ফাইল ছবি
সিঙ্গুর ন্যানো কারখানার শেড ভাঙার খরচ ঠিকাদারদের মেটানোর ব্যাপারে দু’বছর পরেও সিদ্ধান্ত নিতে পারল না কলকাতা পুরসভা।মঙ্গলবার পুর ভবনে মেয়র পরিষদের বৈঠকে এ নিয়ে প্রস্তাব উঠলেও তার সমাধান সূত্র মেলেনি। বরং রাজ্য নগরোন্নয়ন দফতরের কোর্টে বল ঠেলে দিলেন খোদ মেয়র
শোভন চট্টোপাধ্যায়।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে আদালত সিঙ্গুর ন্যানো কারখানার জমি চাষিদের ফিরিয়ে দেওয়ার রায় দিতেই কাঠামো ভাঙার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তড়িঘড়ি সেই দায়িত্ব
দেওয়া হয় পূর্ত, কেএমডিএ, এইচআরবিসি এবং কলকাতা পুরসভাকে। বাকি তিনটি দফতর সরাসরি রাজ্য সরকারের কাজ করে, ফলে সমস্যা হয়নি তাদের। কিন্তু পুর আইনে আটকাচ্ছে টাকা মেটানোর প্রক্রিয়া। মঙ্গলবারের বৈঠকে বলা হয়েছে, ‘দ্যাট দ্য পেমেন্ট ফর দ্য ডেমোলিশন ওয়ার্ক অ্যান্ড আদার অ্যালায়েড ওয়ার্কস অ্যাট দ্য সিঙ্গুর প্রোজেক্ট সাইট শ্যাল বি পেড ফ্রম দ্য রেভিনিউ ফান্ড অব দ্য কর্পোরেশন আন্ডার বি আই কোড ৮৯৩০/৬০০…’। যেহেতু পুরসভার আয়ের প্রধান উৎস জনগণের কর। তাই পুর এলাকার বাইরে কোনও কাজে পুরবাসীর করের টাকা খরচ করা কতটা যুক্তিসঙ্গত তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। পাশাপাশি বিপুল খরচের পরিমাণও প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
পুর নথি বলছে, সিঙ্গুর ন্যানো কারখানায় শেড ছিল মোট ১০টি। তার মধ্যে কলকাতা পুরসভার উপরে সাতটি শেড ভাঙার দায়িত্ব ছিল। পুরসভার পাঁচটি দফতর, ডি জি সিভিল, ডি জি রোড্স, ডিজি মেকানিক্যাল রোড্স, ডিজি পিপিপি, ডিজি কেইআইআইপি তা ভাঙতে গোটা দশেক ঠিকাদার সংস্থা নিযুক্ত করে। সে কাজে খরচ হয়েছে প্রায় ন’কোটি টাকা। অভিযোগ, ২০১৬ সালের অক্টোবরে
কাজ শেষ হলেও তার বিল পাননি ঠিকাদারেরা। সেই বিল অনুমোদন করতেই মেয়র পরিষদের বৈঠকে প্রস্তাব এসেছিল। কিন্তু ফের অনুমোদন আটকে যায়।
পুরসভা সূত্রের খবর, ওই কারখানা ভেঙে যে লোহা মিলেছে তা বিক্রি করে টাকা মেটানোর প্রস্তাব ওঠে বৈঠকে। যদিও সরকারের অর্থ দফতরের একাধিক অফিসারের কথায়, এ সব ভাবনা অমূলক। এমন কখনও করা যায় না। পুরসভা সূত্রের খবর, এক দিকে পুর আইন। অন্য দিকে, ঠিকাদারদের চাপ। সব মিলিয়ে আতান্তরে পড়েছে পুর প্রশাসন। আপাতত, বল রাজ্য নগরোন্নয়ন দফতরের কোর্টে ঠেলতে চান মেয়র। বৈঠকে সেই ইঙ্গিতই দিয়েছেন তিনি।
বছর দুয়েক আগে যখন কলকাতা পুরসভাকে শেড ভাঙার দায়িত্ব দেওয়া হয়, তখনই পুরসভার অর্থ দফতরের এক পদস্থ অফিসার তাতে সায় দেননি। পুর এলাকার বাইরে কোনও কাজের জন্য এত টাকা খরচ যে আইনানুগ হবে না, তা জানিয়েও দিয়েছিলেন তিনি। এমনকি ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে পদত্যাগ করার কথা জানিয়ে চিঠিও দেন পুর কমিশনারকে। একাধিক মেয়র পারিষদও তখন বলেছিলেন, টাকাটা সরকার দিলেই ভাল হয়।
এই টানাপড়েনের জেরে সব চেয়ে বিপাকে পড়েছেন দশ জন ঠিকাদার। তাঁদের কথায়, ‘‘তখন বলা হয়েছিল, দ্রুত কাজ করে দিলে টাকার কোনও সমস্যা হবে না। দু’বছর হয়ে গেল এখন বলা হচ্ছে, কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি!’’ তাঁরা জানাচ্ছেন, যে ঠিকাদারেরা অন্য তিনটি দফতরের হয়ে কাজ করেছেন, তাঁদের বিল আগেই মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে।