ছবি সংগৃহীত
কামদুনি-কাণ্ডে নির্যাতিতার মাকে ফোন করে সমবেদনা জানিয়েছিলেন দিল্লির নির্ভয়ার মা। বলেছিলেন, ‘‘পাশে আছি। আপনারাও পাশে থাকবেন।’’ যুদ্ধটা যে একই রকম। এবং বড়ই কঠিন।
শুক্রবার দুপুরে নির্ভয়া-কাণ্ডে দোষীদের মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল আছে জানতে পেরেই আবেগে ভাসল কামদুনি। একে অপরকে জড়িয়ে ধরলেন কেউ, কেউ আবার চোখ মুছলেন আঁচলে।
আর পরিবার?
এ দিন রায়ের কথা জেনে কত ক্ষণ যে ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে ছিলেন কামদুনি-কাণ্ডে ধর্ষিতার বাবা-মা! তার পর থেকে কেবল কেঁদেই চলেছেন দম্পতি।
ঘটনার পর থেকে কামদুনি ছেড়ে বহিরা কালীবাড়ি এলাকায় থাকতে শুরু করেছে মেয়েটির পরিবার। ওঁর ছোট ভাই বলেন, ‘‘বাবা-মা এখনও সুস্থ নন। সারাক্ষণ দিদির নাম ধরে বলে, ‘ফিরলি’? পরীক্ষা কেমন হয়েছে? ওষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়াতে হয়।’’ তবু এ দিন নির্ভয়া-কাণ্ডে এমন রায়ের পরে যেন কিছুটা শান্তি পেয়েছেন বাবা-মা, জানান ওই যুবক।
আরও পড়ুন:দার্জিলিঙের ভিড়ে মোর্চাকে টক্কর তৃণমূলের
২০১৩ সালের ৭ জুন পরীক্ষা দিয়ে ফেরার পথে নৃশংস ভাবে অত্যাচার চালিয়ে খুন করা হয় কামদুনির ওই কলেজছাত্রীকে। নির্ভয়া কাণ্ডের মতোই সেই ঘটনাও ‘বিরল থেকে বিরলতম’ এবং ‘সমাজে এর প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে’ বলে অভিমত ছিল আদালতের। ঘটনার পরে ধারাবাহিক প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে কামদুনি। গণধর্ষণ ও খুনের সেই ঘটনায় তিন জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং আরও তিন জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে নগর দায়রা আদালত। সেই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেছেন আসামী পক্ষের আইনজীবীরা। তাঁদের দাবি, সিআইডি-র তদন্ত প্রক্রিয়ায় গলদ ছিল। এই মামলায় নিম্ন আদালতের সাক্ষ্যগ্রহণ এবং সাজার বিরুদ্ধেও আদালতে আবেদন করা হয়েছে। এখন তারই শুনানি চলছে হাইকোর্টে। নির্ভয়া-কাণ্ডের মতো নিম্ন আদালতের রায় যেন হাইকোর্টে বহাল থাকে, এ দিন সেই প্রার্থনাই করেছেন মৃতার পরিবার এবং কামদুনির বাসিন্দারা। মেয়েটির ছোট ভাই বলেন, ‘‘নির্ভয়া-কাণ্ডের রায় শুনে ভাল লাগছে। আমাদের পরিবারটা শেষ হয়ে গেল। মামলার কাজে হাইকোর্টে ছুটোছুটি করেই চলেছি। উচ্চ আদালতেও যদি আগের রায় বহাল থাকে তবেই শান্তি পাব।’’
কামদুনির ঘটনার পরে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল রাজ্য ছাড়িয়ে গোটা দেশে। সেই সময়ে প্রতিবাদের দুই মুখ হিসেবে উঠে আসেন ওই গ্রামের মেয়ে টুম্পা কয়াল এবং গৃহবধূ মৌসুমী কয়াল। নির্ভয়ার রায় শুনেই কেঁদে ফেলেন মৌসুমী। বলেন, ‘‘এ বার আমাদেরটা! এমন নৃশংস ঘটনায় মৃত্যুদণ্ড ছাড়া আমাদের মেয়ের আত্মার শান্তি হবে না।’’ নির্ভয়া-কাণ্ডের রায়ের অপেক্ষায় চুপচাপ টিভি খুলে বসে পড়েন টুম্পাও। রায় শোনার পরে বলেন, ‘‘আমরাও শেষ দেখে ছাড়ব।’’
এ দিনের রায় দেখে উত্তেজিত হয়ে আবার কামদুনির মেয়ের উপরে অত্যাচারের শাস্তি দাবি করেন এলাকার অনেকেই। পাড়াময় গুঞ্জন, ‘আমাদেরটা কবে?’