West Bengal News

‘বাংলা’ নয়, ‘পশ্চিমবঙ্গ’ই ভাল: অধীর-বাবুল একসুর, তৃণমূল এখনও নীরব

পশ্চিমবঙ্গ সরকার বা তৃণমূলের তরফে এখনও বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। কিন্তু কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র প্রতিক্রিয়া থেকে স্পষ্ট যে, পশ্চিমবঙ্গের নাম বদলানোর প্রস্তাবে বিজেপি সম্মত নয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৯ ১৭:৫৩
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

রাজ্যের নাম বদল প্রক্রিয়ায় প্রায় একা হয়ে পড়ল তৃণমূল। এ রাজ্যের নাম ‘বাংলা’ করার প্রস্তাবে কেন্দ্রীয় সরকার যে খুব একটা আগ্রহী নয়— সে ইঙ্গিত বুধবার বেশ স্পষ্ট ভাবেই দিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট মন্ত্রক। বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলের মত যা-ই হোক, কংগ্রেস কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকেরই পাশে। পশ্চিমবঙ্গ থেকে নির্বাচিত সাংসদ তথা লোকসভার কংগ্রেস দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ নামে আমাদের কোনও অসুবিধা হচ্ছে না।’’ আর এ রাজ্যের আর এক সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র কথায়, ‘‘আমাদের রাজ্যের নামে ‘পশ্চিম’ শব্দটা থাকা অত্যন্ত জরুরি, এর ঐতিহাসিক তাৎপর্য রয়েছে।’’

Advertisement

রাজ্যের নাম ‘পশ্চিমবঙ্গ’ রাখতে আর রাজি নয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। নাম বদলের প্রস্তাব বাম জমানাতেই ভেসে উঠেছিল ঠিকই। সে সময়ে তৃণমূল নাম বদলের বিরোধী ছিল। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই রাজ্যের নাম বদলে উদ্যোগী হন। নিয়ম মতো পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় নাম বদলের প্রস্তাব তথা নতুন নাম হিসেবে ‘বাংলা’কে বেছে নেওয়ার প্রস্তাব ২০১৬ সালে পাশও করিয়ে নিয়েছেন তিনি। তার পর তা কেন্দ্রের কাছে পাঠানো হয়েছে। এ বার কেন্দ্রকে সংসদে সংবিধান সংশোধন বিল পাশ করিয়ে এই নাম বদলের প্রক্রিয়াটিকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু গত কয়েক বছরে সে পথে এক পা-ও এগোয়নি মোদীর সরকার এবং সে কথা বুধবার সংসদে জানিয়েও দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই।

পশ্চিমবঙ্গ সরকার বা তৃণমূলের তরফে এখনও বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। কিন্তু কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র প্রতিক্রিয়া থেকে স্পষ্ট যে, পশ্চিমবঙ্গের নাম বদলানোর প্রস্তাবে বিজেপি সম্মত নয়। বাবুল আনন্দবাজারকে বলেছেন, ‘‘আমাদের রাজ্যের নামে ‘পশ্চিম’ শব্দটা থাকা খুব জরুরি। ওই শব্দটার সঙ্গে আমাদের ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে। নাম বদলে ‘বাংলা’ করা হলে ঐতিহাসিক তাৎপর্যটাই মুছে যাবে।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: রাজ্যের নাম পাল্টে ‘বাংলা’এখনই নয়, সংবিধান সংশোধনী বিল পেশ হয়নি, জানিয়ে দিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক

আরও পডু়ন: আজও সংসদে ‘কাটমানি’ উত্তাপ, মুখ্যমন্ত্রীর নামে লকেটের বক্তব্যের অংশ বাদ দেওয়ার দাবি তৃণমূলের

এই বাবুল সুপ্রিয় কিন্তু এক সময়ে রাজ্যের নাম বদলে ‘বাংলা’ করার প্রস্তাবের সমর্থক ছিলেন। সে প্রসঙ্গে বাবুল এ দিন বলেছেন, ‘‘তখন যা বলেছিলাম, তা ভুল বলেছিলাম।’’

রাজ্যের নাম বদল নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের অনাগ্রহে কোনও অন্যায় অধীর চৌধুরীও দেখছেন না। বহরমপুরের সাংসদ তথা লোকসভায় বৃহত্তম বিরোধী দলের নেতা অধীর আনন্দবাজারকে বুধবার বলেছেন, ‘‘নামে কী আসে-যায়? নাম দিয়ে কী হবে, কাম (কাজ) দরকার।’’ পশ্চিমবঙ্গের নাম বদলে ‘বাংলা’ করায় অনেক সমস্যাও রয়েছে বলে লোকসভার কংগ্রেস দলনেতা মনে করছেন। তিনি বলেন, ‘‘সীমান্তের ও পাশেই বাংলাদেশ, এ পাশে আবার বাংলা! পাশাপাশি দুটো হয় নাকি? বাংলাদেশেরও অনেকের আপত্তি আছে এটা নিয়ে। তা ছাড়া পশ্চিমবঙ্গ নামে আমাদের অসুবিধা তো কিছু হচ্ছে না। তা হলে নাম বদলানোর দরকারটা কী আমি তো বুঝতে পারছি না।’’

আরও পড়ুন: লোকসভার বিরোধী দলনেতা অধীর চৌধুরীর সম্পর্কে কতটা জানেন?

পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল কিন্তু বিষয়টিকে এত সহজ ভাবে নেবে না। রাজ্য বিধানসভায় নাম বদলের তথা নতুন নামের প্রস্তাব পাশ হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও কেন্দ্র কেন ঝুলিয়ে রেখেছে বিষয়টি, তা নিয়ে তৃণমূলের তরফে একাধিক বার প্রশ্ন তোলা হয়েছে। নাম বদলের প্রক্রিয়া কতটা এগোল, রাজ্যসভায় এই প্রশ্ন যিনি তুলেছিলেন সেই ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় সিপিএম থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পরে নির্দল সাংসদ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন ঠিকই। কিন্তু তিনি যে বর্তমানে তৃণমূল ঘনিষ্ঠ, তা কারও অজানা নয়। তাই অনেকেই মনে করছেন, ঋতব্রতকে দিয়ে প্রশ্নটা তৃণমূলই তুলিয়েছে। প্রশ্নের জবাব পাওয়ার পরে কোনও প্রতিক্রিয়া পশ্চিমবঙ্গ সরকার বা তৃণমূলের তরফে এখনও মেলেনি। তবে প্রতিক্রিয়া কড়া হবে বলেই রাজনৈতিক শিবির মনে করছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement