সীতারাম ইয়েচুরি সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেওয়ার পর এ বার সংসদে বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে সিপিএম আরও তৎপর হচ্ছে।
এক দিকে সিপিএমের সাংসদেরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জমানায় রাজ্যের সমস্যার কথা তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। অন্য দিকে কয়লা, খনি বিলের পর তৃণমূল পণ্য পরিষেবা কর বিলও সমর্থনের কথা জানানোর পরে মমতার বিজেপি-ঘনিষ্ঠতা নিয়ে সরব হচ্ছে সিপিএম। সিবিআই তদন্তে চাপে পড়েই বিজেপির সঙ্গে তৃণমূল ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছে বলে দাবি করছে তারা। আজ মমতার দলকে নিশানা করতে আলুচাষিদের আত্মহত্যার বিষয়টিকে বেছে নেন সিপিএম সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়।
আজ ঋতব্রত কৃষি মন্ত্রকের কাছে জানতে চান, গত দু’মাসে পশ্চিমবঙ্গে কত জন আলুচাষি আত্মহত্যা করেছেন? সরকার এ বিষয়ে কী ব্যবস্থা নিয়েছে? জবাবে কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী রাধামোহন সিংহ জানান, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের রিপোর্ট অনুযায়ী গত দু’মাসে কোনও আলুচাষি আত্মহত্যা করেননি।
নরেন্দ্র মোদী সরকারের কৃষিমন্ত্রীর এই জবাবকে কেন্দ্র করেই বিজেপি-তৃণমূলের আঁতাঁতের অভিযোগ তুলেছে সিপিএম। ঋতব্রতর দাবি, ৪ মার্চের পর থেকে পশ্চিমবঙ্গে ২১ জন আলুচাষি আত্মহত্যা করেছেন। ঋতব্রতর কাছে এ কথা শুনে সীতারাম ইয়েচুরি তাঁকে নির্দেশ দেন, এ বিষয়ে বিশদ তথ্য জানিয়ে কৃষিমন্ত্রীকে চিঠি লিখতে। ঋতব্রত বলেন, ‘‘কোন দিন, কোথায়, কোন কৃষকের মৃত্যু হয়েছে তার সব তথ্য দিয়ে আমি কৃষিমন্ত্রীকে জানাব। কিন্তু প্রশ্ন হল, কেন রাজ্য সরকারের মিথ্যে রিপোর্টের ভিত্তিতে সংসদে ভুল তথ্য দেবে কেন্দ্রীয় সরকার? এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘর ওয়াপসি হয়ে গিয়েছে। বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের আঁতাঁত তৈরি হয়েছে।’’
পশ্চিমবঙ্গের আলুচাষিদের সমস্যা মেটাতে প্রতিবেশী রাজ্যে আলু রফতানির উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিকে চিঠি লিখে রাজ্যের আলুচাষিদের ঋণ মকুব করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। খরিফ শস্যের জন্য নতুন ঋণ মঞ্জুর করারও অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু কোনও চাষিকে আত্মহত্যা করতে হয়নি বলেই রাজ্য জানিয়েছে। কৃষি মন্ত্রকও সে কথাই বলছে। রাধামোহন সিংহ সংসদে জানিয়েছেন, ২০১৪-’১৫ সালে পশ্চিমবঙ্গে রেকর্ড পরিমাণ আলু উৎপাদন হয়েছে বলে জানিয়েছে রাজ্য সরকার। সেই কারণেই কৃষকরা ন্যায্য দাম পাননি। রাজ্য সরকার মিড ডে মিল ও শিশুকল্যাণ প্রকল্পের জন্য সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে আলু কেনার নির্দেশ জারি করেছে। আন্তঃরাজ্য পরিবহণে ভর্তুকি ও কলকাতা বন্দর থেকে আলু রফতানির উপরেও ভর্তুকির ব্যবস্থা করেছে।
কিন্তু সিপিএমের প্রশ্ন, শুধুমাত্র রাজ্য সরকারের রিপোর্টের উপর ভরসা না করে কেন্দ্র কেন নিজে পশ্চিমবঙ্গের আলু চাষের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছে না? কেন সংসদে রাজ্যকে আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে? কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে চিঠি লেখার পরেও এই বিষয়ে সংসদে সরব হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন সীতারাম ইয়েচুরি।