মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল ছবি।
দীর্ঘ সাড়ে চার বছর পরে কি আবার তৃণমূলে ফিরতে চলেছে ‘পর্যবেক্ষক’ পদ? তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২৭ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মহাবৈঠকের ডাক দেওয়ার পরেই এ নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে শাসকদলের অন্দরে। আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন। সেই নির্বাচনের ‘প্রস্তুতি বৈঠক’ হিসাবেই বৃহস্পতির বৈঠককে দেখছেন তৃণমূলের সর্বস্তরের নেতারা। কারণ, বিধানসভা নির্বাচনের আগে সংগঠনের রাশ নিজের হাতে নিয়েছেন মমতা। সেই সূত্রেই তৃণমূলের ‘আদি’ নেতাদের একাংশ মনে করছেন, দলনেত্রী ফিরে যেতে পারেন তাঁর পুরনো ফর্মুলায়। যেখানে তিনি রাজ্যস্তরের নেতাদের পর্যবেক্ষক পদে নিয়োগ করে সংগঠনের ঘুঁটি সাজানো শুরু করবেন।
১৯৯৮ সালের ১ জানুয়ারি তৃণমূলের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই রাজ্যস্তরের নেতাদের জেলা সংগঠনের পর্যবেক্ষক হিসাবে নিয়োগ করতেন তৃণমূলের সর্ব্বোচ্চ নেত্রী মমতা। কিন্তু ২০২০ সালের জুলাই মাসে তিনিই সেই পর্যবেক্ষক পদ তুলে দেন। সে বছর করোনা সংক্রমণ-জনিত লকডাউনের কারণে ২১ জুলাইয়ের সমাবেশ হয়েছিল ‘ভার্চুয়াল’ মাধ্যমে। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে শহিদ দিবসের সমাবেশ থেকে ২৩ জুলাই একটি ‘ভার্চুয়াল’ বৈঠকের কথা ঘোষণা করেছিলেন মমতা। সেই বৈঠকেই পর্যবেক্ষক পদের বিলুপ্তি ঘটান তিনি। তখন ওই সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানান বিশ্লেষণ চলেছিল।
তখন একসঙ্গে সাতটি জেলার পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন তৎকালীন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। শেষ পর্যন্ত আদৌ তিনি তৃণমূলে থাকবেন কি না, সেই নিয়ে ধন্দে ছিলেন দলীয় নেতৃত্ব। শুভেন্দুর সঙ্গেও দলের দূরত্ব বাড়ছিল। তাই পর্যবেক্ষক পদ তুলে মুখ্যমন্ত্রী আসলে শুভেন্দুর ডানা ছেঁটেছিলেন বলেই মনে করা হয়েছিল। তবে দলের একটি অংশের মতে, সেই সময় তৃণমূলের ‘পরামর্শদাতা’ প্রশান্ত কিশোরের পরামর্শেই পর্যবেক্ষক পদ তুলে দিয়েছিলেন মমতা। তবে প্রশান্তের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্কের পাট চুকে গিয়েছে। তাই শুভেন্দুর অনুপস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী আবার নিজের পুরনো কৌশলেই বিধানসভা ভোট করাতে চান বলে মনে করছেন দলের প্রবীণ বিধায়কদের একাংশ।
২০২০ সালের জুলাই মাসে তৃণমূল পর্যবেক্ষক পদ তুলে দেওয়ার পর ডিসেম্বরে শুভেন্দু তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যান। তিনিই এখন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা এবং বিজেপির অন্যতম প্রধান ‘মুখ’।
এ বার ভোটের পরিস্থিতিতে বদল ঘটেছে। ২০২১ সালের জুন মাসে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দলের সর্বভারতীয় সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার পর নিজের মতো করে দল পরিচালনা করছিলেন। কিন্তু গত বছর লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে তিনি কার্যত ডায়মন্ড হারবারে নিজের কেন্দ্রেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রেখেছেন। সাংগঠনিক দায়িত্ব থেকে সরে গিয়েছেন। এই প্রেক্ষাপটে তৃণমূলের ‘আদি’ নেতাদের একাংশের যুক্তি, দলের ‘অভিজ্ঞ এবং প্রবীণ’ নেতাদের আরও সক্রিয় ভাবে সংগঠনের দায়িত্বে ফেরাতে পারেন মমতা।
২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটকে সামনে রেখে মমতা এখন থেকেই সংগঠন মজবুত করতে নামতে চাইছেন। দলের নেতাদের অনুমান, তৃণমূলের সাংগঠনিক রদবদলে ‘পুরনো এবং পরীক্ষিত’ নেতাদের গুরুত্ব বাড়াতে পারেন তিনি। রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি, মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, মন্ত্রী মলয় ঘটক, মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেবের মতো নেতাদের নতুন করে বিভিন্ন জেলার পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে বলে জল্পনা। প্রসঙ্গত, অভিষেক দীর্ঘ দিন ধরেই দলের অভ্যন্তরে সাংগঠনিক রদবদলের দাবি জানিয়ে আসছেন। পর্যবেক্ষক পদ ফেরানোর পাশাপাশি সেই সাংগঠনিক রদবদলও হতে পারে নেতাজি ইন্ডোরের বৈঠকে।