ফাইল চিত্র।
কলকাতার দক্ষিণে-উত্তরে তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ বান্ধবী’র বিভিন্ন ফ্ল্যাট থেকে কুবেরের ধনসম্পত্তি উদ্ধার নিয়ে বাংলা তোলপাড়। আবার দক্ষিণ শহরতলির বারুইপুরে সেই প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়েরই মেয়ে সোহিনীর তালাবন্ধ বাংলোবাড়িতে চুরির চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এলাকাবাসীর একাংশের সন্দেহ, পার্থবাবুর ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণে টাকা ও গয়না উদ্ধার হয়েছে। ওই বাংলো বা বাগানবাড়িতে হয়তো টাকা রাখা হয়েছিল এবং সেই টাকা পাচারের জন্যই সম্ভবত লোক পাঠানো হয়। আর সেটাকেই এখন চুরির চেষ্টা বলে চালানোর চেষ্টা হচ্ছে। ফলে ওটা সাধারণ চোরের কীর্তি, না, টাকা সরানোর চেষ্টা— ধন্দ রয়েছে।
তবে তদন্তকারীদের বক্তব্য, টাকা সরানোর জন্য লোক পাঠানো হয়ে থাকলে তালা খোলা হত। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, দুষ্কৃতীরা ঢুকেছিল পাঁচিল টপকে। এমনও হতে পারে যে, পার্থবাবুর অন্যান্য বাড়ি থেকে টাকা ও গয়না উদ্ধারের খবর শুনে দুষ্কৃতীরা ভেবেছিল, ওই বাগানবাড়িতেও টাকা ও গয়না পাওয়া যেতে পারে এবং তা হাতানোর জন্যই তারা হানা দিয়েছিল। সত্য জানতে গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তদন্তকারীরা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বারুইপুরের বেগমপুর এলাকায় পার্থবাবুর মেয়ে সোহিনী এবং স্থানীয় তৃণমূল নেতা আবু তাহের সর্দারের নামে একটি যৌথ বাগানবাড়ি আছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, বাজারদর অনুযায়ী ওই বাংলো ও সংলগ্ন জমির মূল্য আড়াই থেকে তিন কোটি টাকা। বুধবার রাতে ওই বাড়ির সামনে একটি ছোট গাড়ি দাঁড় করিয়ে কিছু দুষ্কৃতী পাঁচিল টপকে বাড়ির ভিতরে ঢুকেছিল বলে পড়শিদের একাংশের দাবি।
এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘‘গভীর রাতে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম। দেখি, ওই বাগানবাড়ির সামনে একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। গাড়ির মাথায় একটি ছোট মাইক লাগানো। এক জন গাড়িতে বসে ছিলেন। আমি সামনে যেতেই তিনি ধমক দিতে থাকেন। তার পরে বাগানবাড়ি থেকে তিন জন বেরিয়ে আসেন। তখন আশপাশের বাসিন্দারাও বেরিয়ে পড়েন। তা দেখে গাড়ি নিয়ে ওই চার জন চলে যান।’’
বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাস্থলে যান বারুইপুর থানার তদন্তকারী অফিসার। প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে আগন্তুকদের চেহারা ও গাড়ির বিবরণ সংগ্রহ করা হয়। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা ভূমিরাজস্ব দফতর সূত্রের খবর, ওই বাগানবাড়ি আছে তিনটি দাগ নম্বরে প্রায় সাড়ে চার বিঘা জমিতে। ওই জমির অধিকাংশই রয়েছে সোহিনীর নামে। একটি অংশ আবু তাহেরের নামে আছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বছর পাঁচেক আগে ওই জমি কিনে বাংলো তৈরি করা হয়। উঁচু পাঁচিল দেওয়া হয় চার পাশেই। বাড়ির সামনে বড় লোহার গেট। পার্থবাবু বেশ কয়েক বার ওই বাগানবাড়িতে গিয়েছেন। মাঝেমধ্যে তাঁর জামাইকেও ওই বাড়িতে আসতে দেখা যেত। বাড়ি দেখাশোনা করতেন আবু তাহের। তবে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তাঁর কোনও হদিস নেই। ফোন করা হলেও তিনি তা ধরেননি। এসএমএসেরও জবাব দেননি। বাড়িতে গিয়েও পাওয়া যায়নি তাঁকে।