আজই পথে সিপিএম

দিল্লির সুরে বেকায়দায় বঙ্গ কংগ্রেস

দিল্লিতে যা-ই হোক, বাংলায় বিধানসভার ভিতরে ও বাইরে সমন্বয় রেখেই চলছিল দুই বিরোধী দল কংগ্রেস এবং সিপিএম। বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার কেলেঙ্কারির খাতা ফের খুলে সিবিআই তৃণমূলের নেতাদের গ্রেফতার শুরু করায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’র তত্ত্বে সুর মিলিয়েছে এআইসিসি। এই পরিস্থিতিতে সারদা ও রোজভ্যালি-কাণ্ডে জড়িত রাঘব বোয়ালদের গ্রেফতারির দাবিতে এ বার একাই পথে নামবে সিপিএম।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:৫৭
Share:

দলীয় মুখপত্রের ৫০ বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও সূর্যকান্ত মিশ্র। মঙ্গলবার প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে। ছবি: সুমন বল্লভ।

দিল্লিতে যা-ই হোক, বাংলায় বিধানসভার ভিতরে ও বাইরে সমন্বয় রেখেই চলছিল দুই বিরোধী দল কংগ্রেস এবং সিপিএম। বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার কেলেঙ্কারির খাতা ফের খুলে সিবিআই তৃণমূলের নেতাদের গ্রেফতার শুরু করায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’র তত্ত্বে সুর মিলিয়েছে এআইসিসি। এই পরিস্থিতিতে সারদা ও রোজভ্যালি-কাণ্ডে জড়িত রাঘব বোয়ালদের গ্রেফতারির দাবিতে এ বার একাই পথে নামবে সিপিএম।

Advertisement

নোট বাতিলের প্রতিবাদে দিল্লিতে তৃণমূল নেত্রীকে সঙ্গে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেছিলেন রাহুল গাঁধী। কিন্তু কলকাতায় এসে দলের সাধারণ সম্পাদক শাকিল আহমেদ বলে গিয়েছিলেন, রাজ্যে তৃণমূল-বিরোধিতায় বাধা থাকবে না। কিন্তু মঙ্গলবার সিবিআই সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করার পরে দিল্লিতে এআইসিসি নেতৃত্ব যে ভাবে মমতার পাশে দাঁড়িয়ে প্রতিহিংসার রাজনীতির কথা বলেছেন, তাতে বিড়ম্বনা বেড়েছে অধীর চৌধুরী-আব্দুল মান্নানদের। পরিস্থিতি আন্দাজ করে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, সূর্যকান্ত মিশ্রেরাও সিপিএমের নেতা-কর্মীদের পরামর্শ দিয়েছেন, আর এক মুহূর্তও বিলম্ব চলবে না!

বিধানসভা ভোটে বিপর্যয়ের পরে এ দিনই প্রথম মুখ খুলেছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। দলীয় মুখপত্রের ৫০ বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে রাজ্যের শাসক পক্ষকে সরাসরি আক্রমণ করে বুদ্ধবাবু বলেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে যে সরকার চলছে, আমরা বলেছি উচ্ছৃঙ্খল সরকার! সমাজবিরোধীদের সরকার! তাদের এক জন আজই গ্রেফতার হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, এটা আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার!’’ মমতার নাম না করেই বুদ্ধবাবুর আক্রমণ, ‘‘কোনও অধিকার নেই কালো টাকা, দুর্নীতি নিয়ে কথা বলার। তোমার বাড়িতে কী আছে, খোঁজ না!’’ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর যুক্তি, সাদা এবং কালো, নীতি ও দুর্নীতির মধ্যে ফারাক খুঁজে নেওয়ার ক্ষমতা মানুষের আছে। পরিস্থিতি এক দিনে বদলাবে না। কিন্তু বামেরা কী কর্মসূচি নিচ্ছে, পথে নেমে কোথায় কীসের প্রতিবাদ করছে, সে সবে নজর রাখছেন মানুষ। নোট বাতিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের কর্মসূচির সঙ্গেই সারদা-নারদায় আসল মাথাদের গ্রেফতারির দাবিতে এবং প্রতারিতদের টাকা ফেরতের দাবিতে আজ, বুধবারই ধর্মতলা থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত মিছিল করবে সিপিএম। তৃণমূল এবং বিজেপি, দু’পক্ষেরই জবাবদিহি চাওয়া হবে মিছিল থেকে। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে প্রদেশ কংগ্রেস স্পষ্ট কোনও কর্মসূচি ঘোষণা করেনি। সারদা-কাণ্ডে সিবিআই তদন্ত চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন মান্নানই। এখন এআইসিসি-র অবস্থানের কারণে এ রাজ্যে চুপ করে বসে পড়া তাঁর পক্ষে আরও কঠিন!

Advertisement

মান্নান এ দিন বলেছেন, ‘‘সিবিআইয়ের পদক্ষেপকে স্বাগত জানাচ্ছি। যা হচ্ছে, আদালতের নির্দেশে হচ্ছে। আমরা আদালতের উপরে আস্থাশীল।’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীরের বক্তব্য, ‘‘দোষীদের গ্রেফতার ও প্রতারিতদের অর্থ ফেরানোর দাবিতে আমরা বার বার পথে নেমেছি। এত দিন কেন দোষীরা গ্রেফতার হয়নি, আমাদের সেটাই প্রশ্ন!’’ এআইসিসি মমতার পাশে দাঁড়িয়েছে, এই প্রেক্ষাপটেও কি তিনি অবস্থানে অনড়? অধীরবাবুর জবাব, ‘‘আমি এআইসিসি-র বিরোধিতা করতে পারব না। প্রদেশ কংগ্রেসের কী অবস্থান, তাই জানালাম।’’

মমতা বলছেন, নোট বাতিল নিয়ে সরব হওয়াতেই এই ধরপাকড়। যদিও মান্নান বলেন, ‘‘তদন্তে দেরির কারণ জানতে চেয়ে পুজোর পরে সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্র ও রাজ্যেকে তীব্র ভৎর্সনা করেছিল। সিবিআইকে দ্রুত তদন্ত করে চার্জশিট পেশের নির্দেশও দেওয়া হয়। এর পরেই সিবিআই সক্রিয় হয়েছে।’’ এরই সঙ্গে প্রতিহিংসার অভিযোগের সূত্রেই অধীর-মান্নানের কটাক্ষ, ‘‘মমতা তা হলে কি এত দিন বিজেপির সঙ্গে রফা করে চলছিলেন! তাই দু’বছর তদন্ত প্রায় থমকে ছিল!’’

সংগঠনকে চাঙ্গা করার সুযোগে তৈরি হওয়ায় আর দেরি করতে চাইছে না সিপিএম। দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের কথায়, ‘‘কিছু দিন আগে উনি (মমতা) আমাদেরও ডেকেছিলেন। আমরা বলেছিলাম, মোদীর বিরুদ্ধে লড়াই আপনার সঙ্গে হয় না। এখন কেন্দ্র কান টেনে মাথা এনে দেখাক!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement