দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্য এই রাষ্ট্রবিজ্ঞান বইয়ের লেখা নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। —নিজস্ব চিত্র।
বইটিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তথ্যগত ভুল আছে, এই অভিযোগে বিতর্ক শুরু হয়েছিল শুক্রবার। শনিবারও কয়েকটি সরকারি বিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণিতে পাঠ্য সেই রাষ্ট্রবিজ্ঞান বইয়ের আরও কিছু তথ্য নিয়ে প্রশ্ন তুললেন শিক্ষাবিদ ও আইনজ্ঞেরা। সব শুনে সংশ্লিষ্ট প্রকাশনীর বক্তব্য, বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখবে।
সম্প্রতি বিচারপতি নিয়োগে জাতীয় বিচারবিভাগীয় নিয়োগ কমিশন গড়তে চেয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। তা বাতিল করে দু’দশকের পুরনো কলেজিয়াম ব্যবস্থাকেই বহাল রাখার কথা ঘোষণা করেছে সুপ্রিম কোর্ট। পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ অনুমোদিত দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ওই বইটিতে কিন্তু লেখা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের নিয়োগ করা হয়। বইতে কলেজিয়ামের কোনও উল্লেখই নেই। রাজ্যের বিভিন্ন জেলার মতো নদিয়া জেলাতেও একাধিক বিদ্যালয়ে দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক হিসেবে ‘রাষ্ট্রবিজ্ঞান রূপরেখা’ নামে বাংলায় লেখা ওই রাষ্ট্রবিজ্ঞান বই পড়ানো হচ্ছে। বইয়ের ২৩৯ নম্বর পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, ‘‘তত্ত্বগত ভাবে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হলেও, বাস্তবে প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশ অনুযায়ী তিনি বিচারপতিদের নিয়োগ করেন।’’ ওই একই পৃষ্ঠায় আরও লেখা, ‘সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের নিয়োগের ব্যাপারে দু’টি প্রথা দীর্ঘদিন ধরে অনুসৃত হয়ে আসছে। এগুলি হল-১) বিচারপতিদের মধ্যে এক জন মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত হবেন। ২) সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণতম বিচারপতিকে রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ করবেন’।
শিক্ষক, আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানান, ওই বইয়ে যা উল্লেখ করা হয়েছে, তা তথ্যগত ভাবে ঠিক নয়। যদিও শিক্ষকদের একাংশের দাবি, বইয়ে দেওয়া তথ্য ভুল হলেও বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ানোর সময় বিচারপতি নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়টি ঠিক ভাবে ব্যাখ্যা করা হয়।
এ প্রসঙ্গে নদিয়ার তারকনগর যমুনা সুন্দরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিলীপকুমার বিশ্বাস বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা থাকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ। সুতরাং বইতে প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশের যে উল্লেখ রয়েছে, তা ঠিক নয়। ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর সময় কলেজিয়ামের বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়।’’ আবার রানাঘাট ভারতী উচ্চ বিদ্যালয় রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক কিশোর জোয়ারদার বলেন, ‘‘ওই প্রকাশনীর বই আমাদের স্কুলেও পড়ানো হয়। বইয়ে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগের সময় এক জনকে বিশেষ সম্প্রদায়ের হওয়ার যে উল্লেখ রয়েছে, তা ঠিক নয়’’ আইনজীবী সুমন রায় বলেন, ‘‘পাঠ্যবইতে এ ধরনের ভুল বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে। প্রকাশনীর উচিত ভুল স্বীকার করে বিজ্ঞপ্তি জারি করা।’’
অভিভাবকদের একাংশের প্রশ্ন, ভুল তথ্যে ভরা বই কী ভাবে অনুমোদন করল পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ? পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি। কোথাও ভুল থাকলে, সংশোধন করা হবে।’’
প্রকাশনীর প্রশাসক সুদর্শন নিয়োগী বলেন, ‘‘বিষয়টি প্রথম জানলাম। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের আমাদের যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলা হবে।’’ প্রকাশনীর সিনিয়র এডিটর জয়দীপ মজুমদার বলেন, ‘‘বিতর্কিত বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে।’’ তবে বইয়ের লেখক নিমাই প্রামাণিক অসুস্থ থাকায় তাঁর প্রতিক্রিয়া মেলেনি।