— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
পাঠ্য বইয়ের যে সমস্ত প্রকাশক উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের নতুন পাঠ্যক্রম অনুযায়ী বই তৈরির কাজ করছেন, তাঁদের সেই বইয়ের প্রাথমিক খসড়া আগামী ২২ এপ্রিল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদে জমা দেওয়া শুরু করতে হবে। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ এমনই নির্দেশ দিয়েছে কলেজ স্ট্রিটের পাঠ্য বই প্রকাশকদের। ওই প্রকাশকেরা জানাচ্ছেন, প্রাথমিক খসড়া জমা দেওয়ার পরে সেটির পরিমার্জনের দরকার হলে তা করার পরে ফের উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদকে দেখাতে হবে। তার পরে সেটির চূড়ান্ত অনুমোদন মিললে তবেই ওই বই বাজারে প্রকাশ করার জন্য উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ থেকে টেক্সট বুক নম্বর (টিবি নম্বর) মিলবে।
তবে, পড়ুয়াদের একাংশের আশঙ্কা, তারা কি আদৌ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল বেরোনোর পরপরই নতুন পাঠ্যক্রম অনুযায়ী প্রথম সিমেস্টারের বই বাজার থেকে কিনতে পারবে? যদিও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সচিব প্রিয়দর্শিনী মল্লিকের আশ্বাস, ‘‘আশা করা হচ্ছে, মে মাসের প্রথম সপ্তাহেই নতুন পাঠ্যক্রমের প্রথম সিমেস্টারের বই পড়ুয়াদের হাতে তুলে দেওয়া যাবে। অনেক প্রকাশকই আশ্বাস দিয়েছেন, নির্ধারিত সময়ের আগেই তাঁরা নতুন বই প্রকাশ করতে পারবেন।’’
চলতি বছর থেকে একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে সিমেস্টার পদ্ধতিতে পরীক্ষা হবে। একাদশে দু’টি এবং দ্বাদশে দু’টি করে সিমেস্টার হবে। সিমেস্টার পদ্ধতিতে পরীক্ষার জন্য পাঠ্যক্রমেও অনেক পরিবর্তন করেছে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। ফলে, নতুন করে বই তৈরি করতে হচ্ছে প্রকাশকদের। বাংলা, ইংরেজি, সংস্কৃত-সহ প্রথম ভাষার বইগুলি পড়ুয়াদের দেয় উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। বাকি সমস্ত বই পড়ুয়াদের কিনতে হয় বাজার থেকে। সেই বইগুলি তৈরি করছেন প্রকাশকেরা।
উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ প্রকাশকদের ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে, প্রথম সিমেস্টারের বই আগে প্রকাশ করতে হবে। যাতে মাধ্যমিক পাশ করে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েই পড়ুয়ারা সময়মতো অন্তত প্রথম সিমেস্টারের বই হাতে পেয়ে যায়। বঙ্গীয় প্রকাশক ও পুস্তক বিক্রেতা সভার সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, ‘‘আমাদের লক্ষ্য, মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল বেরোনোর পরেই যেন প্রথম সিমেস্টারের বই পড়ুয়াদের হাতে তুলে দিতে পারি। এর জন্য আর সময় বেশি নেই। তাই এখন রাত-দিন কাজ চলছে।’’ বিশ্বজিৎ জানান, এখন নতুন পাঠ্যক্রম অনুযায়ী প্রথম সিমেস্টারের বই লেখার কাজ করছেন শিক্ষকেরা। তবে, এখন শিক্ষকদের অনেককেই আবার লোকসভা ভোটের কাজের জন্য প্রশিক্ষণ নিতে হচ্ছে। সেই সব ব্যস্ততার ফাঁকেই বই লেখার কাজ করতে হচ্ছে।
পাঠ্য পুস্তক প্রকাশক দেবাঞ্জন মণ্ডল বললেন , ‘‘লেখার পরে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের বিশেষজ্ঞদের কাছে সেই বই যাবে। বিশেষজ্ঞেরা যা যা পরিবর্তন করতে বলবেন, সে সব পরিবর্তন করতে হবে। পরিবর্তিত খসড়া আবার বিশেষজ্ঞদের দেখাতে হবে। তাঁরা যদি ফের কিছু পরিবর্তন করতে বলেন, তা-ও করতে হবে। তার পরে চূড়ান্ত অনুমোদন মিললে তবেই আমরা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের কাছ থেকে টেক্সট বই নম্বর পাব। প্রক্রিয়াটি বেশ লম্বা।’’
আর এক প্রকাশক সুদর্শন নিয়োগী বলেন, ‘‘নতুন পাঠ্যক্রমে পাঠ্য বইয়ের অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। বিশেষ করে, ইতিহাসের পাঠ্যক্রম প্রথমে যা দিয়েছিল উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ, পরে আবার সেটির পরিবর্তন হয়েছে। ফলে লেখকদের আবার নতুন করে লিখতে হচ্ছে। এর জন্য সময় লাগছে।’’ প্রকাশকেরা জানাচ্ছেন, পড়ুয়ারা যখন একাদশ শ্রেণির নতুন পাঠ্য পুস্তক কিনবে, তখন যেন তারা দেখে নেয়, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের টিবি নম্বর দেওয়া বই-ই তারা কিনছে।