কলকাতা মেডিক্যালে সংক্রমণ
Calcutta Medical College and Hopsital

ধরা পড়ল ক্যাথিটার নিয়ে দুর্নীতি

সংশ্লিষ্ট সরকারি হাসপাতালগুলিতে যাঁরা সেই ক্যাথিটার মাসের পর মাস নিয়েছেন, তাঁরা কোনও প্রশ্ন তোলেননি। আবার যে আন্তর্জাতিক সংস্থার ক্যাথিটার মাসের পর মাস নেওয়া হয়নি, তাদের তরফেও কোনও প্রশ্ন ওঠেনি।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২৪ ০৭:০৮
Share:

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। —ফাইল চিত্র।

রোগীর প্রাণরক্ষায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রী ‘সেন্ট্রাল ভিনাস লাইন ক্যাথিটার’। তা নিয়েই দুর্নীতি সামনে এসেছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। যার জেরে গত কয়েক মাস ধরে হাসপাতালে বেশ কিছু রোগীর মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়েছে বলে অভিযোগ।

Advertisement

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, এসএসকেএম, এম আর বাঙুর হাসপাতাল, দার্জিলিং হাসপাতাল, বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের মতো কয়েকটি হাসপাতালে একটি অনিয়ম হয়েছে। যে আন্তর্জাতিক চিকিৎসা সামগ্রী নির্মাণ সংস্থা স্বাস্থ্য দফতরে ওই ক্যাথিটার সরবরাহের জন্য দরপত্রের মাধ্যমে মনোনীত হয়েছিল, তাদের ক্যাথিটারের বদলে কলকাতার হাতিবাগান এলাকার এক ডিস্ট্রিবিউটর সংস্থা মাসের পর মাস স্থানীয় সংস্থার নিম্নমানের ক্যাথিটার মেডিক্যাল কলেজ-সহ একাধিক হাসপাতালে সরবরাহ করে গিয়েছে বলে অভিযোগ। অথচ, স্বাস্থ্য দফতর থেকে তারা টাকা নিয়েছে নামী সংস্থার ক্যাথিটারের হিসাবেই। এক-একটি ক্যাথিটারের জন্য রাজ্য দিয়েছে ৪১৭৭ টাকা। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের সুপার অঞ্জন অধিকারী ঘটনার কথা স্বীকার করে জানান, এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে।

ওপেন হার্ট সার্জারি-সহ বিভিন্ন বড় এবং জটিল অস্ত্রোপচারে রোগীর গলা বা কুঁচকি দিয়ে চ্যানেল তৈরি করে সেন্ট্রাল ভিনাস লাইন ক্যাথিটার ঢুকিয়ে ওষুধ দেওয়া হয়। অভিযোগ, গত কয়েক মাস ধরে অস্ত্রোপচারের সময়ে রোগীর ধমনীতে ওই ক্যাথিটার ঢোকাতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন চিকিৎসকেরা। কোনও ক্ষেত্রে ধমনীর মধ্যে ক্যাথিটার জট পাকিয়ে গিয়েছে, রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে বা রক্ত জমাট বেঁধে গিয়ে রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়েছে।

Advertisement

একাধিক ক্ষেত্রে এমন ঘটতে থাকায় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের কার্ডিয়োথোরাসিক সার্জারি বিভাগ, অ্যানেস্থেশিয়া বিভাগ ও ইউরোলজি বিভাগের চিকিৎসকেরা কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানান। গত মঙ্গলবার তদন্তে উঠে আসে, ‘প্রকাশ সার্জিক্যাল’ নামে এক ডিস্ট্রিবিউটর সংস্থা সরকার মনোনীত আন্তর্জাতিক সংস্থার সেন্ট্রাল ভিনাস লাইন ক্যাথিটারের বদলে একাধিক সরকারি হাসপাতালে স্থানীয় ভাবে তৈরি নিম্নমানের ক্যাথিটার সরবরাহ করেছে।

সংশ্লিষ্ট সরকারি হাসপাতালগুলিতে যাঁরা সেই ক্যাথিটার মাসের পর মাস নিয়েছেন, তাঁরা কোনও প্রশ্ন তোলেননি। আবার যে আন্তর্জাতিক সংস্থার ক্যাথিটার মাসের পর মাস নেওয়া হয়নি, তাদের তরফেও কোনও প্রশ্ন ওঠেনি। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের অভিযোগ, হাসপাতালের ইকুইপমেন্ট রিসিভিং বিভাগের কর্মীদের একাংশ এবং ওই আন্তর্জাতিক সংস্থার স্থানীয় কিছু কর্তা এই দুর্নীতি চক্রে জড়িত রয়েছেন।

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের সুপার অঞ্জন অধিকারীর কথায়, “বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকেরা ক্যাথিটারের মান নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। ওই ক্যাথিটার রোগীর শরীরে ঢোকানো যাচ্ছে না। রক্ত বেরিয়ে আসছে, সংক্রমণ হয়ে যাচ্ছে। মঙ্গলবার ক্যাথিটারগুলির কোম্পানি-ব্যাচ নম্বর দেখে হিসাব মেলাতে গিয়ে বিষয়টি ধরতে পারি। তদন্ত কমিটি তৈরি হয়েছে।”

‘প্রকাশ সার্জিক্যাল’-এর কর্ণধার প্রকাশ বসু ঘটনার কথা স্বীকার করে বলেন, “আমি কয়েক মাস অসুস্থ ছিলাম। সেই সুযোগে সংস্থার কিছু কর্মী এই ভুল করে ফেলেছে। যে যে হাসপাতালে ওই ভুল মাল গিয়েছে, সব আমরা ফিরিয়ে নিচ্ছি। এটা পুরোটাই ভুল বোঝাবুঝিতে হয়েছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement