দু’ধারে দুই মুখ্যমন্ত্রী, দ্বিধায় জোড়া রিপোর্ট

এখন দলের অন্দরে মরিয়া চেষ্টা চলছে, পার্টি কংগ্রেসের আগে বিদায়ী কেন্দ্রীয় কমিটির শেষ বৈঠকে ভোটাভুটি এড়ানোর।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:০৬
Share:

লক্ষ্য অভিন্ন। কিন্তু পথ এখনও ভিন্ন! পার্টি কংগ্রেসের প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে তাই দু-দু’টো সমান্তরাল খসড়া হাতে নিয়েই বসতে হচ্ছে সিপিএমকে!

Advertisement

সমদূরত্বের তত্ত্ব ঝেড়ে ফেলে বিজেপি-কে বিপজ্জনক প্রতিপক্ষ বলে স্বীকার করে নিয়েছেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কট্টরপন্থী অংশও। কিন্তু বিজেপি-কে রুখতে কোন পথে এগোনো যাবে, সেই প্রশ্নে সীতারাম ইয়েচুরি ও প্রকাশ কারাটের এখনও দু’রকম মত। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, সিপিএমের হাতে থাকা দুই রাজ্যের দুই মুখ্যমন্ত্রী এখন এই বিভাজনের দু’দিকে! এমতাবস্থায় কাল, শুক্রবার থেকে কলকাতায় তিন দিনের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে দুই শীর্ষ নেতার দুই খসড়া দলিলই পেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পলিটব্যুরো। এখন দলের অন্দরে মরিয়া চেষ্টা চলছে, পার্টি কংগ্রেসের আগে বিদায়ী কেন্দ্রীয় কমিটির শেষ বৈঠকে ভোটাভুটি এড়ানোর।

সাধারণ সম্পাদক ইয়েচুরি ও তাঁর পূর্বসূরি কারাটের কৌশলে ফারাক আছে জেনেই কেন্দ্রীয় কমিটির তরফে পলিটব্যুরোর হাতে ভার দেওয়া হয়েছিল দুই খসড়া মিলিয়ে একটা প্রতিবেদন তৈরি করার। সিপিএম সূত্রের খবর, দুই খসড়াতেই কিছু পরিমার্জন করা হয়েছে। কিন্তু একাধিক বার বৈঠক করেও পলিটব্যুরো দলের রাজনৈতিক ও কৌশলগত লাইনের উপরে বিভাজন মেটাতে পারেনি! শেষমেশ তাই কেন্দ্রীয় কমিটিকেই চূড়ান্ত ফয়সালা করতে বলা হচ্ছে। পলিটব্যুরোর এক সদস্য অবশ্য বলছেন, ‘‘রাজনৈতিক বা কৌশলগত লাইন নিয়ে চূড়ান্ত মীমাংসা তো হবে পার্টি কংগ্রেসে। কিছু দ্বিমত যে হেতু রয়েই গিয়েছে, তাই কেন্দ্রীয় কমিটির সামনে গোটা বিষয়টাই পেশ করা হবে।’’

Advertisement

বিধানসভা নির্বাচনের মুখে ত্রিপুরায় মানিক সরকার এখন সঙ্ঘ-বিজেপি’র আগ্রাসন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন। সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক রীতিনীতির তোয়াক্কা না করে গেরুয়া শিবির ত্রিপুরা দখলে মরিয়া হয়েছে বলে তাঁদের অভিযোগ। তাই ত্রিপুরার সিপিএমও এখন বিজেপি-কে রুখতে বৃহত্তর গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ জোটের পক্ষে। কেরলেও সিপিএমের সঙ্গে বিজেপি-আরএসএসের রক্তক্ষয়ী লড়াই চলছে। কিন্তু বিজেপি-র বিপদ মেনে নিয়েও সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন কংগ্রেসের সঙ্গে প্রকারান্তরে সমঝোতারও পক্ষে নন। দুই মুখ্যমন্ত্রীর অবস্থান তাই এ বারের বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ।

কেরলের হাতেই কেন্দ্রীয় কমিটিতে ভোট বেশি। তবে ইয়েচুরির টানা সওয়ালের পরে বিজয়নের রাজ্যেও দলের মধ্যে কংগ্রেসের পক্ষে সুর তোলার কণ্ঠ বেড়েছে। পাশাপাশিই রাজ্য সম্মেলন উপলক্ষে ছোট-বড় নানা রাজ্যে ঘুরে বৃহত্তর গণতান্ত্রিক লাইনের প্রয়োজনীয়তা বুঝিয়ে চলেছেন ইয়েচুরি। ভোটাভুটি হলে কেন্দ্রীয় কমিটিতে ইয়েচুরিপন্থীরা এখন দাঁড়িয়ে হারবেন না! কিন্তু সরাসরি ভোটাভুটি কোনও পক্ষই চাইছে না। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘বৈঠকে খোলাখুলি বিতর্ক থেকে একটা মত তৈরি করে নেওয়াই ভাল।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement