‘পশ্চিমবঙ্গে শিল্প সম্ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনাসভা শুরুর আগে। সোমবার ডুসেলডর্ফের এক হোটেলে। — নিজস্ব চিত্র
রোম থেকে মিউনিখ। ভ্যাটিকান সিটি থেকে শিল্পশহর। এ বার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিমুখ শিল্পায়ন। তাঁর সঙ্গী শিল্পবাণিজ্য দুনিয়ার কর্তাব্যক্তিরা। মিউনিখে আসা ভারতীয় ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধি দলে আছেন টাটা গোষ্ঠীর দুই বিশিষ্ট প্রতিনিধিও। টাটা মেটালিক্স লিমিটেড-এর এমডি, সঞ্জীব পল আর টাটা স্টিল ইন্ডিয়া অ্যান্ড সাউথ এশিয়া-র এমডি, টি ভি নরেন্দ্রন। এই গোষ্ঠীর দু’জনকে সফরসঙ্গী হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়ে মমতা একটা নতুন সমঝোতার সম্ভাবনা-বার্তা দিচ্ছেন বলেই মনে করা হচ্ছে।
সরকারি সূত্রে জানা যাচ্ছে, সাইরাস মিস্ত্রিও নাকি সিঙ্গুর নিয়ে জট ছাড়াতে উৎসাহী। বিশাল অঙ্কের টাকা এই প্রকল্পে এই জমির জন্য টাটাদের খরচ হয়েছে। ব্যবসার কারণেই এখন টাটাও সমাধান সূত্র চায়। আবার মমতাও সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর দূত মারফত মুম্বইয়ে উচ্চ পর্যায়ে টাটাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন। এ ব্যাপারে অমিত মিত্র নিজেও সক্রিয়।
সিঙ্গুর নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে যে রাজনৈতিক সাফল্য মমতা পেয়েছেন, তাতে তাঁর এখন শিল্পায়নের পথে এগোনোর আস্থা বেড়েছে। এই রায়ের ফলে জমি অধিগ্রহণ আরও কঠিন হয়ে গিয়েছে এবং রাজ্যে শিল্পায়নে আরও জটিলতা আসবে— এই ধারণাকে নস্যাৎ করাই এখন মমতার লক্ষ্য। মমতা বলছেন, অনেক অপপ্রচার হয়েছে। রাজ্যের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তুলে ধরার চেষ্টা হয়েছে, কিন্তু বাংলার ছবিটা এখন বদলে গিয়েছে, বিদেশি শিল্পসংস্থা এবং রাষ্ট্রগুলিও তা বুঝছে।
এই প্রেক্ষিতে মমতার মিউনিখ সফরের বাড়তি তাৎপর্য রয়েছে। জার্মানির মিউনিখ এমন এক শহর যেখানে মাঝারি উৎপাদনকারী সংস্থার ব্যবসা এবং বিভিন্ন পণ্যের নানা ধরনের ব্র্যান্ড রয়েছে। অনেক সংস্থাতেই ৫০ থেকে ২০০ জন কর্মী কাজ করেন। অনেকেরই পারিবারিক ব্যবসা। মাঝারি মাপের কোনও শিল্প সংস্থা ইতিমধ্যেই কলকাতায় কিছু বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে ব্যবসা করছে, অনেকে রাজ্যে লগ্নির সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এই ধরনের সংস্থাগুলিকেও বিশেষ গুরুত্ব দিতে চান মুখ্যমন্ত্রী।
মিউনিখে ৭ সেপ্টেম্বর এক শিল্প-সভায় মমতাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে জার্মানির দুটি বড় চেম্বার অব কমার্স— আইএইচকে এবং বিভিএমডব্লিউ। বণিকসভার সেই সম্মেলনে বাভারিয়া প্রদেশের আইনমন্ত্রীও থাকবেন। মমতা মিউনিখ পৌঁছনোর আগেই ৪ সেপ্টেম্বর অমিত মিত্র অর্থসচিব ও কয়েকজন প্রতিনিধিকে নিয়ে ডুসেলডর্ফ-এ জার্মানির শিল্পবাণিজ্য জগতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগের সম্ভাবনা তুলে ধরেছেন তিনি। ডুসলডর্ফ-এর মেয়রের সঙ্গে কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বৈঠক হয়েছে।
মিউনিখের বিএমডব্লিউ গাড়ি নির্মাণকারী সংস্থার কর্তারা অমিত মিত্রের সঙ্গে বৈঠক করতে আগ্রহী। মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ নেওয়ার পরে আগামী কাল অমিতবাবু ও মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় বিএমডব্লিউ কারখানা ঘুরে দেখবেন। অন্য কয়েকটি শিল্পসংস্থাতেও তাঁর যাওয়ার কথা আছে। বামফ্রন্ট আমলের শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেন মিউনিখে বিএমডব্লু গাড়ি কারখানা ঘুরে দেখেছিলেন। তার পর কলকাতায় বিএমডব্লিউ-এর একটা শোরুম-ও হয়, কিন্তু পরে সেটা উঠে যায়। বিএমডব্লিউ নতুন করে উৎসাহী হয় কি না, মমতাও সেটা দেখতে চান। তবে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি হল, প্যাসে়ঞ্জার গাড়ির হাব যদি পশ্চিমবঙ্গে এখন না-ও হয়, কমার্শিয়াল ভেহিক্ল কারখানা নির্মাণ করা যেতে পারে। সিমেন্স-এর ওয়াগন নির্মাণ সংস্থার পরিচালকদের সঙ্গে বুধবার অমিত মিত্রের আলোচনায় বসার কথা।
নভেম্বরে তাইল্যান্ডে মমতা
রাজ্যে বিনিয়োগ আনতে নভেম্বরে তাইল্যান্ড যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। ব্যাঙ্ককে আসিয়ান গোষ্ঠী আয়োজিত সম্মেলনে থাকবেন তাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের সরকারি কর্তারা। সেখানে আমন্ত্রিত হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই সম্মেলনে ‘ডেস্টিনেশন বাংলা’র মঞ্চে তিনি পশ্চিমবঙ্গে লগ্নির সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবেন। পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে বাণিজ্যিক লেনদেন ও যোগাযোগ বাড়াতে ‘লুক ইস্ট’ নীতিকে নরেন্দ্র মোদী নতুন নাম দিয়েছেন ‘অ্যাক্ট ইস্ট’। এই নীতির সুযোগ নিয়ে রাজ্যে ওই অঞ্চলের লগ্নি আনার সুযোগ আছে। সেটাই কাজে লাগাতে চান মুখ্যমন্ত্রী।
N3