বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, নেতিবাচক রাজনীতি। কেউ বলছেন, শুধু বিরোধিতার জন্যই বিরোধিতা। শাসক দল বলছে, ‘নাটক’! কিন্তু নেতিবাচক রাজনীতিও পুরো দমে করতে গেলে সংগঠনের জোর লাগে। সাম্প্রতিক কালে যে জোর হারিয়ে ফেলেছে সিপিএম। সংগঠনের ফাঁক বোজাতে আপাতত তাদের ভরসা হয়ে উদয় হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া!
ভাঙড়-কাণ্ডের প্রতিবাদে মিলন মেলায় বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের প্রাঙ্গণে সিপিএমের বিক্ষোভকে ঘিরে যা হয়েছে, তাতে সোশ্যাল মিডিয়ার মদত টের পেয়েছে সিপিএম। কেন রাজ্য সরকার ও শাসক দলের বিরুদ্ধে পথে নামার বহু বিষয় পেয়েও ঘরে বসে আছেন কমরেডরা, এই নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতেই চর্চা হয়েছে বিস্তর। জড়তা কাটিয়ে শুক্রবার মহম্মদ সেলিম, সুজন চক্রবর্তী, কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়, শমীক লাহিড়ী, মানব মুখোপাধ্যায়দের নেতৃত্বে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভের পরে ফের সক্রিয় হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়াই। সিপিএমের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করে লালবাজারের লক আপে পুলিশ নিয়ে যাওয়ার পরে তাঁরা ব্যক্তিগত বন্ডে সই করে জামিন নিতে অস্বীকার করেছেন, খবরটি উল্কার গতিতে ছড়িয়ে দেন সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় সমর্থকেরাই। পর দিন আলিপুর আদালতে সুজন-কান্তিদের পেশ করার সময়ে সেখানে জমায়েতের কোনও আনুষ্ঠানিক ডাক সিপিএম দেয়নি। সোশ্যাল মিডিয়ায় বার্তা চালচালি হয়েই আদালত চত্বর ভরিয়ে ফেলেছিলেন কর্মী-সমর্থকেরা। যে কাজ সংগঠনের করার কথা, ই-জগতের মদতে তা-ই ঘটে গিয়েছে বাস্তবে।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের দাবি, ‘‘অনেক দিন বাদে একটা কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন পাওয়া গিয়েছে। জমায়েতের জন্য আমাদের খাটতে হয়নি। যাঁরা চেয়েছেন, নিজেরাই চলে এসেছেন। এর পরে নবান্ন অভিযানে ২০টা জেলা থেকে মানুষ সামিল হবেন।’’ ভাঙড় নিয়ে এ বারের প্রতিবাদে কলকাতার সঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সিপিএমের নেতা-কর্মীরা যোগ দিয়েছিলেন। সেই সমন্বয় অনেকটা ঘটিয়ে দিয়েছে সোশ্যাল মি়ডিয়াই। দলের নেতারা মানছেন, জনমানসে বামেদের হারানো গ্রহণযোগ্যতা রাতারাতি ফিরে আসবে না। তার জন্য যেতে হবে আরও বহু পথ। আম জনতার কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্যই ভাঙড়-কাণ্ডেও দলের বাইরে আলাদা মঞ্চ গড়ে প্রতিবাদ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা হচ্ছে। তরুণ মজুমদার, আনন্দদেব মুখোপাধ্যায়দের মতো বিদ্বজ্জনদের রেখে তৈরি হচ্ছে ‘ভাঙড় সংহতি মঞ্চ’। ভাঙড়ে প্রতিবাদী মানুষের উপরে অত্যাচারের বিচার চেয়ে বুধবার আলিপুরেই বড় সমাবেশের আয়োজন করা হচ্ছে ওই মঞ্চের ডাকে। সিপিএম সম্পর্কে সন্দিগ্ধ মনোভাব কাটিয়ে অন্যান্য বাম দলও ধীরে ধীরে সামিল হচ্ছে এই ধরনের প্রতিবাদে।
বামফ্রন্ট জমানায় সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও নানা দল, সংগঠন ও ব্যক্তির সমন্বয়ে গড়ে ওঠা মঞ্চকে কাজে লাগিয়েছিলেন। পরে দল হিসাবে তৃণমূল তার ফায়দা পেয়েছে ভোটেও। সিপিএম এখন একই পথে হাঁটতে চাইলে সাফল্য মিলবে কি না, তা নিয়ে অবশ্য ঢের বিতর্ক আছে। তা ছাড়া, সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের দাগও গা থেকে ওঠেনি পুরোপুরি! তবু চেষ্টা করে দেখতে চায় আলিমুদ্দিন। সঙ্গে চালাতে চায় জমি অধিগ্রহণে সরকারের ভূমিকা একেবারে সরিয়ে রাখার মমতা-নীতির প্রতিবাদও। শাসক দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য কটাক্ষ করছেন, ‘‘যারা সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামে কৃষক ও গণতন্ত্র হত্যা করেছে, তাদের মুখে এ সব মানায় না! প্রতিবাদের নামে নাটক করছেন ওঁরা!’’