সবুজ: ভোটের ফল ঘোষণার পরে কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকদের উল্লাস। মঙ্গলবার ধর্মতলায়।ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
রাত পোহালে কলকাতায় কংগ্রেসের সমাবেশ। তার আগের বিকেলে বিধান ভবনের সামনে বাজি ফাটিয়ে উদ্দাম উচ্ছ্বাস কংগ্রেস কর্মীদের। রাতারাতিই রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ের জনসভার নাম হয়ে গিয়েছে ‘বিজয় সমাবেশ’! আবার উচ্ছ্বাসের পথে না গিয়েও বিকাল থেকে জেলা শহরে বিজেপি ও তৃণমূলের বিরোধিতায় মিছিল শুরু করে দিয়েছে সিপিএম।
সাম্প্রতিক কালে রাজ্য রাজনীতির বিরোধী পরিসরে দ্রুত উঠে এসেছে বিজেপি। কিন্তু হিন্দি বলয়ের তিন রাজ্যে গেরুয়া শিবিরের বিপর্যয়ের জেরে লোকসভা ভোটের আগে রাজ্যে আবার তেড়েফুঁড়ে নামার রসদ পাচ্ছে কংগ্রেস এবং সিপিএম। যদিও তৃণমূল এই ফলের বাড়তি কোনও তাৎপর্য বঙ্গের রাজনীতিতে দেখতে পাচ্ছে না। তাদের বক্তব্য, বিরোধীদের সম্মিলিত শক্তির বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই তারা লড়ে জিতেছে। ভবিষ্যতে আবার একই লড়াই হবে। পক্ষান্তরে কংগ্রেস এবং সিপিএম নেতৃত্ব মঙ্গলবার ফের দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, বিজেপিকে বেকায়দায় পেয়ে তাদের হারাতে লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের সঙ্গে তাঁদের সমঝোতার সম্ভাবনা নেই।
সমাবেশের আগের দিনই প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে ডাক দিয়েছেন, তিন রাজ্যের দৃষ্টান্ত মাথায় রেখে দলের জন্য আরও উৎসাহ নিয়ে পরিশ্রম করুন। প্রদেশ সভাপতি সোমেন মিত্রের মতে, ‘‘বাংলায় যেটাকে বিজেপির উত্থান বলা হচ্ছে, সেটা আসলে তৃণমূলের প্রতি ক্ষোভের প্রতিফলন। বামফ্রন্ট দুর্বল হয়েছে, কংগ্রেসও বিকল্প হতে পারেনি। তাই বিজেপি নিজেদের বিরোধী শক্তি হিসেবে তুলে ধরেছে। কিন্তু বাংলায় বিজেপির শক্ত মাটি নেই। এই ফলের পরে কংগ্রেসকে নিয়ে বাংলার মানুষেরও উৎসাহ বাড়বে।’’ বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের বক্তব্য, ‘‘সংখ্যালঘু ও অনগ্রসর সম্প্রদায়ের মানুষের উপরে বিজেপি যে আক্রমণ করেছে, তার জবাব তিন রাজ্যে মানুষ দিয়েছেন।’’ কংগ্রেসের দাবি, সংখ্যালঘু মানুষের সমর্থন এ রাজ্যেও তাদের দিকে ফিরবে। সোমেনবাবু আরও মনে করিয়ে দিয়েছেন, বিজেপি এ রাজ্যে ১৯৯১ সালে ১১% ভোট পেলেও কয়েক বছর পরে তা আবার কমে ৪-৫%-এ নেমে এসেছিল।
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘দেশে বিজেপি যে পথে চলেছে, রাজ্যে তৃণমূলও একই পথে। ওরা রথ বার করলে এদের খোল-কীর্তন যাত্রা হয়! বিজেপিকে যে ভাবে মানুষ জবাব দিচ্ছেন, তৃণমূলকেও এক দিন তা-ই দেবেন।’’ বিজেপি ও তৃণমূলকে পরস্পরের ‘পরিপূরক’ বলে অভিযোগ করে সুজনবাবুরা ফের জানিয়েছেন, তাঁরা ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে একজোট করেই চলতে চান।
তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য বলছেন, এ রাজ্যে বিরোধীদের জোটবদ্ধ চেহারাই তাঁরা দেখে আসছেন এবং ভবিষ্যতে সেই সম্ভাবনার জন্যই তাঁরা প্রস্তুত। শাসক দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় মনে করেন, ‘‘এই ফলের বাড়তি কোনও প্রভাব এ রাজ্যে নেই। এখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতায় অন্য সব কথা ভুলে মাঠে নামে বিরোধীরা। তা মাথায় রেখেই এখানে আমরা প্রস্তুত।’’ তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সীরও বক্তব্য, ‘‘সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলিতে রাজ্যে বিরোধীদের জোটবদ্ধ চেহারা দেখেছি। কিন্তু তাতে ওদের কোনও সুবিধা হয়নি।’’