CPM North 24 Parganas

যত মত, তত জট! উত্তর ২৪ পরগনার সিপিএম পারল না কমিটি তৈরি করতে, হিমশিম অর্ধেক আলিমুদ্দিন

তিন বছর আগেও উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্মেলনে এই ছবি দেখা গিয়েছিল। সম্মেলনের এক সপ্তাহ বাদে হয়েছিল ভোটাভুটি। এ বার সেই পরিস্থিতি এড়ানোর চেষ্টা করেছিল আলিমুদ্দিন। কিন্তু এড়ানো গেল না।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৪:১৪
Share:
Committee elections postponed in North 24 Parganas CPM, internal conflicts come to light again

সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্মেলনে বলছেন রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। ছবি: সংগৃহীত।

গত তিন ধরে উত্তর ২৪ পরগনা সিপিএমের একাধিক তরুণ নেতা একান্ত আলোচনায় বলছিলেন, ‘‘আমাদের এখানে যত মত, তত জট।’’ সেই জট ছাড়াতে প্রায় অর্ধেক আলিমুদ্দিন স্ট্রিট চলে গিয়েছিল বারাসতে। কার্যত বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী, কেন্দ্রীয় কমিটি এবং পলিটব্যুরোর সদস্যেরা। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। মধ্যরাত পেরিয়ে যাওয়ার পরে সম্মেলন গুটিয়ে গেল বটে, কিন্তু শেষ হয়েও হইল না শেষ। কমিটি গঠন না করেই আপাতত শেষ হয়েছে জেলা সম্মেলন। আগামী রবিবার ভোটাভুটি করে কমিটি তৈরি এবং সম্পাদক নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

Advertisement

শুক্রবার থেকে বারাসতে শুরু হয়েছিল সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্মেলন। রবিবার ছিল শেষ দিন। কিন্তু রাত ১২টার পরেও কোন্দল চলে সম্মেলনকক্ষে। ফলস্বরূপ ‘আপাতত’ সম্মেলন গুটিয়ে দেওয়া হয়। প্রতিবেদন পাশ, জবাবি ভাষণ ইত্যাদি ঔপচারিক কাজ হয়ে গেলেও বাকি থেকে গিয়েছে আসল কাজই। সম্মেলন ‘শেষ’ হলেও কমিটি তৈরি না হওয়া নিয়ে দলের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। একাংশ যাকে ব্যাখ্যা করছেন, ‘বিয়ে হয়েছে, কিন্তু রেজিস্ট্রি হয়নি’ বলে।

সম্মেলন অবশ্য প্রথম দিন থেকেই তেতে ছিল। সন্দেশখালি থেকে সল্টলেক পর্যন্ত বিস্তৃত জেলার অধিকাংশ এরিয়া কমিটিই দাবি করে, বর্তমান জেলা সম্পাদক মৃণাল চক্রবর্তীকে সরানো হোক। তিনি দীর্ঘ দিন ধরেই অসুস্থ। গত তিন বছরে বহু বার দীর্ঘ ছুটি নিতে হয়েছে তাঁকে। দলের একাংশের বক্তব্য, কেউ অসুস্থ হতেই পারেন। কিন্তু তাঁকে নেতৃত্বের মতো গুরুদায়িত্বে না রাখাই বাঞ্ছনীয়। রাজ্য সিপিএমের বড় অংশ মনে করছে, মৃণালকে সরানোই ‘বিজ্ঞানসম্মত’ সিদ্ধান্ত হবে। কিন্তু কাকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করা হবে, সেই প্রশ্ন এখন আলিমুদ্দিনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আপাতত এই বিষয়েই জেলা সিপিএমে একাধিক মত তৈরি হয়েছে। দলের তরুণ নেতা সায়নদীপ মিত্রদের গোষ্ঠীর দাবি, রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পলাশ দাসকে দায়িত্ব দেওয়া হোক। আবার গার্গী চট্টোপাধ্যায়, আহমেদ আলি খানেরা চাইছেন সোমনাথ ভট্টাচার্য হোন জেলা সম্পাদক। কামারহাটির প্রাক্তন বিধায়ক মানস মুখোপাধ্যায়দের গোষ্ঠী আবার দাবি তুলেছে, অপেক্ষাকৃত তরুণ এবং ১৩ বছর ধরে দলের রাজ্য কমিটির সদস্য সায়নদীপকেই জেলা সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হোক। ঘটনাচক্রে, প্রাক্তন বিধায়ক মানস আবার সম্পর্কে সায়নদীপের মেসো।

Advertisement

নতুন কমিটির প্যানেল পেশ হওয়ার পরেই কক্ষ থেকে ২৭ জন জেলা কমিটির সদস্য হওয়ার জন্য ভোটে দাঁড়িয়ে পড়েন। পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে দেখে মানস ঘোষণা করেন, তিনি নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। এই করতে করতে জটিলতা আরও বাড়ে। আলিমুদ্দিনের নেতাদের হস্তক্ষেপে ২৭ জনের মধ্যে ২৫ জন নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নেন। কিন্তু সল্টলেক এবং মধ্যমগ্রাম থেকে এক জন করে নেতা অনড় থাকেন। তাঁরা নাম তোলেননি। ফলে ভোটাভুটি অনিবার্য হয়ে পড়ে। তার পরেই সিপিএম সিদ্ধান্ত নেয়, ১৬ ফেব্রুয়ারি ‘ষোল’কলা পূর্ণ করা হবে। ওই দিনই কমিটি গঠন এবং পরবর্তী সম্পাদক নির্বাচন হবে।

দলের যখন এই অবস্থা, যখন পর পর ভোটে যখন জামানত যাচ্ছে, তখন এই ঘটনা কি ভাল বিজ্ঞাপন? সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘আমরা সব সময় চাই ঐকমত্যের ভিত্তিতে কমিটি হোক। কিন্তু ভোটের সুযোগ তো দলের গঠনতন্ত্রে রয়েছে। যে হেতু বড় জেলা, অনেক প্রতিনিধি, তাই ভোট করাতে সময় লাগবে। তা ছাড়া প্রেক্ষাগৃহ ছেড়ে দেওয়ার নির্দিষ্ট সময়সীমা ছিল। তাই যা হবে পরের রবিবার।’’

উল্লেখ্য, তিন বছর আগেও উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্মেলনে এই একই ছবি দেখা গিয়েছিল। সম্মেলনের এক সপ্তাহ বাদে হয়েছিল ভোটাভুটি। সিপিএম সূত্রের খবর, আগামী এক সপ্তাহ ধরে সংশ্লিষ্ট দু’জনকে বোঝানো হবে যাতে তাঁরা নাম তুলে নেন। তা হলে কমিটি নির্বাচনে আর ভোটাভুটি হবে না। সে ক্ষেত্রে সম্পাদক নির্বাচনে মনোনিবেশ করা যাবে। কিন্তু কী হবে, তা নিয়ে এখনও সন্দিহান আলিমুদ্দিন। কারণ, নেতারাও জানেন, উত্তর ২৪ পরগনায় ‘যত মত, তত জট’।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement