প্রধান শিক্ষককে হাতকড়া পরানোয় বিতর্ক

দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রকে যৌন নিগ্রহের অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল হাবরার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে। শুক্রবার মাঝরাতে বিরাটির বাড়ি থেকে পুলিশ তুলে নিয়ে আসে তাঁকে। পর দিন, শনিবার বারাসত আদালতে তোলার পথে প্রধান শিক্ষককে হাতকড়া পরানো হয়। যা নিয়ে বিস্মিত আইনজীবী ও শিক্ষক মহলের একাংশ।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

হাবরা শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৮
Share:

হাতকড়া পরানো প্রধান শিক্ষক। নিজস্ব চিত্র

দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রকে যৌন নিগ্রহের অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল হাবরার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে। শুক্রবার মাঝরাতে বিরাটির বাড়ি থেকে পুলিশ তুলে নিয়ে আসে তাঁকে। পর দিন, শনিবার বারাসত আদালতে তোলার পথে প্রধান শিক্ষককে হাতকড়া পরানো হয়। যা নিয়ে বিস্মিত আইনজীবী ও শিক্ষক মহলের একাংশ।

Advertisement

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ বলছে, জঙ্গি বা দাগি অপরাধীদের ক্ষেত্রে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে হাতকড়া পরানো হতে পারে। এ ধরনের কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্র বাদে অন্য কোনও অভিযুক্তকে হাতকড়া পরানো নিষিদ্ধ।

পুলিশকর্তাদেরও বক্তব্য, কোনও অভিযুক্তকে গ্রেফতার করলেই হাতকড়া পরানো যায় না। এক মাত্র জঙ্গি, পুলিশকে মেরে পালিয়ে গিয়েছে এমন অভিযুক্তের ক্ষেত্রে হাতকড়া পরানো যেতে পারে। সে ক্ষেত্রেও পুরো কারণ দর্শিয়ে জেনারেল ডায়েরি করতে হয়। এ নিয়ে আদালত বা মানবাধিকার কমিশনে চ্যালেঞ্জ জানানো হলে তার জুতসই জবাবও তৈরি রাখতে হয় পুলিশকে। হাবরার ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের পূর্ববর্তী অপরাধ, জঙ্গি সংশ্রব কিংবা পুলিশ হেফাজত থেকে পালানোর রেকর্ড নেই। সে ক্ষেত্রে হাতকড়া পরানোর যৌক্তিকতা নেই বলেই মনে করছেন প্রবীণ পুলিশকর্তারা।

Advertisement

এই ঘটনায় মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ও মানবাধিকার কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অশোক গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘অপরাধ যা-ই হোক না কেন, প্রধান শিক্ষক দাগি অপরাধী নন।’’ একই বক্তব্য কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী অরুণাভ ঘোষের। তিনি আরও বলেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে পুলিশের বিরুদ্ধে ওই শিক্ষকের হাইকোর্টের দ্বারস্থ হওয়া উচিত।’’

শিক্ষককে হাতকড়া পরানো নিয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য করেননি উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে দেখছি। তবে সম্পূর্ণ তথ্য আমার কাছে এখনও আসেনি।’’

কিন্তু কেন গ্রেফতার করা হয়েছিল ওই প্রধান শিক্ষককে?

ঘটনাটি গত ২৪ অক্টোবরের। সে সময়ে স্কুলে পুজোর ছুটি চলছিল। তবে অফিসে আসতেন প্রধান শিক্ষক। তাঁর কাছে কিছু কাগজপত্র সই করাতে গিয়েছিল দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্র। অভিযোগ, স্কুলের একটি ঘরে ছেলেটিকে নিয়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষক তাকে যৌন হেনস্থা করেন।

২ নভেম্বর স্কুল খুললে পরিচালন কমিটির দ্বারস্থ হয় ছেলেটির পরিবার। কমিটি বৈঠকে বসে। পরে তারা যোগাযোগ করে পুলিশের সঙ্গে। পরিচালন কমিটির সম্পাদক বলরাম পাল বলেন, ‘‘ঘটনার সময়ে স্কুলে অন্য কেউ ছিলেন না। ফলে ঘটনার সত্যাসত্য পরীক্ষা করার মতো পরিস্থিতি না থাকায় আমরা স্কুল শিক্ষা দফতরে বিষয়টি জানানোর সিদ্ধান্ত নিই। তার আগেই অবশ্য ছেলেটির পরিবার পুলিশের দ্বারস্থ হয়।’’ শুক্রবার অভিযোগ দায়ের হয় হাবরা থানায়। ওই রাতেই বিরাটির বাড়ি থেকে গ্রেফতার হন প্রধান শিক্ষক।

পুলিশ জানিয়েছে, পকসো আইনে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। শনিবার বারাসত আদালতের বিচারক প্রধান শিক্ষককে চার দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

অভিযোগের সত্যাসত্য বিচার করবে আদালত। কিন্তু প্রধান শিক্ষককে হাতকড়া পরানো হল কেন, তা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন। ঘটনাচক্রে ওই প্রধান শিক্ষক সিপিএম প্রভাবিত শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ-র হাবরা জোনাল কমিটির সম্পাদক। সংগঠনের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক সুরঞ্জিত দেব বলেন, ‘‘উনি রাজনৈতিক চক্রান্তের শিকার। শাসক দলের মদতেই এমনটা করা হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, আইন মেনে স্কুল চালাতে চাইছিলেন প্রধান শিক্ষক। যা অনেকের গাত্রদাহের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সে কারণেই ওঁকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হল। শুধু তা-ই নয়, রাতদুপুরে বাড়ি থেকে তুলে এনে হাতকড়া পরিয়ে সামাজিক সম্মান নষ্টেও চেষ্টা হল।’’

রাজনৈতিক চক্রান্তের অভিযোগ অবশ্য মানছেন না তৃণমূল নেতৃত্ব। রবিবার একটি অনুষ্ঠানে হারবায় এসেছিলেন স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তাঁর দাবি, ‘‘অনেক অভিভাবক ওই শিক্ষকের আচরণের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়েছেন আমার কাছে। আমি বলেছি, আইন আইনের পথে চলবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement