মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরেও পেশ হল না ২১শে রিপোর্ট

বাম জমানায় যুব কংগ্রেসের ‘মহাকরণ অভিযানে’ পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়েছিল ১৩ জনের। ক্ষমতায় এসেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সুশান্ত চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ১৯৯৩ সালের ওই ঘটনার তদন্তের জন্য কমিশন গঠন করেন।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৭ ০৩:৫০
Share:

ফাইল চিত্র।

ধর্মতলায় ‘শহিদ দিবসে’র সমাবেশ থেকে ২১শে জুলাই কমিশনের সুপারিশ ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পরে গড়িয়ে গেল এক মাস। পেরিয়ে গেল বিধানসভার আরও একটি অধিবেশন। তবুও বিধানসভায় পেশ হল না সেই কমিশনের রিপোর্ট। বরং, বিধানসভায় পেশ হওয়ার আগেই বিচারবিভাগীয় কমিশনের রিপোর্ট মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্যে ঘোষণা করে দিয়ে স্বাধিকার ভঙ্গ করেছেন বলে বামেদের আনা প্রস্তাবও খারিজ হয়ে গিয়েছে স্পিকারের রুলিং-এ। রাজ্য সরকার সংসদীয় কোনও রীতিনীতি মানছে না বলে সরব হয়েছে বিরোধীরা।

Advertisement

বাম জমানায় যুব কংগ্রেসের ‘মহাকরণ অভিযানে’ পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়েছিল ১৩ জনের। ক্ষমতায় এসেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সুশান্ত চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ১৯৯৩ সালের ওই ঘটনার তদন্তের জন্য কমিশন গঠন করেন। সরকারি সূত্রের খবর, সুশান্তবাবুর কমিশন রিপোর্ট জমা দিয়েছিল ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে। তার পর থেকে ওই রিপোর্ট নিয়ে আর উচ্চবাচ্য হয়নি। এ বার ২১শে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, কমিশনের সুপারিশ মেনে সরকার নিহত ১৩ জনের পরিবারকে দু’লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেবে এবং অভিযুক্ত পুলিশ আধিকারিকদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হবে।

বিরোধীদের বক্তব্য, ‘কমিশন অফ এনকোয়ারিজ অ্যাক্ট’ অনুযায়ী কোনও কমিশন গঠিত হলে তার রিপোর্ট এবং ব্যবস্থা গ্রহণ সংক্রান্ত রিপোর্ট (এটিআর) বিধানসভায় পেশ করতে হয়। ওই কমিশনের রিপোর্ট বিধানসভায় জমা পড়ার আগেই মুখ্যমন্ত্রী তা নিয়ে প্রকাশ্যে ঘোষণা করায় বিধানসভায় তাঁর বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের প্রস্তাব জমা দিয়েছিল বামেরা। কিন্তু স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় রুলিং দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, যে সময়ের মধ্যে স্বাধিকার ভঙ্গের প্রস্তাব আনতে হতো, সেই সময়সীমা পেরিয়ে গিয়েছে। তাই প্রস্তাব গ্রহণ করা যাবে না। স্বাধিকার ভঙ্গের প্রস্তাব খারিজ হয়ে গেলেও বিরোধীদের আশা ছিল, এই অধিবেশনে অন্তত রিপোর্ট পেশ হবে। কিন্তু সোমবার অধিবেশন শেষ হয়ে গেলেও সেই পথে সরকার হাঁটেনি। নোয়াপাড়ার কংগ্রেস বিধায়ক মধুসূদন ঘোষের প্রয়াণে শোকপ্রস্তাব নিয়ে অন্য কাজ ছাড়়াই মুলতবি হয়ে গিয়েছে শেষ দিনের অধিবেশন। বিরোধীদের প্রশ্ন, বিধানসভায় পেশ না হলে সরকার ক্ষতিপূরণ দেবে কী ভাবে? নতুন এফআইআর-ই বা দায়ের হবে কী করে?

Advertisement

বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘এটা শুধু বিরোধীদের বিষয় নয়। কমিশনের রিপোর্ট আগে বিধানসভায় পেশ না করায় বিধানসভারই অধিকার ভঙ্গ হয়েছে। বিধানসভা পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁরা এটা মাথায় রাখবেন আশা করেছিলাম।’’ এই বিষয়ে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কোনও সুযোগ আছে কি না, তা নিয়ে আইনজীবীদের পরামর্শ নিচ্ছেন সুজনবাবুরা। কেন মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরেও রিপোর্ট বিধানসভায় এল না, সেই প্রশ্নে মুখ খোলেননি পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তবে সরকারি একটি সূত্রের বক্তব্য, স্বরাষ্ট্র দফতর থেকে এই বিষয়ে পরিষদীয় দফতরকে এখনও কিছু জানানো হয়নি। বিরোধী দলের মুখ্য সচেতক, কংগ্রেসের মনোজ চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘এই সরকার সংসদীয় রীতিনীতি মানে না। যা ইচ্ছে, তা-ই করছে!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement