আলোচনা হবে।’’
সিপিআইয়ের স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়, মঞ্জুকুমার মজুমদার, উজ্জ্বল চৌধুরীরা সিপিএমের অবস্থানকে নীতিগত ভাবে সমর্থন করেছেন। আরএসপি-র ক্ষিতি গোস্বামী, বিশ্বনাথ চৌধুরী, মনোজ ভট্টাচার্যেরাও সমঝোতা নিয়ে আলোচনায় অনাগ্রহী নন। ফ ব-র নরেন চট্টোপাধ্যায়, হাফিজ আলম সৈরানি ও বরুণ মুখোপাধ্যায় অবশ্য বৈঠকে জানিয়েছেন, কংগ্রেসের প্রার্থী থাকলে সেই আসনে তাঁদেরকর্মীরা কী করবেন, তা শনি-রবিবার রাজ্য কমিটির বৈঠকে ঠিক করা হবে। পরে নরেনবাবু বলেন, ‘‘আমরা তিনটি আসনেই লড়ব। সিপিএম কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও সমঝোতা করলে সেটা তাদের দলীয় সিদ্ধান্ত।’’