—প্রতীকী ছবি।
স্কুলের বিভিন্ন স্তরে নিয়োগ নিয়ে নানান অভিযোগ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। এ বার শিক্ষক-চিকিৎসক নিয়োগের ক্ষেত্রেও রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরে ব্যাপক দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের অভিযোগ উঠল। এর বিরুদ্ধে মামলার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে ডাক্তারদের তরফে।
হেল্থ রিক্রুটমেন্ট বোর্ড গত ১৫ ফেব্রুয়ারি শিক্ষক-চিকিৎসকের পদে মোট ৬৪৭ জন প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করে। তার পরেই চিকিৎসক মহলের একটি বড় অংশ প্রতিবাদ ও সমালোচনায় মুখর হয়েছে। মঙ্গলবার, সরস্বতী পুজোর দিন সকাল থেকেই সমাজমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে শোরগোল পড়ে যায়। চিকিৎসকদের একাংশের অভিযোগ, নির্লজ্জ ভাবে স্বজনপোষণ করে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শাসক দলের বিভিন্ন নেতা-মন্ত্রীর আত্মীয় ও শাসক দলের ঘনিষ্ঠ প্রার্থীদের নিয়োগ করা হয়েছে। সাধারণ এমবিবিএস পাশ প্রার্থীদের নিয়োগ করা হয়েছে অথচ বাদ দেওয়া হয়েছে স্নাতকোত্তর ও পোস্ট ডক্টরাল ডিগ্রিধারীদের। হেল্থ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের কর্তারা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা এই বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি।
নিয়োগে ‘দুর্নীতির’ এই ঘটনা নজিরবিহীন ও লজ্জাজনক বলে মন্তব্য করে হেল্থ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডে এ দিন চিঠি দিয়েছে চিকিৎসকদের সিপিএম-পন্থী ‘অ্যাসোসিয়শন অব হেল্থ সার্ভিস ডক্টর্স’। তারা জানিয়েছে, এ ভাবে চলতে থাকলে উচ্চ ডিগ্রিধারী চিকিৎসকেরা আর রাজ্যে থাকতে চাইবেন না, স্বাস্থ্য পরিষেবা তথা মেডিক্যাল শিক্ষার মান তলানিতে ঠেকবে। সংগঠনের মুখপাত্র মানস গুমটা বলেন, ‘‘ন্যক্কারজনক ঘটনা। স্বাস্থ্যসচিব ও রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের চেয়ারম্যানকে স্মারকলিপি দেওয়া হবে। দরকার হলে আইনি পথে যাওয়া হবে।’’ ঘটনার নিন্দা করেছে বিজেপির চিকিৎসক সেল-ও। রাতে চিকিৎসকদের আর একটি সংগঠন হেলথ সার্ভিসেস অ্যাসোসিয়েশন-এর তরফে চিঠি দেওয়া হয় স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমকে।
অভিযোগ, তৃণমূলের এক চিকিৎসক-নেতার ছেলে সাধারণ এমবিবিএস পাশ হওয়া সত্ত্বেও বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরোলজির মতো সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে রেসিডেন্সিয়াল মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) হয়েছেন, অথচ সেখানে নাম ওঠেনি পোস্ট ডক্টরাল ডিগ্রিধারীদের! সদ্য স্নাতকোত্তর পাশ করা এক জন ছ’টি সুপার স্পেশালিটি বিভাগে নিয়োগপত্র পেয়েছেন, অথচ সেখানে পোস্ট ডক্টরাল ডিগ্রিধারীরা আমল পাননি। এক জন চিকিৎসক আলাদা আলাদা মেডিক্যাল কলেজের ১৩টি বিভাগে নিয়োগপত্র পেয়েছেন! সদ্য পাশ করা দুই হাউসস্টাফের নাম উঠেছে একাধিক বিভাগে অথচ সেখানে এমডি বা এমএস পাশ করা চিকিৎসকেরা ‘অকৃতকার্য’! এই ধরনের উদাহরণ রয়েছে অজস্র।
হেল্থ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের কন্ট্রোলার তুষারকান্তি পাঠক বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে কিছু বলব না।’’ বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রদীপকুমার সুর জানান, টিউটর-ডেমনস্ট্রেটরের ন্যূনতম যোগ্যতা এমবিবিএস। তা ছাড়া যে-কেউ আলাদা আলাদা ভাবে যত ইচ্ছে বিভাগে আবেদন করতে পারেন। প্রতিটির জন্য আলাদা ইন্টারভিউ হয়। ‘‘অনেক ক্ষেত্রে এমডি-এমএস বা পোস্ট ডক্টরাল ডিগ্রিধারীরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দফতরের ‘নো অবজেকশন লেটার’ জমা দিতে পারেননি বলে বাতিল হয়েছেন,’’ বলেন প্রদীপবাবু। কিন্তু এমবিবিএস পাশ প্রার্থী কী ভাবে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে টিউটর হতে পারেন? রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের কর্তারা বলেন, ‘‘আমরা প্রার্থী নির্বাচন করে দফতরকে তালিকা দিয়েছি। কোথায় কাকে দেওয়া হবে, সেটা স্বাস্থ্য দফতর ঠিক করেছে।’’ কিন্তু স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে আমরা কিছু জানি না। যা বলার, সবই বলতে পারবে রিক্রুটমেন্ট বোর্ড।’’