পুজোর আগেই নতুন জেলা হচ্ছে ঝাড়গ্রাম! মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সফরের আগে জল্পনা শুরু হয়েছে প্রশাসনিক মহলে।
গত বছর ২৭ নভেম্বর ন্যাজাটের প্রশাসনিক সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, পশ্চিম মেদিনীপুর ভেঙে পৃথক ঝাড়গ্রাম জেলা হচ্ছেই। এরপর নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, ঝাড়গ্রাম জেলা গঠনের জন্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গিয়েছে। এক বছরের মধ্যে নতুন জেলা আত্মপ্রকাশ করবে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, দ্বিতীয় দফায় সরকার গঠনের পরে জঙ্গলমহলের উন্নয়নে আরও জোর দিতে চান মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে পর্যটন কেন্দ্রিক এলাকাগুলির সৌন্দর্যানেও ভাবনা রয়েছে সরকারের।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার উত্তর-পশ্চিম অংশের ৫৩৯.৬৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে নিয়ে পৃথক ঝাড়গ্রাম জেলা গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। নতুন জেলার নাম হচ্ছে ঝাড়গ্রাম। ঝাড়গ্রাম মহকমার ব্লক সংখ্যা ৮টি। নতুন জেলায় অবশ্য ব্লকের সংখ্যা বাড়ছে। নতুন জেলায় দু’টি অথবা তিনটি মহকুমা থাকার সম্ভাবনা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার রাজ্যের ক্ষমতায় আসার পরে ঝাড়গ্রামকে নতুন জেলা করার জন্য ধাপে ধাপে প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তবে নতুন জেলার জন্য পরিকাঠামো গড়ার অনেক কাজই
বাকি রয়েছে।
বাম জমানায় মাওবাদী দমনের জন্য ২০১০ সালের এপ্রিলে পৃথক ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলা গঠিত হয়। মহকুমার ৯ টি থানার মধ্যে ৮টি থানা ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার অন্তর্গত। লালগড় থানাটি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশের অধীনে। ওই সময় ঝাড়গ্রাম শহরের কদমকাননে বন দফতরের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এসপি অফিস, এসপি-র বাংলো ও একটি পুলিশ ব্যারাক-সহ ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার সদর দফতর করা হয়। এখনও সেখানে অস্থায়ী ভাবে এসপি অফিস, বাংলো ও ব্যারাক রয়েছে। পুলিশের নিজস্ব জেলা পুলিশ লাইন তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। জঙ্গলমহল চিড়িয়াখানা যাওয়ার রাস্তার ধারে জঙ্গলখাস মৌজার সাড়ে ২৪ একর জায়গায় তৈরি হবে নতুন এসপি অফিস, এসপি-র বাংলো, ৮ জন ডিএসপি-র আবাসন ও দু’শো জন পুলিশ কর্মীর থাকার মতো পরিকাঠামো-সহ ব্যারাক। এজন্য প্রথম পর্যায়ে বরাদ্দ হয়েছে ৫০ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা। ওয়েস্ট বেঙ্গল পুলিশ হাউসিং বোর্ডের তত্ত্বাবধানে সেখানে পাঁচিল তৈরির কাজ হচ্ছে। পুরো কাজ শেষ হতে বছর দু’য়েক লাগবে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের আমলে ২০১২ সালের ১১ জানুয়ারি ঝাড়গ্রাম স্বাস্থ্যজেলা গঠিত হয়। ঝাড়গ্রাম মহকুমা হাসপাতালটি ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে উন্নীত হয়েছে। জেলা হাসপাতালের লাগোয়া