প্রতীকী ছবি।
বিদেশ থেকে ফিরে নিজেই সটান বেলেঘাটার আইডি হাসপাতালে হাজির হয়ে করোনা-সচেতনতার মুখ হয়ে উঠেছেন তিনি। করোনা থেকে সুস্থ হয়ে সহ-নাগরিকদের লকডাউন বিধি অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলার পরামর্শ দিলেন সেই তরুণী।
মঙ্গলবার রাজ্যের প্রথম করোনা-পজ়িটিভের পাশাপাশি দ্বিতীয় আক্রান্তের বাবা এবং স্কটল্যান্ড-ফেরত উত্তর ২৪ পরগনার ওই তরুণীকে ছুটি দেন আইডি-কর্তৃপক্ষ। এ দিন প্রথমে ছাড়া হয় লন্ডন-যোগে দ্বিতীয় আক্রান্তের বাবাকে। তাঁর বাড়ির সকলে কোয়রান্টিন বা নিভৃতবাসে আছেন। তাই আক্রান্তের বাবাকে নিতে তাঁর বন্ধুরা এসেছিলেন গাড়ি নিয়ে। এক বান্ধবী জানান, আপাতত পণ্ডিতিয়া রোডের বহুতলে আত্মীয়ের বাড়িতে থাকবেন আক্রান্তের বাবা। লন্ডন-যোগে আমলা-পুত্রেরও করোনা-পজ়িটিভ ধরা পড়েছিল। এ দিন বিকেলে ছাড়া পান আমলা-পুত্র। লন্ডন-যোগে আক্রান্ত দু’জনের ছুটি দেওয়ার মাঝখানে তরুণীকে বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করেন আইডি-কর্তৃপক্ষ। বেসরকারি সংস্থার গাড়ি তাঁকে নিয়ে যেতে রাজি না-হওয়ায় একটি অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করা হয়।
লকডাউনের মধ্যেও অনেকে যে-ভাবে বাজারে বাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, তাতে শিউরে উঠছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা। এ রাজ্যে আক্রান্তের সূচক এখন ঊর্ধ্বমুখী। এই পরিস্থিতিতে লকডাউন মেনে চলা ছাড়া কোনও উপায় নেই বলে মত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। নিজের অভিজ্ঞতার নিরিখে রাজ্যবাসীর উদ্দেশে ওই তরুণী একই পরামর্শ দেন। তাঁর কথায়, ‘‘এই ভাইরাস এক জনের শরীর থেকে অন্যের শরীরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে ভাবছেন, আমার পরিবারের তো কারও হয়নি! কিন্তু বাইরে থেকে কখন আপনার ঘরে এই ভয়াবহ ভাইরাস ঢুকে পড়বে, আপনি সেটা বুঝতেও পারবেন না।’’
তরুণী জানান, স্কটল্যান্ড থেকে তিনি যখন দেশে ফেরেন, সেই সময় সে-দেশে ভাইরাসের দাপট এত ছিল না। এখন ছবিটা বদলে গিয়েছে। তরুণীর অনুমান, ‘লন্ডনে হিথরো বিমানবন্দরে প্রচুর যাত্রীর ভিড় ছিল। সেই ভিড়ে মাস্ক পরেও নিজেকে রক্ষা করতে পারেননি তিনি। তরুণীর কথায়, ‘‘বিমানবন্দরে বোর্ডিংয়ের জন্য লাইনে দাঁড়ানো, এক জায়গায় অনেক ক্ষণ অপেক্ষা করা— এ-সব থেকে কোনও ভাবে ওই ভাইরাসের সংস্পর্শে চলে এসেছিলাম।’’ মুম্বইয়ে নামার পরে তরুণীর জ্বরের উপসর্গ শুরু হয়। তার পরবর্তী ঘটনাক্রম এত দিনে সকলেরই জানা হয়ে গিয়েছে।
আইডি তথা রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের চিকিৎসা পরিষেবার প্রশংসা করেছেন তরুণী। তিনি বলেন, ‘‘প্রথমে খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু আইডি-র চিকিৎসক, স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরা প্রতিদিন ফোন করে উৎসাহ দিয়েছেন। তাঁদের আশ্বাসেই অর্ধেক সুস্থ হয়ে গিয়েছিলাম। এই রোগে এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের এখানে অনেক ভাল চিকিৎসা হচ্ছে।’’
আইডি-র করোনা-বিশেষজ্ঞ এক চিকিৎসক জানান, তিন জনকে ১৪ দিন হোম কোয়রান্টিনে থাকতে বলা হয়েছে। দ্বিতীয় আক্রান্তের বাবার মাঝেমধ্যে জ্বর আসছে। তাই তাঁকে প্রয়োজনে মেডিসিনের চিকিৎসককে দেখানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।