সুশান্ত ঘোষ। —ফাইল চিত্র।
এক মহিলা সাংবাদিক ‘হেনস্থা’র অভিযোগ আনার সঙ্গে সঙ্গে নিলম্বিত (সাসপেন্ড) করা হয়েছিল প্রাক্তন বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্যকে। দলের অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি (আইসিসি) সেই অভিযোগের তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দেওয়ার পরে ফের ৬ মাসের জন্য তন্ময়কে নিলম্বিত করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু আর এক প্রাক্তন বিধায়ক সুশান্ত ঘোষের বিরুদ্ধে এক মহিলার আনা অভিযোগের প্রেক্ষিতে এখনও অবস্থান স্পষ্ট করেনি সিপিএম। দুই জেলা উত্তর ২৪ পরগনা ও পশ্চিম মেদিনীপুরে দুই নেতার ক্ষেত্রে দলের অবস্থান ঘিরে ‘অস্পষ্টতা’র প্রশ্ন উঠছে সিপিএমে। দলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্মেলনে সুশান্ত-প্রশ্নে জল আরও ঘোলা হতে পারে বলে চর্চা চলছে সিপিএমের অন্দরে।
সিপিএম সূত্রের খবর, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্রীদীপ ভট্টাচার্য ইতিমধ্যে রাজ্য কমিটির কাছে সুশান্ত-কাণ্ডে তদন্ত রিপোর্টের নির্যাস পেশ করেছেন। বেশ কিছু অভিযোগ যে প্রাক্তন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে আছে, সেই কথা রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু তার প্রেক্ষিতে দল কোনও পদক্ষেপ ঘোষণা করেনি। এই বিষয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরে গড়বেতা থেকে ঘাটাল পর্যন্ত একাধিক এরিয়া কমিটির সম্মেলনে প্রতিনিধিরা সরব হয়েছেন। তাঁদের মত, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী ও ‘প্রাক্তন’ জেলা সম্পাদকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ভেসে বেড়ানোয় দলের ভাবমূর্তির ক্ষতি হচ্ছে, সংগঠনে তার প্রভাব পড়েছে। জেলা সম্মেলনেও এই পরিস্থিতির আঁচ পড়তে পারে বলে মনে করছেন সিপিএম নেতাদের একাংশ। সূত্রের খবর, জেলা সম্মেলনের খসড়া সাংগঠনিক রিপোর্টে সুশান্ত-কাণ্ডের প্রসঙ্গ থাকছে।
খড়্গপুরে কাল, রবিবার থেকে শুরু হতে চলেছে সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্মেলন। সেখানে জেলা সম্পাদক পদে বদল আসন্ন। দলীয় সূত্রের খবর, সম্মেলন পর্যন্ত সুশান্তের পরিবর্তে যাঁকে জেলা সামলানোর ভার দেওয়া হয়েছিল, সেই বিজয় পালকে এ বার পাকাপাকি জেলা সম্পাদক করা হতে পারে। আবার ছাত্র ও কৃষক ফ্রন্টে কাজ করে আসা মেঘনাদ ভুঁইয়াকে ওই দায়িত্ব দেওয়ার পক্ষে দলের অন্য একাংশ। এই টানাপড়েনে গত বারের ডেবরার মতো এ বার সম্মেলনে ভোটাভুটি এড়াতে চাইছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। রাজ্য সিপিএমের তরফে পশ্চিম মেদিনীপুরের দায়িত্বে আছেন স্বয়ং রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তাঁর এবং শ্রীদীপের খড়্গপুরে জেলা সম্মেলনে থাকার কথা। সম্মেলন-পর্ব থেকে প্রায় দূরে থাকলেও এই জেলার সম্মেলন উপলক্ষে মিছিল এবং তার পরে প্রতিনিধি-পর্বে আমন্ত্রিত হয়ে যাচ্ছেন প্রবীণ নেতা বিমান বসুও। হাওড়া জেলা সম্মেলনেও শুক্রবার গিয়েছিলেন বিমান।
বহু পুরনো ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক মহিলার অভিযোগ দলের কাছে জমা পড়ার পরে সুশান্তকে জেলা সম্পাদকের পদ থেকে ‘ছুটি’ দিয়েছিল আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। দলের রাজ্য দফতরে ডিসেম্বরের শেষে রাজ্য কমিটির বৈঠকে উপস্থিত হয়েছিলেন সুশান্ত। গড়বেতা-৩ ব্লকে দু’টি এরিয়া কমিটির সম্মেলনও তিনি উদ্বোধন করেছেন। সুশান্ত এই বিষয়ে মুখ খোলেননি। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠ এক নেতার কথায়, ‘‘দল বলেছিল, তাঁর স্ত্রীর অসুস্থতার কারণে সুশান্তদা’কে দায়িত্ব থেকে ছুটি দেওয়া হয়েছে। তাঁর স্ত্রী প্রয়াত হয়েছেন। সুতরাং, হিসেব মতো ছুটি শেষ হয়ে গিয়েছে! এর পরে দল যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার, নেবে।’’
সুশান্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পরে তাঁরই শিবিরের নেতা হিসেবে পরিচিত বিজয়কে যে পদ্ধতিতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তা নিয়েও প্রশ্ন আছে দলের অন্দরে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য অবশ্য বলছেন, ‘‘জেলা সম্মেলন পর্যন্ত একটা অস্থায়ী প্রক্রিয়া জারি রাখা হয়েছিল। এর পরে সম্মেলনে আলোচনা করেই সাংগঠনিক বিষয়ে যাবতীয় সিদ্ধান্ত হবে।’’