টিকা নেওয়ার সময়ে। জলপাইগুড়ির একটি স্কুলে। ছবি: সন্দীপ পাল।
শুধু কলকাতা নয়, রাজ্যের অন্যান্য জেলাতেও সোমবার ১৫ থেকে ১৮ বছরের ছাত্রছাত্রীদের টিকাকরণ শুরু হয়েছে। বেশির ভাগ জায়গায় প্রথম দিন টিকাকরণ হয়েছে নোডাল স্কুলে। কলকাতার ১৬টি বরোয় ১৬টি স্কুলে এ দিন টিকা প্রক্রিয়া শুরু হয়। তবে সব স্কুলছুট পড়ুয়াকে টিকা দেওয়া যাবে কি না, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। তবে এ দিন যারা টিকা নিয়েছে, অনেক জায়গায় তারা বাড়তি হিসেবে পেয়েছে চকলেট বা গোলাপ।
বীরভূমে জেলা স্কুলশিক্ষা দফতরের (মাধ্যমিক) ভারপ্রাপ্ত পরিদর্শক সমরেন্দ্র সাঁতরা বলেন, ‘‘স্কুলপড়ুয়াদের তালিকা অনুযায়ী টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করাটা স্কুল-কর্তৃপক্ষের দায়িত্বের মধ্যে পড়ছে। বাকি পড়ুয়া, যেমন স্কুলছুট বা নতুন শ্রেণিতে ওঠা যে-সব ছাত্রছাত্রীর নাম নথিভুক্ত হয়নি, তাদের টিকার বন্দোবস্ত করবে প্রশাসন।’’ রামপুরহাট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মল্লিকা হালদার বলেন, ‘‘যারা নতুন ক্লাসে ভর্তি হয়নি, টিকা নেওয়ার জন্য সেই সব ছাত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। প্রয়োজনে স্বাস্থ্য দফতরের সহযোগিতায় ‘দুয়ারে টিকা’র ব্যবস্থা হবে।’’ পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া জেলার স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, স্কুলছুট বা জেলার স্কুলের পড়ুয়া নয়, এমন কিশোর-কিশোরীদের টিকা দিতে সব ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একটি করে কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বর্ধমানে স্কুলছুটদের আজ, মঙ্গলবার থেকে বর্ধমান মেডিক্যাল, কালনা ও কাটোয়া হাসপাতালে টিকা দেওয়া হবে বলে শিক্ষা শিবির সূত্রের খবর। বয়সের প্রমাণপত্র দেখালেই টিকা পাওয়া যাবে।
সোমবার শিলিগুড়ি জেলায় পাঁচটি, জলপাইগুড়ি জেলার ১৩টি, কোচবিহারে ১৮টি, দক্ষিণ দিনাজপুরে ১০টি, আলিপুরদুয়ারে সাতটি স্কুলে এবং মুর্শিদাবাদে শিবির করে টিকা দেওয়া হয়েছে। জলপাইগুড়ি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসীম হালদার বলেন, ‘‘পনেরো থেকে আঠারো বছরের ছাত্রছাত্রীদের কোভ্যাক্সিন টিকা দেওয়া হচ্ছে।’’ হুগলির ৩০টি স্কুলে, হাওড়া জেলার ১৪টি ব্লকে টিকাকরণ হয়েছে। দশম শ্রেণির পড়ুয়া সৌমিক দাস বলল, ‘‘টিকা নিতে আসার আগে ভয় করছিল। তবে এখন ঠিক আছি। এত দিন স্কুলে আসতে ভয় লাগত। এখন ভরসা পাচ্ছি।’’
টিকার সঙ্গে কোথাও পড়ুয়াদের দেওয়া হচ্ছে চকলেট, কোথাও বা গোলাপ। দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগর ব্লকে সুন্দরবন জনকল্যাণ সঙ্ঘ বিদ্যানিকেতন হাইস্কুলে টিকাকরণের পরে গোলাপ তুলে দেওয়া হয় পড়ুয়াদের হাতে। মেদিনীপুর শহরে টিকা নিতে আসা পড়ুয়াদের চকলেট দেওয়া হয়েছে পুরসভার তরফে।
পশ্চিম বর্ধমানে ১০টি স্কুল ছাড়াও পড়ুয়াদের টিকা দেওয়া হয়েছে আসানসোল জেলা হাসপাতাল, দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতাল, ছ’টি গ্রামীণ হাসপাতাল এবং বেশ কিছু স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ায় সব ব্লকে একটি করে স্কুলে টিকাকরণের ব্যবস্থা হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বিভাস রায় বলেন, ‘‘প্রথম দিনে জেলায় প্রায় চার হাজার ছাত্রছাত্রীকে টিকা দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার, দ্বিতীয় দিন থেকে শিবিরের সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে।’’
কলকাতার বেথুন কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শাশ্বতী অধিকারী বলেন, “আমাদের স্কুলে এ দিন দশম শ্রেণির ৮০ জন ছাত্রীর টিকাকরণ হয়েছে। মঙ্গলবার দশম শ্রেণির যে-সব পড়ুয়া এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে, তারা এবং যারা দশম শ্রেণিতে উঠল, সেই সব ছাত্রী এবং একাদশের ছাত্রী মিলিয়ে কমবেশি ২০০ জন পড়ুয়া টিকা নেবে।”
করোনা মোকাবিলার উদ্দেশ্যে টিকাকরণ, অথচ এ দিন টিকার কাজ চলার সময় অনেক জায়গাতেই মাস্ক পরা বা নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখার মতো করোনা বিধি মেনে চলার ছবি দেখা যায়নি বলে অভিযোগ। তবে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দাবি, স্কুলে ঢোকানোর সময় থার্মাল গান দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হয়েছে। পড়ুয়ারা মাস্ক পরেছে কি না, তা দেখে তবেই ঢুকতে দেওয়া হয়েছে। শাশ্বতীদেবী বলেন, “স্কুলে যাতে ভিড় না-হয়, সে-দিকে নজর রাখা হচ্ছে। শুধু পড়ুয়া নয়। তাদের সঙ্গে আসা অভিভাবকেরাও করোনা বিধি মানছেন কি না, দেখা হচ্ছে সেটাও।”