হাসপাতালে ভর্তির জন্য নিয়ে আসা হয়েছে এক রোগীকে। ছবি: পিটিআই।
বাংলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা ১৫ থেকে বেড়ে ১৮ হয়েছে বলে শুক্রবার জানিয়েছে রাজ্য সরকার। এ ছাড়া আরও ৩৯ জনের মৃত্যুতে কারণ হিসেবে সরাসরি ‘কো-মর্বিডিটিকে’ চিহ্নিত করা হয়েছে। সেই সঙ্গেই বলা হয়েছে, ওই সব ঘটনায় ‘ইনসিডেন্টাল কোভিড-১৯ ফাইন্ডিং’ রয়েছে।
সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী রাজ্যে মোট করোনা অ্যাক্টিভ পজ়িটিভ রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৮৫। গত ২৪ ঘণ্টায় ৫১ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন। তার ৫১% কলকাতার, হাওড়ার ১৮%, উত্তর ২৪ পরগনার ১৩%। এই তিন জেলাকে মাথায় রেখে সরকারি কোয়রান্টিন বা নিভৃতবাস কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। হাওড়ার পরিস্থিতি দেখতে অতিরিক্ত দু’জন অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে অন্যান্য রোগীর দুর্ভোগের এবং জুনিয়র ডাক্তার, চিকিৎসাকর্মীদের অভাব-অভিযোগের বিষয় দু’টি এ দিন স্বীকার করে নিয়েছেন মুখ্যসচিব। চলতি পরিস্থিতির পর্যালোচনায় শুক্রবার সন্ধ্যায় সব মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ, এমএসভিপি, বাঙুরের সুপার, স্বাস্থ্য ভবনের কর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ।
সরকারি হাসপাতালে নির্দেশিকা
• রোগীকে প্রত্যাখ্যান নয়
• ‘রেফার’ করতে হলে রোগীর জন্য অ্যাম্বুল্যান্স
• ওয়ার্ড থেকে মৃতদেহ সঙ্গে সঙ্গে সরানো
• বহির্বিভাগ এবং ইমার্জেন্সির চিকিৎসকদের সুরক্ষা-গিয়ার পরা আবশ্যিক
• হাসপাতালে ডাক্তারদের ব্যবহৃত জায়গা দৈনিক জীবাণুমুক্ত করতে হবে
• নমুনা সংগ্রহের ১২ ঘণ্টার মধ্যে পরীক্ষার ফল
• অস্থায়ী কর্মী নিয়োগের ছাড়পত্র মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষদের
• এমআর বাঙুরে নজর
• মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে নিয়মিত পরিদর্শন স্বাস্থ্যকর্তাদের
• মানুষের অসুবিধায় ‘জ়িরো টলারেন্স’
মুখ্যসচিব বলেন, ‘‘বিভিন্ন জায়গা থেকে রোগীর চিকিৎসায় ভোগান্তির খবর পাচ্ছি। সব বেসরকারি হাসপাতাল বা চেম্বারকে অনুরোধ, পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা-সহ চিকিৎসা করুন। রোগী ফেরাবেন না। সরকার আপনাদের সঙ্গে সব ধরনের সহযোগিতা করবে।’’ মুখ্যসচিব জানান, রোগী ভর্তি বন্ধ করলে অসুবিধা হবে। মেডিক্যাল কলেজ থেকেও রোগী ফেরানোর তথ্য এসেছে। এটা মেনে নেওয়া হবে না। পর্যাপ্ত সুরক্ষার ব্যবস্থা যেন নিশ্চিত করা হয়। ‘‘জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গেও কথা বলব। কী সমস্যা হচ্ছে, জেনে মেটানোর চেষ্টা করব। সবাই আমাদের কাছে মূল্যবান। ব্যক্তিগত ভাবে সকলের সমস্যা সব সময় মেটানো না-গেলেও গোষ্ঠীগত ভাবে ব্যাপারটা দেখা হবে,’’ আশ্বাস দেন মুখ্যসচিব।
সরকারি সূত্রের খবর, এ দিনের বৈঠকে বাঙুর হাসপাতালের কথা ওঠে। হাসপাতালে মৃতদেহ পড়ে থাকলে সরকারের ভাবমূর্তি কী হতে পারে, তা স্পষ্ট করে দেন মুখ্যসচিব।কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে প্রসূতি বিভাগ এবং চিকিৎসাধীন দু’জন করোনা রোগীর সংস্পর্শে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সংক্রমিত হওয়ার তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। এ দিন সেখানে মেডিসিনের আরও এক চিকিৎসকের করোনা ধরা পড়ে। বড়বাজার ও পানিহাটিতে দু’জন করোনা আক্রান্তের মৃত্যুর খবর এসেছে শুক্রবার রাতে।
বঙ্গে করোনা
মোট আক্রান্ত ৩৮৫
গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ৫১ (কলকাতা, হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, হুগলি, পূর্ব বর্ধমান)
মোট মৃত্যু ১৮
অন্য কারণে মৃত্যু (ইনসিডেন্টাল কোভিড-১৯ ফাইন্ডিং) ৩৯
সুস্থ হয়ে মুক্ত ১০৩
মোট নমুনা পরীক্ষা ৮৯৩৩
২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা ৯৪৩
সরকারি পর্যবেক্ষণে ৫১৯০
গৃহ-পর্যবেক্ষণে ২৬,৭১৬
হাওড়া, কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনাকে মাথায় রেখে আরও সরকারি নিভৃতবাস কেন্দ্র হবে।
তথ্য সূত্র: রাজ্য সরকার
আরও পড়ুন: মৃত্যু-ব্যাখ্যা নবান্নের
আরও পড়ুন: সাবধান হবেন কী ভাবে, পথে নেমে পরামর্শ মমতার
স্বাস্থ্য দফতরের খবর, শুধু মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তার-সহ সংক্রমিতের সংখ্যা কুড়ির বেশি। করোনা হয়েছে অন্তত পাঁচ রোগীরও। ইএসআই হাসপাতালের এক ডাক্তার এবং বেহালার এক ডাক্তারেরও করোনা ধরা পড়েছে। মল্লিকবাজারের একটি স্নায়ুরোগ হাসপাতালের চিকিৎসক, রুবি সংলগ্ন বেসরকারি হাসপাতালের এক চিকিৎসক, হাওড়া এবং চিনার পার্ক সংলগ্ন বেসরকারি হাসপাতালের ন’জন স্বাস্থ্যকর্মী, পার্ক সার্কাসের এক কর্মী, সিএনসিআইয়ের ডেটা এন্ট্রি অপারেটরও আক্রান্ত। স্বাস্থ্য দফতর জানায়, শুধু কলকাতায় সংক্রমিতের সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়েছে।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)