শিবিরে বসে বিমা করাচ্ছেন কিশোর ভাস্কর।—নিজস্ব চিত্র।
আবদার ছিল মিষ্টিমুখ, নইলে মাংস-ভাতের ফিস্ট। বদলে মিলল বিমা। ভোটে জেতার আনন্দে ওয়ার্ডের সব ভোটারকে এমনই উপহার দিচ্ছেন মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় সাত নম্বর ওয়ার্ডে জয়ী কংগ্রেস কাউন্সিলর কিশোর ভাস্কর। বিমার কাগজ হাতে পেয়ে দিনমজুর পরিবারের সায়রা বানু বলেন, ‘‘মনে হচ্ছে, আমার মতো মানুষেরও জীবনের দাম আছে।’’
বেলডাঙা বাজারের সোনাপট্টিতে কিশোরবাবুর সোনার দোকান। রাজনীতির ময়দানে আনকোরা হলেও, কংগ্রেসের হয়ে দাঁড়িয়ে জিতে যান। তারপর থেকেই এলাকার লোকজনের নানা আবদার। পাড়ার লোক মিষ্টিমুখে দাবি করেন, তো দলের কর্মীরা রবিবারে মাংস-ভাতের ভোজ। ‘‘এত লোককে একসঙ্গে খুশি করব কী করে, সেটা বুঝতে পারছিলাম না,’’ বলেন কিশোরবাবু।
তখনই নজরে আসে প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষা বিমার বিজ্ঞাপন। বছরে ১২ টাকা প্রিমিয়াম, দুর্ঘটনার কারণে মৃত্যু হলে ক্ষতিপূরণের অঙ্ক ২ লক্ষ টাকা, বিকলাঙ্গ হলে মিলবে ১ লক্ষ টাকা। দেখেই কিশোরবাবু সিদ্ধান্ত নেন, তাঁর ওয়ার্ডের ১৮-৭০ বছরের ১১১৭ জন ভোটারকে ওই বিমা করিয়ে দেবেন। এবং আগামী পাঁচ বছর তাঁদের হয়ে সেই বিমা তিনিই চালিয়ে দেবেন।
এরপরেই পরিকল্পনা মতো কিশোরবাবু গিয়ে কথা বলেন স্থানীয় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সঙ্গে। ওই ব্যাঙ্কের ম্যানেজার কিশোরবাবুর প্রস্তাবে রাজি হয়ে ৭ নম্বর ওয়ার্ডে এসে শিবিরও করেন।
ব্যাঙ্কের ম্যানেজার শৌভিক সরকার বলেন, ‘‘ইতিমধ্যে ওই ওয়ার্ডের প্রায় ৩৩৭ জন এই বিমার আওতায় এসেছেন। বাকিদের ফর্ম ফিল আপের কাজ চলছে।’’ তিনি জানান, যাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে, তাঁরা ব্যাঙ্কের দেওয়া ফর্ম পূরণ করে জমা দিলেই বিমার সুবিধে পাবেন।
ওয়ার্ডে প্রথম বিমা পেয়েছেন শচীন সাহা। তিনি বলছেন, ‘‘ মিষ্টি খেলে তো তখনই ফুরিয়ে যেত। বিমা করিয়ে দেওয়াতে একটা কাজের কাজ হল। আমার কিছু হলে পরিবার তো কিছুটা হলেও সুরক্ষিত থাকবে। এটা কি কম কথা!’’ পেশায় রাজমিস্ত্রি বদরুদ্দিন শেখ বলছেন, ‘‘রাজমিস্ত্রির কাজ করি। কখন কী হয়ে যায়। না খাইয়ে দাদা যা করে দিলেন তা জীবনেও ভুলব না।’’
কিশোরবাবু তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে সকলের প্রিমিয়ামের টাকা প্রতি বছর কেটে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ব্যাঙ্ককে। যা দেখে পাশের আট নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুস্মিতা ঘোষ দে এবং ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবু সুফিয়ান মণ্ডলও ব্যাঙ্কের সঙ্গে বিমা নিয়ে কথাবার্তা শুরু করেছেন।
কিন্তু সকলের জন্যই এমন ব্যবস্থা কেন? ‘‘প্রচারে অনেক কথা বলেছিলাম। এখন আমার ওয়ার্ডের কথা আমি না ভাবলে কে ভাববে?’’ হাসছেন কিশোরবাবু।