জমিতে তৈরি হয়েছে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের ভবন। জেলা হাসপাতালের আউটডোর বিভাগটি সুপার স্পেশ্যালিটি ভবনে তুলে আনা হয়েছে। হাসপাতালের পুরনো আউটডোর ভবনটি এখন সিএমওএইচ-এর অস্থায়ী অফিস হয়েছে। হাসপাতাল প্রাঙ্গণে সিএমওএইচ-এর চার তলা অফিস তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। ২০১২ সালের ১ নভেম্বর পৃথক ঝাড়গ্রাম আবগারি জেলা গঠিত হয়েছে। দফতরের ভবন রয়েছে। গত বছর ঝাড়গ্রাম উপ সংশোধনাগারটি জেলাস্তরের বিশেষ সংশোধনাগারে উন্নীত হয়েছে। সংশোধনাগারের উল্টোদিকের জমিতে তৈরি হচ্ছে জেলা সার্কিট হাউস। একতলার ছাদ ঢালাইয়ের কাজ বাকি। কিন্তু জেলাশাসকের দফতর-সহ জেলা কালেক্টরেট (ট্রেজারি-সহ একাধিক দফতর) কোথায় তৈরি হবে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। ঝাড়গ্রাম রেল স্টেশন থেকে দু’-আড়াই কিমি দূরে পুরনো ঝাড়গ্রাম ও রাজ কলেজের কাছে দু’টি জমি দেখা হয়েছে। প্রশাসনের একাংশের মত, মূল শহর থেকে দূরে জেলা কালেক্টোরেট হলে দূরদূরান্ত থেকে আসা মানুষজনের অসুবিধা হতে পারে। ঝাড়গ্রাম রেল স্টেশনের কাছে রয়েছে ঝাড়গ্রাম এসডিও অফিস। জেলা প্রশাসনের একাংশ চান, রেল স্টেশনের কাছাকাছি শহরের মূল এলাকায় জেলা কালেক্টোরেট তৈরি হোক। কিন্তু এ জন্য অনেকটাই জমি প্রয়োজন। ঝাড়গ্রামে মহকুমা আদালত ছাড়াও অতিরিক্ত জেলা দায়রা আদালতের দু’টি এজলাস রয়েছে। মহকুমার ৯টি থানা এলাকার বেশির ভাগ মামলার বিচার হয় ওই দু’টি দায়রা আদালতে। ঝাড়গ্রাম জুডিশিয়্যাল ডিস্ট্রিক্ট গঠনের জন্য বিচারবিভাগীয় স্তরে প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার মুখে। নতুন জেলার অন্তর্গত নতুন মহকুমা গুলির জন্য প্রশাসনিক ভবন ও বিভিন্ন দফতরের ভবন দরকার। প্রয়োজন মহকুমা ও জেলা আদালতের নতুন ভবন। এ ব্যাপারে এখনও কোনও কাজ শুরু হয়নি।
রাজ্য সরকারের প্রাথমিক পরিকল্পনা ছিল, ঝাড়গ্রাম জেলার মধ্যে ২ টি মহকুমা থাকবে। ঝাড়গ্রাম ও গোপীবল্লভপুর। এখন যে ৮ টি ব্লক ও ১ টি পুরসভা ঝাড়গ্রাম মহকুমার মধ্যে রয়েছে, সেগুলিই নতুন জেলার মধ্যে থাকবে। তবে তিনটি ব্লক ভেঙে আরও তিনটি নতুন ব্লক করার প্রস্তাব রয়েছে। বিনপুর-১ ও বিনপুর-২ ব্লক ভেঙে নতুন লালগড় ব্লক গঠন করা হতে পারে। ঝাড়গ্রাম ব্লক ভেঙে মানিকপাড়া ব্লক ও নয়াগ্রাম ব্লক ভেঙে চাঁদাবিলা ব্লক করারও প্রস্তাব রয়েছে। ঝাড়গ্রাম মহকুমার মধ্যে থাকবে মোট ৬ টি ব্লক। ঝাড়গ্রাম, মানিকপাড়া, বিনপুর, বেলপাহাড়ি, লালগড় ও জামবনি। সঙ্গে ঝাড়গ্রাম পুরসভা এলাকা। অন্যদিকে, গোপীবল্লভপুর মহকুমার মধ্যে থাকবে ৫ টি ব্লক। গোপীবল্লভপুর-১, গোপীবল্লভপুর-২, সাঁকরাইল, নয়াগ্রাম ও চাঁদাবিলা। আধিকারিকরা অবশ্য জানাচ্ছেন, এ ব্যাপারে কোনও সরকারি নির্দেশিকা এখনও জারি হয়নি। তবে হতে কতক্ষণ! শেষ পর্যন্ত কী হবে তা সে ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই প্রশাসনিক কর্তারা এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে চাননি।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ বলেন, “নতুন জেলা নিয়ে আমার কাছে কোনও তথ্য নেই। অপেক্ষা করুন, মুখ্যমন্ত্রী জেলা সফরে আসছেন।”