বিজেপি-মমতা ছায়াযুদ্ধ দেখছেন অধীর-সূর্যেরা

বাম এবং কংগ্রেসকে সরিয়ে রেখে এ বার ২১শে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে বিজেপি-কেই কড়া আক্রমণ করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তৃণমূলকে পাল্টা আক্রমণ ফিরিয়ে দিল রাজ্য বিজেপি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৬ ০৪:১৫
Share:

বাম এবং কংগ্রেসকে সরিয়ে রেখে এ বার ২১শে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে বিজেপি-কেই কড়া আক্রমণ করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তৃণমূলকে পাল্টা আক্রমণ ফিরিয়ে দিল রাজ্য বিজেপি। কেন্দ্র ও রাজ্যের দুই শাসক দলের এই যুদ্ধকে ‘মেকী লড়াই’ হিসাবেই দেখছেন বাম ও কংগ্রেস নেতৃত্ব। তাঁদের মতে, দু’দল পরস্পরের স্বার্থেই রাজ্যে মেরুকরণের রাজনীতি চালাতে চাইছে। তাতে বিরোধী পরিসর ভাগ হয়ে গিয়ে শাসক মমতার সুবিধা হয়, আবার বিজেপি-ও পায়ের নীচে বাড়তি জমির ফায়দা নিতে পারে। ঠিক যেমন ঘটেছিল ২০১৪-র লোকসভা ভোটে।

Advertisement

রাজ্যে এখন প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস, তার পরে বামফ্রন্ট। দুই শিবির থেকেই এক জন করে বিধায়ক ২১শে-র মঞ্চে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তার পরেও কংগ্রেসের ৪৩ এবং বামেদের ৩২ জন বিধায়ক আছেন। অথচ মমতা বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন তিন বিধায়কের দল বিজেপি-কে। মমতার বাড়ানো বল খেলেই শুক্রবার তৃণমূলকে নিশানা করে নিজেদের অস্তিত্ব টের পাওয়াতে চেয়েছে বিজেপি। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ কটাক্ষের সুরেই মন্তব্য করেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর ৫০ মিনিটের ভাষণ শুনতে আমাকে অনেক ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হয়েছে! প্রথমে বুঝতে পারছিলাম না, ভোটের সময়ে যিনি আমাদের কোনও গুরুত্বই দেননি, তিনি এখন এত কথা আমাদের নিয়ে বলছেন কেন?’’

দিলীপবাবুর আরও সংযোজন, ‘‘সিপিএম এবং কংগ্রেসের এক জন করে বিধায়ককে মঞ্চে এনে উনি বুঝিয়ে দিলেন, ওই দুটো দলকে গিলে ফেলতে পারেন। কিন্তু আমাদের তো গিলতেও পারছেন না, সইতেও পারছেন না। তাই এত রাগ হচ্ছে!’’ স্বাভাবিক ভাবেই, নিজেদের পারস্পরিক স্বার্থে মেরুকরণের তত্ত্ব বিজেপি নেতারা মানছেন না। বরং, দিলীপবাবুর ব্যাখ্যা, গোটা দেশে বিজেপি-র প্রচুর বিধায়ক এবং সাংসদ রয়েছেন। কিন্তু তাঁদের কারও গায়ে দুর্নীতির কালি লাগেনি। অথচ তৃণমূলের বিধায়ক-সাংসদরা জেলে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে আছেন। কেউ কেউ ইতিমধ্যেই জেলের ভাত খাচ্ছেন। তাই তৃণমূল নেত্রীর কষ্ট এবং ঈর্ষা দুটোই হচ্ছে!

Advertisement

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী অবশ্য স্পষ্টই বলেছেন, ‘‘বাংলার রাজনীতি বিজেপি-র সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাইছেন তৃণমূল নেত্রী। দেখাতে চাইছেন, ওঁদের মূল শত্রু বিজেপি-ই। তাতে দু’দলেরই সুবিধা।’’ একই সুরে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের বক্তব্য, ‘‘আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে মেরুকরণের মানে হল, এক দিকে উনি নিজে আর অন্য দিকে বিজেপি-আরএসএস। উনি এখন সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের কথা বলছেন আবার নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে একান্তে বৈঠকও করছেন। আমাদের উনি ভুলিয়ে দিতে চান যে, কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে উনিই প্রথম বিজেপি-র হাত ধরেছিলেন!’’ সূর্যবাবু ফের মনে করিয়ে দিয়েছেন, বিজেপি-র সঙ্গে জোট বেঁধেই মমতা দু’বার কেন্দ্রে মন্ত্রী হয়েছিলেন। এ রাজ্যে বিজেপি-কে পা রাখার জমি করে দেওয়ার দায় তাঁরই। এমনকী, সন্ত্রাসবাদের প্রশ্নেও খাগড়াগড়-কাণ্ডের সময় সব আড়াল করতে চেয়ে এখন মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রের দিকে তোপ দাগছেন কেন, সেই প্রশ্নও তুলেছেন সূর্যবাবু। মুখ্যমন্ত্রী ২১ শে-র মঞ্চ থেকে অভিযোগ করেছিলেন, বিজেপি-র একটি শাখা সংগঠন বাড়ি বাড়ি গিয়ে গরু গোনার কর্মসূচি নিয়েছে। গো-মাংস ভক্ষণ বিতর্কের প্রসঙ্গ তুলেও বিজেপি-কে তীব্র আক্রমণ করেছিলেন মমতা। দিলীপবাবু এ দিন দাবি করেছেন, ‘‘বিজেপি-র কোনও শাখা সংগঠন গরু গোনার কাজ করছে না। তবে অন্য কেউ করলে ওঁর রাগ করার কী আছে? গরু তো আমাদের সম্পদ!’’ দিলীপবাবুর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘দিদির ভাইয়েরা তো সীমান্ত এলাকায় গরুর গাড়ি গুনছে! খাদ্যমন্ত্রীকে গাড়ি চাপা দেওয়ার চেষ্টা কারা করল, যারা টাকা দিয়েও গরু পায়নি, তারাই করল কি না, এ নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement