প্রতীকী ছবি।
রাজ্যের করোনা মানচিত্রে ঢুকে পড়ল হুগলির শেওড়াফুলি। এখানের ৫৯ বছরের এক প্রৌঢ় করোনায় আক্রান্ত হয়ে শনিবার থেকে সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর সংস্পর্শে যাঁরা এসেছিলেন, তাঁদের মধ্যে আপাতত এক চিকিৎসক-সহ বেশ কয়েকজনকে জেলার দু’টি হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। সকলেরই লালারসের নমুনা পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছে।
ওই প্রৌঢ় একটি বেসরকারি ইস্পাত কারখানার দুর্গাপুরের সগড়ভাঙা ইউনিটে সহকারী জেনারেল ম্যানেজার পদে কর্মরত ছিলেন। অবসর নিলেও সংস্থা তাঁকে কলকাতায় কর্পোরেট অফিসে পুনর্বহাল করে। অফিসের কাজেই সম্প্রতি তিনি দুর্গাপুর যান। প্রৌঢ়ের ভাই বলেন, ‘‘রবিবার রাতে হাসপাতাল থেকে জানানো হয়, দাদার করোনা রিপোর্ট পজ়িটিভ। দাদা বিদেশে বা অন্য রাজ্যে যাননি। কোথা থেকে সংক্রমণ হল বুঝতে পারছি না।’’
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, যাঁরা ওই প্রৌঢ়ের সরাসরি সংস্পর্শে এসেছিলেন, তাঁদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। বাড়িতে প্রৌঢ়ের স্ত্রী এবং কলেজ-পড়ুয়া ছেলে আছেন। প্রৌঢ়ের ভাই, তাঁর স্ত্রী এবং তাঁদের ৮ বছর ও ৯ মাসের দুই ছেলেও একই সঙ্গে থাকেন। তাঁদের প্রত্যেককে এবং প্রৌঢ়ের দুই গাড়ি-চালক, এক চালকের বাবা-মা, দুই পরিচারিকা এবং তাঁদের একজনের স্বামীকে সোমবার শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে এনে রাখা হয়।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুরে প্রৌঢ়ের মা থাকেন। ১৫ মার্চ প্রৌঢ় নিজের গাড়িতে চালককে নিয়ে সেখানে যান। সে দিনই ফিরে আসেন। রাতে তাঁর জ্বর আসে। মথুরাপুরে ওই বৃদ্ধার কাছে আছেন তাঁর প্রৌঢ়া মেয়ে এবং বছর কুড়ির নাতনি। ওই তিন জন এবং ওই বাড়ির পরিচারিকাকে ‘হোম কোয়রান্টিনে’ থাকার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। আক্রান্তের মা-বোন এবং বোনঝির এ দিন স্বাস্থ্য পরীক্ষাও হয়। হুগলির মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আক্রান্তের সংস্পর্শে যাঁরা এসেছিলেন, তাঁদের শারীরিক পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে এসে পৌঁছলে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।’’
ওই পরিবার সূত্রে খবর, ১৩ মার্চ ভোরে ব্ল্যাক ডায়মন্ড এক্সপ্রেসে প্রৌঢ় দুর্গাপুরে যান। সংস্থার দুর্গাপুর এবং বড়জোড়ার দুই কারখানাতেই গিয়েছিলেন। রাতে ছিলেন দুর্গাপুরের একটি হোটেলে। পরের দিন ব্ল্যাক ডায়মন্ডেই ফেরেন।
১৫ মার্চ রাতে জ্বর আসায় প্রৌঢ় পরের দিন হিন্দমোটরে পারিবারিক চিকিৎসকের কাছে যান। কিন্তু ওষুধেও জ্বর না-কমায় প্রৌঢ়কে গত মঙ্গলবার চন্দননগরের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। পরীক্ষায় বুকে এবং প্রস্রাবে সংক্রমণ ধরা পড়ে। শনিবার প্রৌঢ়কে সল্টলেকের হাসপাতালে নিয়ে যান পরিজনরা। নার্সিংহোমের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক রয়েছেন ইমামবাড়া হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে।
প্রৌঢ়ের সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, দুই কারখানায় তাঁর সংস্পর্শে আসা ১৫ জনের নাম স্বাস্থ্য দফতরকে জানানো হয়েছে। সকলকে হোম কোয়রান্টিনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।