ছবি: ফেসবুক।
নাট্য উৎসবের জন্য সরকারি প্রেক্ষাগৃহে চাকদহ নাট্যজনের বুকিং বাতিল ঘিরে বিতর্ক চরমে উঠল। কলকাতার শহিদ মিনারে সংগ্রামী যৌথমঞ্চের ধর্না অবস্থানে নাটক প্রদর্শনের জেরেই কল্যাণী পুরসভা সরকারি প্রেক্ষাগৃহের বুকিং বাতিল করেছে বলে অভিযোগ তুলেছে নাট্যদলটি। কল্যাণী পুরসভা অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের বক্তব্য, সরকারি অনুষ্ঠান থাকার কারণেই চাকদহ নাট্যজনের বুকিং বাতিল করতে হয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করতে চাইছে রাজ্যের তৃণমূল সরকার। পাল্টা শাসকদলের দাবি, এর সঙ্গে তৃণমূলের কোনও যোগ নেই।
আগামী ২৩ থেকে ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত কল্যাণী পুরসভা পরিচালিত ঋত্বিক সদন প্রেক্ষাগৃহে চাকদহ নাট্যজনের ছ’টি নাটক প্রদর্শিত হওয়ার কথা ছিল। নাট্যদলটি জানিয়েছে, ছ’টি নাটকই নাট্যকার দেবেশ চট্টোপাধ্যায় নির্দেশিত। তার মধ্যে উৎপল দত্তের ব্যারিকেডও রয়েছে। কিন্তু বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কল্যাণী পুরসভা মেল করে জানিয়ে দেয়, নাট্য উৎসবের জন্য ঋত্বিক সদন প্রেক্ষাগৃহে তাদের চার দিনের যে বুকিং ছিল, তা বাতিল করা হয়েছে। সরকারি অনুষ্ঠানের জন্যই এই সিদ্ধান্ত। নাট্যদল জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে তারা সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের ধর্না অবস্থানে ‘জগাখিচুড়ি’ নাটকটি প্রদর্শন করেছে। আন্দোলনকারীদের লড়াইয়ে শরিক হতেই ওই নাটকটি করা হয়েছে ধর্না মঞ্চে। তার পর সন্ধ্যায় তপন থিয়েটারেও ওই একই নাটকের প্রদর্শন ছিল। তার মধ্যেই ঋত্বিক সদনের বুকিং বাতিলের মেল আসে। চাকদহ নাট্যজনের অভিযোগ, নিয়োগ দুর্নীতি, ডিএ-সহ নানা বিষয় ছিল ‘জগাখিচুড়ি’তে। ‘প্রতিষ্ঠান বিরোধী’ নাটক করার জন্যই তাদের সরকারের রোষে পড়তে হল। নাট্যদলটি জানিয়েছে, তাদের নাট্য উৎসবের জন্য যাঁরা টিকিট কেটেছিলেন, তাঁদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে।
দেবেশ বলেন, ‘‘আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি আছে। তার মধ্যে শো বাতিল করলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। উইঙ্কেল-টুইঙ্কেল, পশু খামারের মতো শো বাতিল হয়েছিল। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ছাড়া আর কিছু নয়।’’ নাট্যকার কৌশিক সেনও বলেন, ‘‘সংগ্রামী যৌথ মঞ্চে নাট্য প্রদর্শনের কারণে যদি এই শো বাতিল হয়ে থাকে, তবে তা যথেষ্ট নিন্দার।’’ যদিও সব অভিযোগ অস্বীকার করে কল্যাণী পুরসভার চেয়ারম্যান নীলিমেশ রায় বলেন, ‘‘অনুষ্ঠান থাকায় বুকিং বাতিল করা হয়েছে। এর সঙ্গে রাজনীতিকে যুক্ত করা পরিকল্পিত চক্রান্ত ছাড়া আর কিছুই নয়।’’
বিরোধীরা অবশ্য কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সাংস্কৃতিক মঞ্চের উপরে তৃণমূলের হামলা নতুন কিছু নয়। ওরা চায় না সরকারের বিরুদ্ধে কিছু দেখানো হোক। গণতন্ত্রে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করছে তৃণমূল সরকার।’’ পাল্টা তৃণমূল মুখপাত্র শান্তনু সেন বলেন, ‘‘সাহিত্য-সংস্কৃতিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতটা গুরুত্ব দিয়েছেন, রাজ্যের কোনও মুখ্যমন্ত্রী সেই গুরুত্ব এবং সম্মান দেননি। তৃণমূলের বিরুদ্ধে নাটক বন্ধের এই অভিযোগ এক রকম চক্রান্ত।’’