WB Panchayat Election 2023

নেতাইয়ে গণহত্যার অভিযোগে এত দিন জেলে ছিলেন, সেই অনুজ, ডালিমকেই ভোটের দায়িত্বে

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি লালগড়ের নেতাই গ্রামে সিপিএমের শিবির থেকে গ্রামবাসীদের লক্ষ্য করে গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে। নিহত হন ৯ গ্রামবাসী। অভিযুক্ত সিপিএম নেতারা ফেরার হয়ে যান।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

লালগড় শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০২৩ ০৬:২১
Share:

সিপিএমের ঝাড়গ্রাম জেলা কার্যালয়ে অনুজ পাণ্ডে। —নিজস্ব চিত্র।

নেতাইয়ের গণহত্যার অভিযোগে এত দিন জেলে ছিলেন তাঁরা। জামিন পেয়ে এলাকায় ফেরার পরে দলের হাল ফেরাতে সেই অনুজ পাণ্ডে, ডালিম পাণ্ডেদের উপরেই ভরসা রেখেছেন সিপিএম নেতৃত্ব। সঙ্গে রয়েছেন আরও তিন পুরনো নেতা— চণ্ডী করণ, শেখ খলিলুদ্দিন ও তপন দে। দলে ‘পঞ্চ পাণ্ডব’ বলে পরিচিত এই পাঁচ জনের কাঁধে এখন লালগড় ব্লকের পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েত পুনরুদ্ধারের দায়িত্ব।

Advertisement

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি লালগড়ের নেতাই গ্রামে সিপিএমের শিবির থেকে গ্রামবাসীদের লক্ষ্য করে গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে। নিহত হন ৯ গ্রামবাসী। অভিযুক্ত সিপিএম নেতারা ফেরার হয়ে যান। ২০১৪ সাল নাগাদ গ্রেফতার হন অনুজরা। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে গত বছর জামিন পান সিপিএম নেত্রী ফুল্লরা মণ্ডল। এর পর হাই কোর্টে জামিন পেয়ে এলাকায় ফিরেছেন অনুজরাও। জেলবন্দি থাকাকালীনও দলে পদ খোয়াননি এই বাম নেতারা। ঠিক যে ভাবে তিহাড়ে বন্দি অনুব্রত মণ্ডলকে এখনও বীরভূমের দলীয় সভাপতি পদে রেখে দিয়েছে তৃণমূল।

সিপিএম সূত্রে খবর, লালগড়ে ফিরে সংগঠনের কাজে পুরোদস্তুর নেমে পড়েছেন অনুজরা। অবশ্য প্রকাশ্যে প্রচারে নেই তাঁদের কেউ।

Advertisement

তবে কার্যালয়ে বসে ভোটের রণকৌশল স্থির করছেন। সেই মতো প্রার্থী ও কর্মীরা প্রচারে যাচ্ছেন, দেওয়াল লেখা হচ্ছে। তার ভাষাও ঠিক করছেন অনুজ-ডালিমরা।

লালগড় ব্লকের বৈতা ও ধরমপুর পঞ্চায়েতে ভোটের দায়িত্বে রয়েছেন অনুজ ও তাঁর সম্পর্কিত ভাই ডালিম। নেপুরায় দায়িত্বে চণ্ডী, বেলাটিকরিতে খলিলুদ্দিন আর তপন দেখছেন লালগড় গ্রাম পঞ্চায়েত। নেতাই কাণ্ডের জেলমুক্ত আরেক সিপিএম নেতা জয়দেব গিরিও সাংগঠনিক বিষয়ে তপনকে সাহায্য করছেন।

নেতাইয়ের মতো ঘটনায় যাঁরা অভিযুক্ত, এখনও আদালতে যাঁরা অব্যাহতি পাননি, তাঁদের কেন ভোটে ব্যবহার করা হচ্ছে? সিপিএমের বক্তব্য, জনপ্রিয়তা ও সাংগঠনিক দক্ষতা বিচার করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সিপিএমের ঝাড়গ্রাম জেলা সম্পাদক প্রদীপকুমার সরকার বলছেন, ‘‘বিচারাধীন বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। তবে ওই পাঁচ নেতা জনপ্রিয়। তাঁরা ফেরায় কর্মীরা উজ্জীবিত। তাঁরাও পরামর্শ দিয়ে দলকে সাহায্য করছেন।’’ অনুজ ও চণ্ডী বলছেন, ‘‘দলকে ভালবাসি বলেই প্রার্থী ও কর্মীদের পরামর্শ দিচ্ছি। তবে ভোটের প্রচারে আমরা নেই।’’

সূত্রের খবর, লালগড়ে কয়েক জায়গায় তৃণমূল ও বিজেপির বিক্ষুব্ধদের নিয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোট করে পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিতে প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। বামেরা কিছু আসনে প্রতীকে লড়ছে, আবার কিছু আসনে নির্দল। আর লালগড় পঞ্চায়েত সমিতির ৩০টি আসনের মধ্যে বামজোট ২৬টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে, সিপিএমের প্রতীকে ২২ জন, চার জন নির্দল প্রার্থী।

পুরনো চাল ভাতে বাড়ে। সেই প্রবাদ মাথায় রেখে সিপিএমের আশা, পুরনো নেতারাও আশাহত করবেন না। কিন্তু অতীত মনে করিয়ে ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মু বলছেন, ‘‘গণহত্যায় অভিযুক্ত সিপিএমকে এলাকাবাসী প্রত্যাখ্যান করেছেন। এ বারও করবেন।’’ বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি দেবাশিস কুণ্ডুরও দাবি, ‘‘অনুজ-ডালিমদের যুগ শেষ।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement