নোটের টুকরো

পাঁচশো-হাজার টাকার নোট বাতিলের ফলে বিপদে পড়েছেন খোরপোষের মামলারত স্বামী পরিত্যক্তারাও। বিচারকের রায়ে খোরপোষের টাকা জমা পড়ে আদালতের ক্যাশ বিভাগে (জুডিশিয়াল ক্যাশ ডিপার্টমেন্টে)। সেখান থেকেই টাকা তোলেন স্বামী পরিত্যক্তরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৭
Share:

বিজয়িনী: চৌরঙ্গিতে এটিএম থেকে বেরিয়ে। শনিবার। ছবি: সুমন বল্লভ ।

বন্ধ খোরপোষ, জামিন পেয়েও মিলছে না মুক্তি

Advertisement

পাঁচশো-হাজার টাকার নোট বাতিলের ফলে বিপদে পড়েছেন খোরপোষের মামলারত স্বামী পরিত্যক্তারাও। বিচারকের রায়ে খোরপোষের টাকা জমা পড়ে আদালতের ক্যাশ বিভাগে (জুডিশিয়াল ক্যাশ ডিপার্টমেন্টে)। সেখান থেকেই টাকা তোলেন স্বামী পরিত্যক্তরা। শনিবার আলিপুর আদালতের আইনজীবি বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই মহিলারা টাকা পাচ্ছেন না। ক্যাশ বিভাগ থেকে বলা হচ্ছে টাকা নেই।’’ সমস্যায় জামিন পাওয়া আসামিরাও। ওই আইনজীবির কথায়, ‘‘বিচারক বন্ড দেওয়ার শর্তে জামিনের নির্দেশ দিচ্ছেন। কিন্তু বন্ডের টাকা জোগাতে পারছেন না অনেক আসামি।’’ এতে তাদের মৌলিক অধিকার খর্ব হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। আলিপুর আদালতের একাধিক আইনজীবীর কথায়, গত তিন দিন ধরে আদালতে স্বামী পরিত্যক্তা মহিলা খোরপোষ পাচ্ছেন না। বিচারাধীনরা জামিন পেয়েও মুক্তি পাননি। বৈশ্বানরবাবু জানান, আলিপুর জেলা জজ একটি সার্কুলারে জানিয়েছেন ৫০০-১০০০ টাকার নোট ব্যবহার করা যাবে না। তাতেই বিপত্তি বেড়েছে। যদিও ব্যাঙ্কশাল কোর্টে পুরনো নোট জমা দিয়েই জামিন পেয়েছেন একাধিক বিচারাধীন।

মাছের দামে ছাড়

Advertisement

বাঘাযতীন বাজারে এক মাছ ব্যবসায়ী খদ্দেরদের কাছ থেকে বাতিল হয়ে যাওয়া ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট নিতে কোনও আপত্তি করছেন না। তবে শনিবার তাঁর ঘোষণা, ১০০ টাকার নোটে মাছের দাম মেটালে প্রতি ১০০ টাকায় ১০ টাকা ছাড় পাবেন খদ্দের। অর্থাৎ ৫০০ টাকার মাছ কিনে কোনও খদ্দের পাঁচটি ১০০ টাকার নোট দিলে তিনি মোট ৫০ টাকা ছাড় পাচ্ছেন। তাঁকে আসলে দিতে হচ্ছে ৪৫০ টাকা। কয়েক জন উৎসাহী খদ্দের ১০০ টাকার নোট দিয়ে মাছ কিনে ছাড় পেলেন। কেউ কেউ আবার ব্যাজার মুখে মন্তব্য করলেন, ‘১০০-র নোটই তো নেই!’ কেউ অবশ্য ১০০-র নোট থাকলেও খরচ করতে নারাজ। বলছেন, দরকার নেই ছাড়ের।

