রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব ঘোষণা করে দিয়েছেন, পুজোর পরেই শিলিগুড়িতে বাম বিসর্জন হবে! শাসক দলের এমন মনোভাবে অশনি সঙ্কেত দেখছে সিপিএম। তাদের আশঙ্কা, এত দিন যা ছিল চোরাগোপ্তা চেষ্টা, এ বার সেটাই পরিণত হবে দখলের মরিয়া প্রয়াসে। তাই শিলিগুড়ি পুরসভার বোর্ড বাঁচাতে পাল্টা মরিয়া হয়ে ঝাঁপাতে চাইছে সিপিএমও।
আলিমুদ্দিনে বুধবার দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে শিলিগুড়ির পরিস্থিতি নিয়ে সবিস্তার আলোচনা হয়েছে। শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য বৈঠকে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, পুর নিগম এবং মহকুমা পরিষদের বোর্ড দখলের জন্য কী ভাবে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে শাসক দল!
অশোকবাবুদের আশঙ্কা, শুধু মামলার ভয় বা প্রলোভনই নয়, বাম কাউন্সিলরদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব বাধিয়ে দেওয়ার কৌশলও নিচ্ছে তৃণমূল। তবে তাঁরা আত্মবিশ্বাসী, এখনও পর্যন্ত বাম শিবিরে বিশেষ চিড় ধরেনি। ফরওয়ার্ড ব্লকের এক জন কাউন্সিলরকে তৃণমূল
দলে টেনেছে ঠিকই। বাকিরা এককাট্টাই আছেন।
এই অবস্থায় শিলিগুড়ি রক্ষা করতে ফের সরকার তথা প্রশাসনের দ্বারস্থ হতে চাইছে সিপিএম। বিরোধীদের প্রতি বৈষম্যের মনোভাব ছেড়ে পরিষেবার স্বার্থে সুষ্ঠু পদক্ষেপ করার দাবি জানিয়ে পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রীকে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি মন্ত্রীকে লিখিত ভাবে জানানো হবে পানীয় জল সঙ্কটকে ঘিরে
সাম্প্রতিক ঘটনার কথা। প্রয়োজনে দরবার করা হবে রাজ্যপালের কাছেও। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘সরকার বা প্রশাসন কিছু যে করবে না, বোঝাই যাচ্ছে। কিন্তু সংসদীয় ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যেখানে যেখানে অভিযোগ জানানো সম্ভব, পদ্ধতি মেনে সবটাই আমরা করতে চাই।’’
শিলিগুড়ি ‘মডেলে’র জেরে পুরভোটে জেতার পরে তৃণমূল যাতে দল ভাঙিয়ে পুরবোর্ড গঠনে বাধা দিতে না পারে, তার জন্য নবনির্বাচিত কাউন্সিলরদের দার্জিলিঙে নিয়ে গিয়ে রেখেছিল সিপিএম। এখন আর সেই কৌশল সম্ভব নয়। তাই এক দিকে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করে তৃণমূলের উপরে চাপ সৃষ্টি এবং তার পাশাপাশি প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়ে ভাঙনের বিপদ মোকাবিলার চেষ্টা হচ্ছে।
বিরোধীদের ঘর ভাঙিয়ে একের পর এক জেলা পরিষদ দখল করার পরে শিলিগুড়ি নেওয়ার জন্য শাসক দলের দার্জিলিং জেলা নেতৃত্ব আরও চাপে পড়েছেন বলে মনে করছে সিপিএম। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘এই ভাবে কত দূর রক্ষা করা যাবে, জানি না! কিন্তু একেবারে শেষ পর্যন্ত চেষ্টা চলবে।’’