রামের হাওয়া কার পালে বইবে, আজ, রবিবার রামনবমীতে তা বোঝাবে বাংলা।
গেরুয়া-ঝড় তুলতে গত বছরই বাংলা জুড়ে রাম-মিছিলের বহর বাড়িয়েছিল সঙ্ঘ পরিবার। কাঁথি থেকে দুর্গাপুর, সিউড়ি থেকে ইসলামপুর— বহু জায়গাতেই অস্ত্র হাতে নামতে দেখা গিয়েছিল স্কুলপড়ুয়াদেরও। তা নিয়ে বিতর্কও হয়েছিল বিস্তর। মামলা-মোকদ্দমা করে অনেক জায়গাতেই রাম-ভক্তদের সমঝে দিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসন। জোড়াফুলের ভরা বাজারে হঠাৎ করে ‘রাম-উত্থানে’ গত বছর কিঞ্চিৎ বেসামালও দেখিয়েছিল শাসক শিবিরকে। এ বার তাই সেই ভুল ঠেকাতে গোড়া থেকেই তৎপর শাসক তৃণমূল।
মুখ্যমন্ত্রী মমতার নির্দেশে আজ প্রায় সব বিধানসভা কেন্দ্রেই রাম-নামে পথে নামবেন তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা। শাসক দলের এমন ‘উৎসাহ’ দেখে রক্ষণাত্মক হয়ে পড়েছে গেরুয়া শিবির। প্রতিযোগিতায় এঁটে উঠতে না পারার আশঙ্কায় শনিবারের বিকেল থেকেই ঝান্ডা হাতে নেমে পড়েছেন ওই শিবিরের অনেকে। তৃণমূল ও বিজেপি যখন রামনবমী নিয়ে প্রতিযোগিতায় মগ্ন, তখন পিছিয়ে নেই বামফ্রন্টও। বামেদের অভিযোগ, প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িকতায় সামিল হয়েছে ওই দুই দল। তাই তাদের পথ ‘সম্প্রীতি’র। এ দিন বিকেলে বীরভূমের রামপুরহাটে সম্প্রীতি মিছিলে হেঁটেছেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু। যা দেখে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেরই মত, রামের মাহাত্ম্য এমনই যে, যুক্তি যা-ই খাড়া করা হোক না কেন, তৃণমূল তো নয়ই, বামেরাও তা এড়াতে পারছে না।
গেরুয়া-শিবিরকে ধরাশায়ী করতে আজ সকাল থেকে রামের ছবি নিয়ে মিছিল এবং রাবণ-বধে নেমে পড়বে তৃণমূল। মিছিলে হাঁটা সমর্থকদের ম্যারাপ বেঁধে পাত পেড়ে খিচুড়ি, তরকারি, পায়েস, মিষ্টি খাওয়ানোর তোড়জোড়ও শুরু হয়েছে জেলায় জেলায়।
কলকাতায় চালতাবাগান থেকে গিরিশ পার্ক পর্যন্ত মিছিলে আজ বিকেলে রামের ছবি-ট্যাবলো নিয়ে হাঁটবেন উত্তর কলকাতার কয়েক জন তৃণমূল বিধায়ক। পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি থেকে রামনগর, পটাশপুর থেকে খেজুড়ি সর্বত্রই রামনবমীর পুজো, মিছিল আর ভোজের আয়োজন করেছেন তৃণমূল বিধায়কেরা। বীরভূমে খিচুড়ি ভোজের ব্যবস্থার পাশাপাশি ১৪টা রামমন্দিরে
পুজোর জন্য পাঁচ হাজার টাকা করে তৃণমূল বিলি করেছে বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। উত্তর ২৪ পরগনায় একটি এলাকাও ছাড়তে রাজি নন তৃণমূলের জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, ‘‘রাম কি বিজেপি-র একার? রবিবার দেখিয়ে দেব, রাস্তায় বিজেপি থাকে কি না! সব জায়গায় আমরাই থাকব।’’
বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ অবশ্য জবাবে বলছেন, ‘‘রাম আমাদের একার নন। কিন্তু রামের পথে সকলকে নিয়ে আসার কৃতিত্ব আমাদের একার।’’ বস্তুত, সঙ্ঘ পরিবারের মতে, রাজ্যে গেরুয়া-ঝড় আসছে বুঝে তার মোকাবিলার জন্যই তৃণমূলকে এখন রামভক্ত সাজতে হচ্ছে। আজ কলকাতা থেকে জেলা— সর্বত্রই মহা সমারোহে রামনমবীর শোভাযাত্রা করবে গেরুয়া শিবির। বাগবাজার উদাসী আশ্রম থেকে রাম মন্দির, ডানলপ মহামিলন মঠ থেকে শ্যামবাজার, হরিনাভি এবং বোড়াল থেকে গড়িয়া, রাজপুর থেকে হরিনাভি, গড়িয়া থেকে যাদবপুর ৮ বি বাসস্ট্যান্ড, বন্ডেল গেটে তাদের রামনবমীর মিছিলের কর্মসূচি আছে। দিলীপবাবু আজ থাকবেন খড়্গপুরের রামনবমীর মিছিলে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের পূর্ব ক্ষেত্রের সংগঠন সম্পাদক শচীন্দ্রনাথ সিংহের আজ থাকার কথা তমলুকে।