Coronavirus

লকডাউন না মানলে প্রয়োজনে কার্ফু জারি করার পরামর্শ রাজ্যকে

সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারগুলিকে বলা হয়েছে পরিস্থিতির দ্রুত পর্যালোচনা করতে। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২০ ১৪:২৩
Share:

কালীঘাট এলাকার একটি বাজারে মঙ্গলবার সকালে ভিড়। নিজস্ব চিত্র।

লকডাউনের পরেও যদি মানুষের রাস্তায় নামার প্রবণতা না কমে, তা হলে প্রয়োজনে কার্ফু জারি করার পরামর্শ দিল কেন্দ্র। গোটা দেশে ইতিমধ্যেই ৫৪৮টি জেলায় সম্পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। আংশিক ভাবে করা হয়েছে আরও ৫৮টি জেলায়। কিন্তু তার পরেও অনেক জায়গা থেকেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে রিপোর্ট গিয়েছে যে, মানুষ লকডাউন অমান্য করে রাস্তায় নামছে। সেই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে, রাজ্য সরকারগুলিকে প্রয়োজনে কার্ফু জারি করার নির্দেশ দিল কেন্দ্র। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারগুলিকে বলা হয়েছে পরিস্থিতির দ্রুত পর্যালোচনা করতে। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে।

Advertisement

লকডাউনের পর প্রথম সকালে কলকাতা শহরেও দেখা গেল মিশ্র ছবি। রাস্তাঘাটে যানবাহন কমে গিয়েছে। দোকানপাট বন্ধ। কিন্তু অন্য ছবিও দেখা গেল শহরের বিভিন্ন অংশে।

চোখে মুখে আতঙ্ক নিয়ে ভোর থেকে রাস্তায় নেমে পড়েছেন অনেকে। দোকান-বাজার খোলার আগে থেকেই লাইন দিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের ভয় এই লকডাউনের বাজারে মালপত্র পাওয়া যাবে না। যদিও মাছ-সব্জি-সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সমস্ত পণ্য এই লকডাউনের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে, তা-ও গোটা রাজ্যেই দেখা দিয়েছে জিনিসপত্র কেনার এ রকম ভিড়। আর সেই ছবি দেখেই আশঙ্কা বাড়ছে রাজ্যের স্বাস্থ্য কর্তাদের মধ্যে।

Advertisement

শ্যামবাজারে একটি ওষুধের দোকানে লম্বা লাইন। নিজস্ব চিত্র।

যেমন, কয়েকশো মানুষের লম্বা লাইন দেখা গেল শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে একটি ওষুধের দোকানে। সবাই গায়ে গায়ে দাঁড়িয়ে। এক জন বলেন, ‘‘দোকান খোলার আগে থেকেই দাঁড়িয়ে আছি লাইনে।” ওই ওষুধের দোকানের এক কর্মী অভিযোগ করেন, ‘‘আমরা বলেছি, দোকান খোলা থাকবে তা-ও মানুষ ভিড় করে রয়েছেন। তাঁদের বলছি একটু দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়াতে। তা-ও মানছেন না তাঁরা।” পাঁচ মাথার মোড়ে কর্তব্যরত এক পুলিশ অফিসারও বলেন, ‘‘অনেক বার বলা হয়েছে, আপনারা একটু দূরে দূরে দাঁড়ান। কেউ কথা শুনছেন না।”

দক্ষিণ কলকাতায় কালীঘাট এলাকাতেও সকাল ন’টা নাগাদ দেখা গেল মাছ-সব্জির বাজারে উপছে পড়া ভিড়। একই রকম ভিড় মুদি দোকানেও। জিনিস কেনা নিয়ে রীতিমতো ধস্তাধস্তি চলছে ক্রেতাদের মধ্যে। কে আগে এসেছেন, তা নিয়ে চলছে বচসা। এই ছবি শুধু শ্যামবাজার বা কালীঘাটের নয়, কলকাতা শহরের বিভিন্ন প্রান্তেই লকডাউনের পর প্রথম সকালে এ রকমই ছবি দেখা গিয়েছে।

আরও পড়ুন: লকডাউনের প্রথম সকালে কলকাতা প্রায় জনশূন্য, গ্রেফতার ২৫৫

আরও পড়ুন: মাস্ক প্রয়োজনীয় নয়, বরং এর থেকে বাড়়ছে বিপদ, বলছেন বিশেষজ্ঞরা

লকডাউনের মূল উদ্দেশ্যই হল, যাতে মানুষ একে অন্যের সংস্পর্শে আসতে না পারেন এবং কোভিড-১৯-র সংক্রমণের গতি মন্থর করা যায়। কলকাতা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘এ ভাবে যদি মানুষ জমায়েত করেন তা হলে তো মূল উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হয়ে যাবে।” মঙ্গলবার সকাল থেকেই কলকাতা-সহ গোটা রাজ্যে দেখা গিয়েছে পুলিশ ক়়ড়া হাতে পরিস্থিতির মোকাবিলা করছে। অযথা কাউকে রাস্তায় ঘুরতে দেখলেই তাঁকে সতর্ক করে বাড়ি পাঠাচ্ছেন পুলিশ কর্মীরা।

মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্নে বলেন,‘‘ দৈনন্দিন জীবনে যাতে অসুবিধা না হয় তার জন্যই অত্যাবশ্যকীয় জিনিস পত্রের দোকান খোলা রাখা হয়েছে। কিন্তু এ ভাবে গাদাগাদি করে ভিড় করে দোকান বাজারে গেলে তো এক জন থেকে ভাইরাস লাখো মানুষের মধ্যে ছড়াবে। আপনারা দোকান বাজার করুন। কিন্তু অযথা ভিড় করবেন না।”

বড় রাস্তা নয়, কলকাতা শহর এবং শহরতলির অনেক জায়গায় দেখা গেল, পুলিশকর্মীরা মোটর বাইক নিয়ে টহল দিচ্ছেন পাড়ার মধ্যেই। কোথাও কোনও জটলা দেখলে বাসিন্দাদের বাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছেন। কলকাতা শহরে যানবাহন অনেকটাই কমে গেলেও, শহরতলির পাড়ায় পাড়ায় মানুষের বাড়ি থেকে অপ্রয়োজনে বের হওয়া লকডাউনের প্রথম দিনেও বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। জেলায় জেলায় একই ছবি। জলপাইগুড়ি শহরে সকাল থেকে প্রশাসনের তরফ থেকে মাইকে ঘোষণা করা হয় যাতে মানুষ অযথা রাস্তায় না বেরোন। তার পরও জটলা করে থাকায় পুলিশ মৃদু লাঠি চার্জ করেছে বলে অভিযোগ। জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা বলেন, ‘‘অনেক জায়গাতেই পুলিশকে তাড়া করে লোকজনকে ঘরে ঢোকাতে হয়েছে।”

সূত্রের খবর, কার্ফু জারি হলে ‘পাশ’ ছাড়া রাস্তায় নামতে পারবেন না কেউ। লকডাউনকে আরও কড়া ভাবে বলবৎ করা সম্ভব হবে। দোকান বাজারের ভিড়ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে প্রশাসন। রাজ্য পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘মানুষকে পরিস্থিতির সঙ্গে মানাতে কিছুটা সময় দেওয়া হচ্ছে। আশা করছি মঙ্গলবার সন্ধ্যার মধ্যে প্রায় সবাই বাড়িতে থাকবেন। তা ছাড়া বাজারে যাতে কোনও জিনিসের আকাল না হয় তার জন্য বেআইনি মজুতদারদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement