এনআরসি করার চেষ্টা হলে সব গণ-সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে সিপিএম রাস্তায় নামবে বলে জানিয়েছেন সেলিম। ফাইল চিত্র।
আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে ফের জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) তৈরির কাজে এগোনো হলে গণ-প্রতিরোধ গড়ে তোলার ডাক দিল সিপিএম। তাদের দাবি, এ রাজ্যে জনসংখ্যাপঞ্জি (এনপিআর) তৈরির কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। এর পরে এনআরসি-র দিকে এগোনো হবে বলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক চিঠি দিয়েছে। এমন উদ্যোগের বিরুদ্ধেই সর্বাত্মক প্রতিরোধের ডাক দিচ্ছে সিপিএম। সেই সঙ্গে তারা আঙুল তুলছে তৃণমূল কংগ্রেসের ভূমিকার দিকেও। তৃণমূল অবশ্য এই দাবিকে পঞ্চায়েত ভোটের আগে সিপিএমের ‘আজগুবি’ কথা বলে নস্যাৎ করতে চেয়েছে। আর বিজেপির দাবি, দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্যই সব প্রতিরোধ ভেঙে এনআরসি হবে।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম সোমবার আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে দাবি করেছেন, ‘‘আমাদের কাছে নির্দিষ্ট খবর আছে যে, দেশের মধ্যে প্রথম এনপিআর সম্পন্ন করেছে পশ্চিমবঙ্গ। এর জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মন্ত্রক থেকে নবান্নে রাজ্য সরকারের কাছে ধন্যবাদজ্ঞাপক চিঠি এসেছে, এনআরসি করতেও বলা হয়েছে।’’ তাঁদের বক্তব্য, এনপিআরের জন্য আলাদা করে সমীক্ষা করার দরকার পড়ে না। বিভিন্ন পরিষেবার জন্য নাগরিকেরা যে তথ্য দেন, সেখান থেকেই সরকার চাইলে তথ্যপঞ্জি তৈরি করে ফেলতে পারে। সেলিম মনে করিয়ে দিয়েছেন, ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের আগে এনআরসি এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ) বিরুদ্ধে উত্তাল নাগরিক প্রতিবাদ হয়েছিল। কলকাতায় ‘গো ব্যাক মোদী’ স্লোগান তুলে অবরোধের জন্য শহরে প্রধানমন্ত্রী সড়কপথে যাতায়াত করতে পারেননি। এখনও এনআরসি করার চেষ্টা হলে সব গণ-সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে সিপিএম রাস্তায় নামবে বলে জানিয়েছেন সেলিম। তাঁর দাবি, গোপনে শাহের ‘ক্রোনোলজি’ মেনেই পথ হাঁটছে তৃণমূলের সরকার।
এই সূত্রেই সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বলেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ইদের জমায়েতে গিয়ে এনআরসি-র কথা বলছেন। এটা শুধু মুসলিম জমায়েতে গিয়ে বলার প্রসঙ্গ নয়, এনআরসি হলে সব চেয়ে বিপদে পড়বেন গরিব মানুষ। তাঁরা কাগজ দেখাতে পারবেন না। নিজেকে এবং ভাইপোকে বাঁচাতেই উনি (মুখ্যমন্ত্রী) এখন ব্যস্ত! সিএএ এনআরসি রুখতে মানুষকেই একজোট হতে হবে।’’
তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র সুখেন্দুশেখর রায় অবশ্য পাল্টা বলেছেন, ‘‘এ একেবারে আজগুবি এবং গুজব! এনপিআর বাড়ি বাড়ি গিয়েই করতে হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে বসে করা যাবে না। সিপিএম আসলে পঞ্চায়েত ভোটের আগে সংখ্যালঘুদের মন পেতে এ সব চালাতে চাইছে।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘সারা দেশ এ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবস্থান জানে, তৃণমূলের আন্দোলনও দেখেছে।’’ অন্য দিকে, রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘ভারতীয় মুসলিম এবং বাংলাদেশের সংখ্যালঘু উদ্বাস্তুদের জন্য এনআরসি প্রয়োজনীয়। দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য এনআরসি দরকার। এই নিয়ে কোনও লুকোচুরি নেই। সমস্ত প্রতিরোধ ভেঙে এনআরসি হবেই! সেলিমদের মৌলবাদী ভাবনা চুরমার হয়ে যাবে!’’