অনুষ্ঠানে মমতা। নিজস্ব চিত্র
বিনিয়োগ টানতে পরিকাঠামোয় জোর আর সহজে ব্যবসার প্রতিশ্রুতি তো রইলই। সেই সঙ্গে রাজ্যে সামাজিক বুনোটের জোরও তুলে ধরলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দাবি করলেন, সহজে ব্যবসা করার মাপকাঠিতে (ইজ অব ডুয়িং বিজনেস) পয়লা নম্বর জায়গা হাসিলের লক্ষ্যে তাঁরা যেমন দৌড়চ্ছেন, তেমনই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি জমাট হওয়ায় লগ্নির ঝুঁকিও এখানে কম। কিন্তু শিল্পমহলের একাংশের প্রশ্ন, তাদের মূল সমস্যার সমাধান তাতে হবে কি? মিটবে জমি-জট? কমবে তোলাবাজি? প্রকল্পের ছাড়পত্র জোগাড়ের জন্য এক দফতর থেকে আর এক দফতরে নাগাড়ে দৌড়ের হয়রানিই বা কমবে কী ভাবে?
সেই প্রশ্ন কিছুটা উস্কে দিয়েই একই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা প্রাক্তন ইনফোসিস কর্তা মোহনদাস পাই বলে গেলেন, এ রাজ্যে চোখে পড়ার মতো কিছু উন্নতি হয়েছে ঠিকই। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে লগ্নিকারীদের আস্থা জয়ে আরও অনেক লম্বা পথ পাড়ি দিতে হবে পশ্চিমবঙ্গকে। মনে করালেন ‘অস্বস্তি’র সিঙ্গুর প্রসঙ্গও।
সোমবার রাজারহাটে হোরাসিস-এশিয়ার শিল্প সম্মেলনে মমতার দাবি, সহজে ব্যবসা করার মাপকাঠিতে তিনে উঠে এসেছে রাজ্য। পৌঁছতে চেষ্টা করবে শীর্ষ স্থানে। পরিকাঠামো উন্নয়নে জোর দেওয়ার কথা বললেন। তুললেন রাজ্যের বৃদ্ধির হার ও পরিকল্পনার প্রসঙ্গ। কিন্তু একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর সওয়াল, ‘‘ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক, কৌশলগত ও রাজনৈতিক কারণে এ রাজ্য নিরাপদ ও সুরক্ষিত। ...আসুন। এক বার লগ্নি করলে আবারও করবেন।’’
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের আগে ভিডিও প্রেজেন্টেশনেও দেখানো হল ‘বদলে যাওয়া’ রাজ্যের ছবি। যেখানে বন্ধ অচল। তুলে ধরা হল কন্যাশ্রী, যুব বিশ্বকাপ সংগঠনে সাফল্যের কথাও। মমতা বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে একসঙ্গে চলায় বিশ্বাসী। সব জাতি, ধর্মকে আমরা শ্রদ্ধা করি।’’
লগ্নির নিরাপত্তায় সম্প্রীতি কিংবা সামাজিক বুনোট যে জরুরি, তা মানছেন শিল্পপতিরাও। কিন্তু তাঁদেরই কেউ-কেউ বলছেন, বিজ্ঞাপনে বিপণন দূত শাহরুখ খান যে ‘মিষ্টি বাংলার’ কথা বলেন, এ দিন কার্যত সেই ছবিই তুলে ধরেছেন মমতা। কিন্তু তাতে জমির সমস্যা মিটবে? বন্ধে সায় না হয় নেই, কিন্তু তোলাবাজি-সিন্ডিকেট তো এখনও জ্বলন্ত সমস্যা। মেরামতি প্রয়োজন ভাবমূর্তিতেও। সেই কারণে দ্রুত অন্তত এক-দু’টি বড় মাপের লগ্নি খুবই জরুরি বলে মনে করেন তাঁরা।
একই কথা তুলেছেন পাই। বলেছেন, কেন সিঙ্গুর থেকে ন্যানো বিদায় এ রাজ্যের পক্ষে বড় ধাক্কা। তাঁর কথায়, ‘‘বড় শিল্প এলে তা বাকিদের টানে।’’ বণিকসভা আইসিসি-র প্রেসিডেন্ট শাশ্বত গোয়েন্কা ও প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট সঞ্জীব গোয়েন্কার অবশ্য দাবি, ৩৪ বছরের ‘নন-পারফর্ম্যান্স’কে বদলে রাজ্য আমূল পাল্টেছে। অনেক মসৃণ হয়েছে ব্যবসা করার রাস্তা।