Government Hospitals

দেওয়ালে দেওয়ালে নিশানায় ‘স্বাস্থ্যের সিন্ডিকেট’

‘উত্তরবঙ্গ লবি’র চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ, ‘ভয় ও শাসানির সংস্কৃতি’ চালানোর। দাবি, এই ‘লবি’র বিভিন্ন ‘শাখা’ গড়ে উঠেছে রাজ্যের একাধিক মেডিক্যাল কলেজে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৭:৩৩
Share:

স্বাস্থ্য ভবন। —ফাইল চিত্র।

সাধারণ দেওয়াল থেকে সমাজমাধ্যমের ‘ওয়াল’, রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় ‘সিন্ডিকেট’-এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। হচ্ছে লিখিত অভিযোগও।

Advertisement

আর জি কর-কাণ্ডের আবহে কলকাতার একাধিক মেডিক্যাল কলেজ, রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল, রাজ্য স্বাস্থ্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়, হেল‌্থ রিক্রুটমেন্ট বোর্ড এবং স্বাস্থ্য ভবনের দেওয়ালে বিভিন্ন পোস্টার দিয়ে এই সিন্ডিকেটে কারা জড়িত, সেই দাবি করে তাঁদের নাম ও ছবি সাঁটানো হয়েছিল। সরকারি মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়া, চিকিৎসকদের ‘গ্রুপ’-এও কিছু নাম ছড়ানো হয়েছে। অভিযোগের তির মূলত রাজ্য স্বাস্থ্য-প্রশাসনের অন্দরে ‘প্রভাবশালী’ চিকিৎসক-গোষ্ঠী ‘উত্তরবঙ্গ লবি’র বিরুদ্ধে। ‘লবি’র কর্তারা অভিযোগ খণ্ডন করলেও প্রতিবাদ বন্ধ হয়নি।

‘উত্তরবঙ্গ লবি’র চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ, ‘ভয় ও শাসানির সংস্কৃতি’ চালানোর। দাবি, এই ‘লবি’র বিভিন্ন ‘শাখা’ গড়ে উঠেছে রাজ্যের একাধিক মেডিক্যাল কলেজে। অভিযোগ, সে সব ‘শাখা’য় যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা টাকা নিয়ে সরকারি চিকিৎসকদের বদলি, ডাক্তারি-পড়ুয়াদের পাশ করান। তাঁদের বিরুদ্ধে কথা বললে অন্যত্র বদলি করা হয় প্রতিবাদীদের। পরীক্ষায় ফেল করানোর ভয় দেখানো হয় পড়ুয়াদের।

Advertisement

গত কয়েক দিনে সমাজমাধ্যমে ‘বর্ধমান-সিন্ডিকেট’ নিয়ে নানা পোস্টার ছড়িয়েছে। সেগুলিতে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের এক প্রাক্তন অধ্যক্ষ, প্রাক্তন চিকিৎসক, প্রাক্তন ইন্টার্নদের নাম রয়েছে। শুক্রবার চিকিৎসক-পড়ুয়াদের একাংশ বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের প্রশাসনিক ভবনের সামনে ‘শাসানির সংস্কৃতি’ বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ দেখান। কলেজের ভিতরে মিছিল করেন। ‘সিন্ডিকেট’-এর সঙ্গে যুক্ত অভিযোগে তিন প্রাক্তনীকে তাঁরা কলেজ থেকে বার করে দেন বলেও দাবি। শনিবার মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষের কাছে এসএসকেএমের চিকিৎসক-পড়ুয়া অভীক দে, বর্ধমান মেডিক্যালের প্যাথোলজি বিভাগের সিনিয়র রেসিডেন্ট চিকিৎসক বিরূপাক্ষ বিশ্বাস-সহ কয়েক জনের নামে অভিযোগ করেছেন চিকিৎসক-পড়ুয়ারা। অভীকের সঙ্গে শনিবার চেষ্টা করেও ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি। বাড়িতেও দেখা মেলেনি। বিরূপাক্ষের দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে কুৎসা, অপপ্রচার চলছে। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ মৌসুমী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “একটি চিঠি পেয়েছি। খতিয়ে
দেখা হবে।’’

রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ করবী বড়াল ও তাঁর স্বামী, ওই হাসপাতালেরই স্ত্রীরোগ বিভাগের শিক্ষক-চিকিৎসক সুব্রত সামন্তের বিরুদ্ধে সমাজমাধ্যমে একটি ‘পোস্ট’-এ (আনন্দবাজার সত্যতা যাচাই করেনি) দাবি করা হয়েছে, এই ‘সংস্কৃতি’র সঙ্গে যোগ রয়েছে তাঁদেরও। করবী বলেন, ‘‘সমাজমাধ্যমে অনেক কিছুই ঘুরছে।’’ হুমকির অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন। সুব্রত বলেন, ‘‘সে ক্ষমতা আছে না কি যে হুমকি দেব? আমি সামান্য লোক।’’

মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরের দেওয়ালে সম্প্রতি লেখা হয়েছে, ‘অনুপ্রেরণার সিন্ডিকেট নিপাত যাক’। সূত্রের দাবি, এমন দেওয়াল লিখন করেছেন জুনিয়র ডাক্তার এবং পড়ুয়াদের একাংশ। তাঁদের ক্ষোভ, এই ‘সিন্ডিকেট’-এর ছাতার তলায় যাঁরা থাকেন, তাঁরা বাড়তি সুযোগ-সুবিধা পান। তেমন নানা অভিযোগে নাম জড়িয়েছে সেখানকার জুনিয়র ডাক্তার মুস্তাফিজুর রহমান মল্লিকের।বহু চেষ্টা করেও মুস্তাফিজুরের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। বাঁকুড়া মেডিক্যালে জুনিয়র ডাক্তারেরা ‘সিন্ডিকেট’ নিয়ে সমাজ মাধ্যমে সরব হয়েছেন।

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে জরুরি বিভাগের সামনেও কর্মবিরতি করে আন্দোলন করছেন ‘পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনি’ এবং জুনিয়র চিকিৎসকেরা। তার সামনে, স্বাস্থ্য দফতরের প্রচার হোর্ডিংয়ের বোর্ডের পিছনে রং দিয়ে লেখা হয়েছে ‘স্টপ থ্রেট কালচার’।

কোচবিহার মেডিক্যালের চিকিৎসকদের একাংশের দাবি, ‘উত্তরবঙ্গ লবি’র হাত ছিল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সদ্য প্রাক্তন ‘এমএসভিপি’ (মেডিক্যাল সুপার তথা সহকারী অধ্যক্ষ) রাজীব প্রসাদের মাথায়। তাঁর বিরুদ্ধে পাঁচ মাস আগে, একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ তোলায় বদলি হতে হয় এক চিকিৎসককে। রাজীব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তবে শনিবার নতুন ‘এমএসভিপি’ সৌরদীপ রায়ের আশ্বাস, ‘‘যদি অভিযোগ খতিয়ে দেখতে হয়,
দেখা হবে।’’

‘উত্তরবঙ্গ লবি’র অন্যতম শীর্ষ কর্তা বলে রাজ্য স্বাস্থ্য-প্রশাসনের অন্দরে পরিচিত জলপাইগুড়ির চক্ষু বিশেষজ্ঞ সুশান্ত রায় বলেন, ‘‘থ্রেট কালচার-এর কথা এখন হঠাৎ করে বলা হচ্ছে অন্য দিকে নজর ঘোরানোর জন্য। আর জি কর-কাণ্ডের বিচার
চাই। এটাই মূল। অন্য দিকে নজর ঘোরানোর চেষ্টা হচ্ছে কেন?’’ ‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স’-এর যুগ্ম সম্পাদক সুবর্ণ গোস্বামীর মন্তব্য, ‘‘যে দেওয়ালেরই হোক, লিখন পড়ার সময় এসেছে। যাঁদের পড়ার, তাঁরা পড়ে নিন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement