ছবি-এএফপি।
গোটা দেশে করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা এখনও নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু সংক্রমণের গতির নিরিখে গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী। এই পরিস্থিতিতে লকডাউন ব্যবস্থা সার্বিক ভাবে সফল করার ডাক দিলেন চিকিৎসকেরা। ইতিমধ্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেছে রাজ্য সরকার। মঙ্গলবার সেই কমিটি পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে জানিয়ে দেয়, এখনও যদি সকলে সতর্ক না-হন, পরিণতি হবে মারাত্মক। ইতিমধ্যেই রাজ্যে দেড় লক্ষের বেশি মানুষকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
আপাতত ১৪ এপ্রিল মাঝরাত পর্যন্ত গোটা দেশে লকডাউন চলবে। এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশিকা অনুসরণ করছে বাংলাও। তার মধ্যেই সাধারণ মানুষের সুরাহায় জরুরি কয়েকটি পরিষেবায় ছাড় দিয়েছে রাজ্য সরকার। তার পরেও জেলায় জেলায় কিছু মানুষ সচেতন ভাবে পদক্ষেপ করছেন না। কিছু ক্ষেত্রে উপেক্ষিত হচ্ছে অবশ্যমান্য বিধিনিষেধ। সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে নিজেকে অন্যের থেকে সরিয়ে রাখার বিষয়টি ফের স্মরণ করিয়ে দিলেন চিকিৎসকেরা। চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘করোনার তৃতীয় পর্যায়ে এখনও পৌঁছইনি আমরা। এখন চূড়ান্ত সাবধানতাই একমাত্র পথ। তার জন্য লকডাউন ব্যবস্থা সার্বিক ভাবে সফল করা দরকার। এই ব্যাধি কমিউনিটিতে এক বার ছড়িয়ে পড়লে ফল হবে মারাত্মক।’’
চিকিৎসক সৌমিত্র ঘোষের ব্যাখ্যা, উন্নত দেশগুলি করোনা-দাপটে কার্যত হার মানছে। তুলনায় পশ্চিমবঙ্গ-সহ ভারত অনেক ভাল অবস্থায় রয়েছে। এই সংক্রমণ জল, খাবার বা বাতাসের মাধ্যমে হয় না। একমাত্র মানুষের থেকে মানুষের শরীরে তা ছড়িয়ে পড়ে। ‘‘লকডাউন সফল করতে না-পারলে চিকিৎসা ব্যবস্থা যত আধুনিকই হোক না কেন, হার মানতে বাধ্য,’’ বলেন সৌমিত্রবাবু।
রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী জানান, দেড় লক্ষের কিছু বেশি মানুষকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। ফোনের মাধ্যমে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। নজরদারিতে সহযোগিতা করছেন আশা-কর্মীরাও। এলাকাভিত্তিক ফিভার ক্লিনিক তৈরি করছে সরকার। তার মাধ্যমে চিকিৎসা করা হবে। তাঁর কথায়, ‘‘রাজ্যে ২৭ জন করোনা-আক্রান্তের মধ্যে ১২ জনেরই ক্লোজ় কনট্যাক্টের প্রমাণ রয়েছে। ফলে এই তথ্যটা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা উচিত সকলেরই।’’
সোমবার করোনা-পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চিকিৎসক কমিটির কাছে করোনা প্রতিরোধের ব্যাপারে পরামর্শ চান। প্রত্যেক চিকিৎসক-সদস্যই তাঁকে জানান, এই পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত না-হয়ে চূড়ান্ত ভাবে সচেতন থাকা উচিত সাধারণ মানুষের। একই সঙ্গে সরকার নির্ধারিত নীতিনিয়ম আমজনতা যাতে মেনে চলে, সেই আবেদনও জানান সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। সাধারণ মানুষের কাছে সেই তথ্যগুলি তুলে ধরার আবেদন জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পরেই এ দিন পর্যালোচনায় বসে চিকিৎসক কমিটি। তার পরেই হুঁশিয়ারি।