DA Protest

ডিএ-প্রতিবাদে বিরোধীরা, ফের কটাক্ষ মুখ্যমন্ত্রীর

আন্দোলনরত সরকারি কর্মীদের উদ্দেশে ‘চোর-ডাকাত’ বলার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমা চাওয়ার দাবি উঠেছে বৃহস্পতিবারের মিছিল-সমাবেশ থেকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২৩ ০৮:১৮
Share:

শহিদ মিনার ময়দানে সরকারি কর্মচারীদের সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের সমাবেশে বাম নেতৃত্ব। নিজস্ব চিত্র।

মহার্ঘ ভাতার (ডিএ) দাবিতে আন্দোলনকারীদের সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যের প্রতিবাদে পথে নামলেন সরকারি কর্মচারীদের একাংশ। তাঁদের মিছিল ও প্রতিবাদে অবরুদ্ধ হল ধর্মতলা চত্বর। সরকারি কর্মচারীদের যৌথ মঞ্চের প্রতিবাদী সমাবেশে শামিল হলেন বিরোধী সিপিএম, কংগ্রেস ও বিজেপি নেতারা। আর সে দিনই নিজের ধর্না-মঞ্চ থেকে আন্দোলনকারীদের প্রতি ফের আক্রমণে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement

আন্দোলনরত সরকারি কর্মীদের উদ্দেশে ‘চোর-ডাকাত’ বলার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমা চাওয়ার দাবি উঠেছে বৃহস্পতিবারের মিছিল-সমাবেশ থেকে। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য রোডে তাঁর ধর্না-মঞ্চ থেকে এ দিন ফের বলেছেন, ‘‘দয়া করে চুপ করে থাকুন! টাকা নেবে, পেনশন নেবে আবার পেন ডাউন করবে! সবার কথা বলছি না, বেশির ভাগ চিরকুটে চাকরি পেয়েছে। আমরা ১০৬% ডিএ দিয়েছি। আর কত চাও বাবু? আরও নেবে!’’

এই সূত্রেই তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘বাম আমলের চিরকুট বেরোবে। সব দফতরকে বলেছি ফাইল খুঁজতে। বাম আমলের একটা ফাইলও খুঁজে পাওয়া যায় না!’’ মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদে আগামী ৬ এপ্রিল আবার কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। অর্থাৎ সে দিন ওই কর্মচারীরা দফতরে বা স্কুলে যাবেন কিন্তু কাজ করবেন না।

Advertisement

হাওড়া ও শিয়ালদহ থেকে এ দিন শহিদ মিনার ময়দানের দিকে সরকারী কর্মচারীদের জোড়া মিছিল বেরিয়েছিল। দুপুরে ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিংয়ে রাস্তায় বসে পড়েন আন্দোলনকারীরা। সেখানে স্লোগান ওঠে, ‘ডিএ চোর সরকার, আর নেই দরকার’! বেশির ভাগ আন্দোলনকারীই এ দিন কালো ব্যাজ পরেছিলেন। এক আন্দোলনকারী বলেন, ‘‘সরকারি কর্মী ও শিক্ষকদের চোর-ডাকাত বলে দাগিয়ে দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী! চোর কে? চুরির দায়ে জেলে আছেন নেতা-মন্ত্রীরা। আর আমাদের ডিএ চুরি করেছে সরকার!’’

পরে শহিদ মিনার ময়দানে ছিল যৌথ মঞ্চের ‘মহা-সমাবেশ’। প্রথমে সেখানে গিয়েছিলেন বাম ও কংগ্রেস নেতারা। পরে আসেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, সুজন চক্রবর্তী, আইনজীবী-সাংসদ বিকাশ ভট্টাচার্ষের পাশাপাশি আন্দোলনকারী কর্মচারীদের পাশে দাঁড়াতে গিয়েছিলেন কংগ্রেসের কৌস্তভ বাগচী। সেলিম বলেন, ‘‘রাস্তায় লোকজন যাদের দেখে ‘চোর, চোর’ বলছে, তারাই আবার অন্যকে চোর বলছে। সারদার সময়ে নিজেকে ঢাকতে ‘আমরা সবাই চোর’ স্লোগান দিয়ে হেঁটেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এখন আবার নিজেকে ঢাকতে অন্যদের চোর বলছেন!’’ তাঁর দাবি, ‘‘আগে যারা ভয় দেখিয়েছিল, তারা আজ ভয় পাচ্ছে!’’

নিজস্ব চিত্র।

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু এ দিন বলেছেন, ‘‘আপনারা লড়াই চালিয়ে যান। পথই পথ দেখাবে। আমরা কে কী করলাম, সেটা বড় কথা নয়। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে দাবি আদায়ে যাঁরা এই ভাবে ধর্না দিচ্ছেন, তাঁরাই এক দিন এই সরকারকে উল্টে দেবেন।’’ সরকারি কর্মচারীদের দাবির বিরুদ্ধে আইনি লড়াই করতে রাজ্য সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করেছে বলে দাবি করেন শুভেন্দু। শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের প্রতিবাদে এবং ডিএ-সহ নানা দাবিতে শহরে এ দিন মিছিল ছিল বাম শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ এবং এবিপিটিএ-র। রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে সমাবেশের পরে সুজনকে নিয়ে শিক্ষকদের মিছিল শহিদ মিনার ময়দানে আসে সরকারি কর্মচারীদের আন্দোলনে সংহতি জানাতে। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাতে যৌথ মঞ্চের সমাবেশে গিয়েছিলেন এসইউসি-র রাজ্য সম্পাদক চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য ও প্রাক্তন বিধায়ক তরুণ নস্করও।

রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ অবশ্য পাল্টা বলেছেন, ‘‘ডিএ কখন কী ভাবে দেবে, তা সরকারের বিবেচ্য। কিন্তু বিরোধীরা রাজনৈতিক কারণে উস্কানি দেওয়ার চেষ্টা করছে, বাম আমলের অপসংস্কৃতি ফেরাতে চাইছে।’’

টানা ৬৩ দিন ধরে ধর্না-অবস্থান চালাতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন সুপর্ণা চক্রবর্তী নামে এক আন্দোলনকারী। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ডিএ মঞ্চের অদূরেই মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির পাদদেশে ২০১৪ টেট-পাশ ‘নট ইনক্লুডেড’ প্রার্থীদের ধর্না-মঞ্চে এ দিন মুখ্যমন্ত্রী সেজে বসেছিলেন এক চাকরি-প্রার্থী। সুতপা লাই নামে ওই চাকরিপ্রার্থী জানান, তাঁরা চান মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের মঞ্চে এসে দাবির কথা শুনুন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement