নথি ছিনতাইয়ের নালিশ

মামলা মহিলা কমিশনের সদস্যার নামে

এক পক্ষের দাবি, পুলিশই তাঁর হাতে নথি তুলে দিয়েছে। অপর পক্ষের দাবি, পুলিশের হাত থেকে তিনিই ছিনিয়ে নিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ নথি।শনিবার জানা যায়, বীরভূম পুলিশ জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্যা সুষমা সাহুর বিরুদ্ধে আইসি-র হাত থেকে নথি ছিনিয়ে নেওয়া-সহ একাধিক অভিযোগে মামলা করেছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:৪০
Share:

মুখোমুখি: বোলপুরের রজতপুরে সুষমাদেবী ও পুলিশ। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।

এক পক্ষের দাবি, পুলিশই তাঁর হাতে নথি তুলে দিয়েছে। অপর পক্ষের দাবি, পুলিশের হাত থেকে তিনিই ছিনিয়ে নিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ নথি।

Advertisement

বোলপুরের এই নথি-নাটক শেষ পর্যন্ত গড়াল মামলা-মোকদ্দমায়। শনিবার জানা যায়, বীরভূম পুলিশ জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্যা সুষমা সাহুর বিরুদ্ধে আইসি-র হাত থেকে নথি ছিনিয়ে নেওয়া-সহ একাধিক অভিযোগে মামলা করেছে। ঘটনাচক্রে, সুষমাদেবীকে মহিলা কমিশন বোলপুরে পাঠিয়েছিল ওই মামলার হাল হকিকত খতিয়ে দেখতে।

বোলপুরে আত্মঘাতী ধর্ষিতার বাড়িতে শুক্রবার দুপুরে গিয়ে জেলা পুলিশকে ভর্ৎসনা করেছিলেন সুষমা। সে রাতেই তাঁর বিরুদ্ধে মামলার ‘কেস ডায়েরি’, নির্যাতিতার মৃত্যুকালীন জবানবন্দি-সহ বহু গুরুত্বপূর্ণ নথি ছিনতাইয়ের অভিযোগ করেন মামলার তদন্তকারী অফিসার তথা বোলপুর থানার আইসি সুবীর চক্রবর্তী। যা শুনে এ দিন শনিবার সুষমাদেবী ফোনে দাবি করেন, ‘‘পুলিশের কাছে নথিপত্র চেয়েছিলাম। এটা আমার এক্তিয়ারের মধ্যেই পড়ে। পুলিশ নথিপত্র আমার হাতে তুলে দিয়েছে। কিছু ছিনিয়ে নিয়ে আসিনি! পুলিশ আসল নথি কেন দিয়েছে, সেটা ওরাই জানে। এখন পুলিশ মামলা করছে, ইচ্ছেমতো ধারা প্রয়োগ করছে। আমি যথাসময়ে তার উত্তর দেব।’’ বোলপুর থানার আইসি-র দাবি, ‘‘উনি সমস্ত নথি এবং অন্য তথ্য কেড়ে নেন। তাই ছিনতাইয়ের মামলা করা হয়েছে।’’ জেলা পুলিশ সুপার নীলকান্তম সুধীর কুমার বলেন, ‘‘লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে ধারা প্রয়োগ করা হয়েছে, এটুকু বলব।’’

Advertisement

পুলিশ সুপার বিশদে বলতে না চাইলেও শুক্রবারের নাটক জমেছিল সুষমাদেবী নির্যাতিতার এলাকা রজতপুর গ্রামে যাওয়ার পরই। আত্মঘাতী ধর্ষিতার বাড়িতে গিয়ে সুষমাদেবী একহাত নিয়েছিলেন জেলা পুলিশ এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তাঁর অভিযোগ ছিল, ধর্ষিতা তরুণীকে স্থানীয় পুলিশ, প্রশাসনের তরফে সাহায্য করা হয়নি। পরে ওই তরুণী অপমানে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করলেও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে তাঁকে কার্যত বিনা চিকিৎসায় ফেলে রাখা হয়েছিল। কোনও ডাক্তার তাঁকে দেখেননি। সে কারণে মেয়েটিকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যেতে হয় আত্মীয়দের। এর পরে লিখিত অভিযোগে আইসি দাবি করেন, সুষমাদেবী কেস ডায়েরি, সাক্ষীদের জবানবন্দি, অভিযুক্তের ফরওয়ার্ডিং রিপোর্ট, নির্যাতিতার মৃত্যুকালীন জবানবন্দি, সিজার লিস্ট, চিকিৎসা সংক্রান্ত রিপোর্টের মতো নথি ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছেন।

পুলিশের বক্তব্য, কেস ডায়েরি মামলার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নথি। তা দেখতে পারেন শুধু মামলার তদন্তকারী অফিসার, ওসি বা তাঁর কোনও ঊর্ধ্বতন আধিকারিক, বিচারক, কোর্ট অফিসার (অ্যাডভোকেট) বা জেলা পুলিশ সুপারের অনুমোদন সাপেক্ষে পুলিশের কেউ। বিশেষ ক্ষেত্রে পুলিশ সুপারের অনুমতিতে অন্য কেউ সেই কেস ডায়েরি দেখতে পারেন। কিন্তু মামলার নিষ্পত্তি হওয়ার আগে তা কারও হাতে যাওয়ার কথা নয়। সুষমাদেবী অবশ্য বলছেন, ‘‘পুলিশের কুরূপ দেখিয়ে দিয়েছি, তাই ক্ষোভে এ সব করছে। পুলিশ নিরপেক্ষ তদন্ত করুক। অপরাধীরা দ্রুত শাস্তি পাক। না হলে ফের আমি বাংলায়, বোলপুরে আসব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement