এরিয়া কমিটির বহিষ্কারের সিদ্ধান্তে সিলমোহর দিল সিপিএমের কলকাতা জেলা সম্পাদকমণ্ডলী। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
নারী নিগ্রহের জোড়া অভিযোগে কলকাতার ৯৮ নম্বর ওয়ার্ডের এক তরুণ সিপিএম নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করল সিপিএম। দলের টালিগঞ্জ-২ এরিয়া কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ওই নেতাকে বহিষ্কার করার। সেই সিদ্ধান্তে সিলমোহর দিয়েছে সিপিএমের কলকাতা জেলা সম্পাদকমণ্ডলী। সিদ্ধান্ত অনুমোদনের সেই চিঠি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট এরিয়া কমিটিকে।
ঘটনাচক্রে, এই তরুণ নেতাও গত অগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে দলের হয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন। পথসভায় বক্তৃতাও করেছেন। সিপিএম সূত্রে খবর, দলেরই দুই সদস্যের কন্যাকে (যাঁদের এক জন সিপিএমের পার্টি সদস্য) হেনস্থা করার অভিযোগ উঠেছিল ওই তরুণ নেতার বিরুদ্ধে। এরিয়া কমিটির পাশাপাশি ওই দু’জন চিঠি দেন জেলা সিপিএমেও। তার পর গত সপ্তাহে টালিগঞ্জ এরিয়া কমিটি বৈঠকে বসেছিল। সেখানে একাংশ বলে, অভিযুক্তকে সাসপেন্ড করা হোক। এক অংশের বক্তব্য ছিল, তদন্ত কমিশন গঠন করা হোক। তবে অধিকাংশের মত ছিল বহিষ্কারের পক্ষে। সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই বৈঠকে উপস্থিত জেলা সম্পাদক কলোল্ল মজুমদার স্পষ্ট জানিয়ে দেন, কোনও কমিশনের প্রক্রিয়ায় এখন যাওয়া যাবে না। কারণ সম্মেলন প্রক্রিয়া চলছে। ফলে শোকজ় করে অভিযুক্তের থেকে জবাব নিয়ে তিন দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সোমবার জবাবি চিঠি নিয়ে বৈঠকে বসে সিপিএমের টালিগঞ্জ-২ এরিয়া কমিটি। সেখানে এক জন বাদ দিয়ে বাকি সকলেই বহিষ্কারের পক্ষে সায় দেন। এরিয়া কমিটির মনোভাবেই সিলমোহর দিয়েছে জেলা সম্পাদকমণ্ডলী।
এত দ্রুততার সঙ্গে পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বহিষ্কৃত নেতার অনুগামীরা। তাঁদের বক্তব্য, সম্মেলন প্রক্রিয়ার মাঝে তাঁকে ‘ছেঁটে’ ফেলতেই এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। সূত্রের খবর, জেলা সম্পাদকমণ্ডলীতেও কয়েক জন এই ভাবে দ্রুততার সঙ্গে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের সঙ্গে সহমত হননি। যদিও সেই সংখ্যা ছিল নিতান্তই কম।
এই তরুণ নেতার বিরুদ্ধে কয়েক বছর আগে এক যুবনেত্রীকে রাস্তায় ফেলে পেটানোর অভিযোগ উঠেছিল। তা নিয়ে বিস্তর তোলপাড় হয়েছিল জেলা সিপিএমে। ওই ঘটনাতেও তাঁকে বহিষ্কারের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন অনেকে। কিন্তু তখন তা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে এরিয়া কমিটির নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল টালিগঞ্জের এই নেতাকে। পাশাপাশি এক বছর প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে সাসপেন্ড (নিলম্বিত) করেছিল দল। সেই একই নেতার বিরুদ্ধে ফের জোড়া অভিযোগ জমা পড়েছিল। এ বার আর রেয়াত করল না সিপিএম।
বুধবারই মহিলা সাংবাদিককে হেনস্থার ঘটনায় বরাহনগর থানায় তিন ঘণ্টার বেশি সময় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে সিপিএম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্যকে। তাঁকে আগামী শনিবার বেলা সাড়ে ১২টায় ডেকে পাঠিয়েছে দলের অভ্যন্তরীণ কমিটি (আইসিসি)। এর মধ্যেই টালিগঞ্জের তরুণ নেতাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত সিপিএমের।