নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক থেকে পাওয়া
করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় মহামারী আইন (এনডেমিক ডিজিজেস অ্যাক্ট) লাগু করল রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করোনাভাইরাস নিয়ে সোমবার নবান্নে পর্যালোচনা বৈঠক করেন। সেই বৈঠক শেষে তিনি জানান, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্যই এই আইন লাগু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে রাজ্যের সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য। একই ভাবে রাজ্যের সমস্ত প্রেক্ষাগৃহ, অডিটোরিয়াম, স্টেডিয়াম এবং রিয়েলিটি শো আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ রাখার কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এর আগে রাজ্যের সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। গত শনিবারের ওই নির্দেশ জারির পর মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ৩০ মার্চ একটি পর্যালোচনা বৈঠক হবে। তার পরেই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে। কিন্তু এ দিন তিনি নবান্নে বৈঠকে বসেন। সেই বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা সবাইকে অনুরোধ করছি, আতঙ্কিত না হতে। কিন্তু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবেই কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” তিনি এ দিন আমেরিকা, ইটালি, ইরান এবং স্পেনের পরিসংখ্যান দিয়ে বলেন, ‘‘প্রতিটি দেশেই দেখা যাচ্ছে তৃতীয় সপ্তাহ থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। ইটালিতে প্রথম সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২। দ্বিতীয় সপ্তাহে বেড়ে হয় ১৫২। সেই সংখ্যাই পঞ্চম সপ্তাহে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১ হাজারের বেশি। তাই আত্মসন্তুষ্টির কোনও জায়গা নেই। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।” একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘এখনও রাজ্যে ২টি জায়গায় করোনাভাইরাস পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। আমরা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রককে অনুরোধ করছি আরও কয়েকটি জায়গায় পরীক্ষার বন্দোবস্ত করতে।”
রাজ্যে করোনারভাইরাস প্রতিরোধের জন্য ২০০ কোটি টাকার তহবিল গড়ার কথাও অ দিন জানিয়েছেন মমুখ্যমন্ত্রী। স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তার জন্য ২ লাখ পিপিই (পার্সোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট)-র পাশাপাশি কেনা হচ্ছে ২ লাখ মাস্ক। মমতা এ দিন বলেন, ‘‘২ লাখ এন-৯৫ মাস্কেরও বরাত দেওয়া হয়েছে। কেনা হচ্ছে আরও থার্মাল গানও।” মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের মোকাবিলার কাজে যুক্ত থাকা সমস্ত কর্মী, যাঁরা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন, সেই সমস্ত সাফাইকর্মী, আশা কর্মী এবং পুলিশকর্মীর জন্য পাঁচ লাখ টাকার বিমা করিয়ে দেবে সরকার।
আরও পড়ুন: দেশে আক্রান্ত ১১৪, বিধানসভা স্থগিত মধ্যপ্রদেশে : করোনা আপডেট এক নজরে
রাজ্যের সমস্ত আইসিডিএস কেন্দ্রও আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে, ওই প্রকল্পে নথিভুক্ত শিশুদের জন্য চাল এবং আলু বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মমতা। তিনি চা বাগান, শপিং মলের কর্মীদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘আমরা মালিকদের অনুরোধ করছি কর্মীদের স্বাস্থ্যের সুরক্ষার জন্য ব্যবস্থা নিতে।” এরই পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী এ দিন সমস্ত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলিকেও অনুরোধ করেছেন, বেশি মানুষ যাতে এক জায়গায় জমা হতে না পারেন সে জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে।
আরও পড়ুন: টালিগঞ্জে শুটিং বন্ধ নিয়ে প্রযোজকদের আজকের বৈঠক বাতিল
‘এপিডেমিক ডিজিজেস অ্যাক্ট ১৮৯৭’ বা মহামারী আইন প্রথম লাগু করা হয় ব্রিটিশ ভারতের বম্বে প্রদেশে। সে রাজ্যে তখন প্লেগ ছড়িয়ে পড়েছে। এর পর স্বাধীন ভারতে বিভিন্ন সময়ে কলেরা, প্লেগের মতো সংক্রামক রোগের মোকাবিলায় বিভিন্ন রাজ্য সরকার এই আইন লাগু করেছে। ২০১৫ সালে গুজরাতেও কলেরা রুখতে এই আইন কার্যকর করা হয়। এই আইনের বলে রাজ্য বাস, ট্রেন, শপিং মল বা যে কোনও জায়গায় সংশ্লিষ্ট রোগে কেউ আক্রান্ত রয়েছেন কি না তা জানতে শারীরিক পরীক্ষা করাতে পারে। এই আইন অনুযায়ী, সরকার প্রয়োজনে কোনও ব্যক্তিকে চিকিৎসার জন্য আইসোলেশনে রাখতে পারে। ভর্তি করতে পারে হাসপাতালে। মুখ্যমন্ত্রীও এ দিন বলেন, ‘‘চিকিৎসার মাঝপথে কেউ যাতে পালিয়ে যেতে না পারেন বা চিকিৎসায় অসহযোগিতা না করতে পারেন তার জন্যই এই আইন লাগু করা হল।’’