দোকানে ভেদাভেদ

• টালিগঞ্জের অশোকনগর বাজারে খাসির মাংসের দোকানে গোলমাল। দোকানের মালিক কারও কারও কাছ থেকে ৫০০-১০০০-এর নোটে দাম নিচ্ছেন। আবার কাউকে বলছেন, অচল নোট চলবে না। মালিকের বক্তব্য, ‘‘আমার নিয়মিত খদ্দেরদের বা মুখ চেনা লোকজনকে ফেরাচ্ছি না। সব নোট নিচ্ছি। কিন্তু যাঁদের চিনি না, তাঁদের থেকে ৫০০-১০০০-এর নোট নেওয়া সম্ভব নয়।’’ এক পুরনো খদ্দেরের কাছ থেকে হাজারের নোট নিয়ে অন্যদের প্রশ্নের মুখে পড়ে বিক্রেতা বললেন, ‘‘উনি পুরনো খদ্দের। ওঁর কাছে আমার পাওনা আছে অনেক টাকা। ওঁর টাকা না নিলে আমার লোকসান।’’

চুল কেটে বিপত্তি

শনিবার দুপুর। বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটের কাছে একটি পার্লারে চুলদাড়ি কাটলেন এক জন। বিল হল ১০০ টাকা। তা দেখে ওই ব্যক্তি বার করলেন ৫০০ টাকার নোট। দোকানদার ক্ষিপ্ত, ‘‘১০০ টাকা আপনার বিল, আর ৫০০ টাকা দিচ্ছেন?’’ সেই ব্যক্তি মসৃণ গালে হাত বোলাতে বোলাতে বললেন, ‘‘৫০০ টাকার নোট যে আপনি নেবেন না, সেটা আগে বলবেন তো!’’ দোকানদারও নাছোড়, ‘‘সেটা আপনিই আগে বলতে পারতেন।’’ শেষ পর্যন্ত ওই ব্যক্তি অনেক খুঁজে পকেট থেকে ৫০, ২০, ১০ টাকার নোটে ১০০ টাকা দিয়ে তবেই বেরোতে পারলেন পার্লার থেকে।

জার্মান বিস্ময়

স্নাতকোত্তর স্তরের পরীক্ষা শেষ করে দু’মাসের ছুটিতে জার্মানি থেকে ভারতে ঘুরতে এসেছেন দুই বন্ধু হেলেনা ও টনি। বছর চব্বিশ বয়স। কলকাতা সম্পর্কে অনেক কথা শুনে এসেছেন তাঁরা। ‘‘কিন্তু এটা ভাবতে পারিনি, একটা গোটা শহরের মানুষ শুধুই টাকা তোলার লাইনে দাঁড়িয়ে থাকবেন। বৃহস্পতিবার শহরে পা রেখে এমনটাই মনে হয়েছে,’’ হেসে বললেন হেলেনা। টনির কথায়, ‘‘আমরাও ব্যাঙ্কে লাইন দিলাম বাধ্য হয়ে। ঘোরার একটা দিন বাতিল করতে হল।’’

জলের গাড়ি

ব্যাঙ্কের গ্রাহকদের দুর্ভোগ কমাতে উদ্যোগী হল কলকাতা পুরসভা। শনিবার রাতেই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় আঠাশটি এটিএম কাউন্টারের সামনে জলের গাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয় বলে পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে। রবিবার সকালের মধ্যে শহরের বিভিন্ন এলাকার ব্যাঙ্ক এবং এটিএম কাউন্টারের সামনে পানীয় জলের জন্য সাড়ে চারশোটি ট্যাঙ্ক বসানো হবে বলে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় জানান। শোভনবাবু বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা শনিবার রাত থেকেই কিছু ব্যাঙ্ক এবং এটিএমের সামনে পানীয় জলের ট্যাঙ্ক রাখার ব্যবস্থা করেছি। রবিবার সকাল থেকে প্রতিটি এলাকাতেই বিভিন্ন ব্যাঙ্ক বা এটিএমের সামনে এই ব্যবস্থা থাকবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement